জুমবাংলা ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সোমবার (১৩ নভেম্বর) খুলনা সফরে যাচ্ছেন। দুপুরে তিনি খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে দলীয় জনসভায় ভাষণ দেবেন। এর আগে উদ্বোধন করবেন ২৪টি প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রীর খুলনা সফর কেন্দ্র করে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
২০২৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে এটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম খুলনা সফর। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে সামনে রেখে গোটা খুলনা মহানগরীতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে প্রশাসন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে সফল করতে ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় শীর্ষ নেতারা খুবই সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। সার্কিট হাউসের মাঠের সভাস্থল ইতোমধ্যে কয়েকবার পরিদর্শ করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা শেষবারের মতো সভাস্থলে নির্মিত মঞ্চসহ সার্বিক বিষয়টি পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা সাংবাদিকদের জানান, সার্কিট হাউসের জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে চান তারা। এ জন্য বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে জনসভায় ১০ লাখ মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করার টার্গেট রয়েছে তাদের।
খুলনার ৯টি উপজেলার পাশাপাশি বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জসহ বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে বাস, ট্রেন ও ট্রলারে করে দলীয় কর্মী সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও ছুবে আসবেন। ইতোমধ্যে এসব স্থানে প্রয়োজনীয় যানবাহনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দূরের কর্মী সমর্থকরা বাস থেকে শহরসংলগ্ন সুবধাজনক স্থানে নামার পর মিছিল সহকারে সভাস্থলে যোগ দেবেন। খুলনার বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী নতুন নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। মাঠের ভেতরে বাইরে সরকারের উন্নয়ন প্রচারে সরব থাকবেন মনোনয়নপ্রত্যাশী এসব নেতাদের অনুসারীরা। জনসভায় আসা মানুষের সুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে মাঠে খাবার পানি ও ভ্রাম্যমাণ টয়লেটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর খুলনা সফরকে কেন্দ্র করে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে খুলনাঞ্চলে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সমর্থকরা ব্যাপক উজ্জীবিত। সাজসাজ রব গোটা খুলনায়। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানো নেতাকর্মীদের ব্যানার, ফেস্টুনে গোটা শহরকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। মোড়ে মোড়ে নির্মিত হয়েছে গেট। কোনোটা বঙ্গবন্ধু তোরণ আবার কোনোটায় লেখা আছে শেখ হাসিনা তোরণ।
সার্কিট হাউসের সভাস্থলে নির্মাণ করা হয়েছে পদ্মার বুকে নির্মিত সেতুর আদলে চলমান নৌকার মঞ্চ। কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই এখন খুলনা অবস্থান করছেন। ব্যাপক প্রস্তুতিমূলক কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেশ আগে থেকেই সভা সমাবেশ, আনন্দ মিছিল, সরকারের উন্নয়ন প্রচার অব্যাহত রাখা হয়েছে।
এদিকে একটানা ১৫ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের সফর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কাছে রাজনৈতিক বিবেচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন বিশিষ্টজনরা। সফরকালে হাসিনা সরকারের কাছে এ অঞ্চলের মানুষের চাওয়া-পাওয়া, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির বিষয়টি একদিকে যেমন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হবে অন্যদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সরকারের সফলতা তুলে ধরে আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি জামায়াতের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী নির্বাচনে নৌকাকে বিজয়ী করার আহ্বান জানানো হবে।
শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি নির্বাচনকেন্দ্রিক নির্দেশনাও দেবেন। খুলনাবাসীর প্রত্যাশা পূরণে আসতে পারে আরও বেশ কয়েকটি নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী জনসভায় যোগদানের আগে প্রধানমন্ত্রী অন্তত ২৪টি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে। তালিকায় থাকা এসব প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম কয়েকটি স্থাপনা হচ্ছে নগরীর সাউথ সেন্টাল রোডে নির্মিত ‘১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’ ভবন, শামসুর রহমান রোডের সিভিল সার্জনের অফিস ভবন, খালিশপুরে নির্মিত বিএসটিআইয়ের ১০তলা আঞ্চলিক অফিস ভবন, নারীদের জন্য নির্মিত ১০ তলা হোস্টেল ভবন, কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ ভবন, ডুমুরিয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবন, ভদ্রা নদীর ওপর নির্মিত গার্ডার সেতুসহ অন্যান্য প্রকল্প।
প্রধানমন্ত্রীর খুলনায় আগমন উপলক্ষে এ অঞ্চলের মানুষের দাবি অনেক। বিশিষ্টজনরা বলছেন, খুলনার উন্নয়নে এখনও অনেক উন্নয়নমূলক প্রকল্প হাতে নেওয়া দরকার। এসব প্রকল্পের মধ্যে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ, উত্তর খুলনার সাথে শহরের সংযোগ স্থাপনের জন্য জেলখানা ঘাটে ভৈরব নদে ট্যানেল নির্মাণ, মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ, অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়ন, ক্যানসার হাসপাতাল স্থাপন, বন্ধ জুটমিল চালু, কন্টেইনার স্টেশন স্থাপন, পূর্ণাঙ্গ টেলিভিশন কেন্দ্র চালু, বোটানিক্যাল গার্ডেন, মেরিন একাডেমিসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক প্রকল্প দ্রুত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি কার্যকর ভূমিকা চান খুলনার মানুষ।
এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই শেখ হেলাল উদ্দিন গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী খুলনার প্রতি আন্তরিক। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন তিনি। খুলনার উন্নয়ন করার অনেক পরিকল্পনা রয়েছে তার। আপনাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই। আগামীতে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।
খুলনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম জানিয়েছেন, খুলনার জনসভা হবে স্মরণকালের। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জনসভা থেকে বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ও অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো হবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনে যথাসময়েই হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।