মাওলানা মুহাম্মদ সালমান : আজ লাইলাতুল কদর। এটি একটি সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত। লাইলাতুল কদর সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আমি কুরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে।’ ‘লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ ‘এ রাতে ফেরেশতারা ও জিবরাইল তাদের প্রভুর অনুমতিক্রমে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। শান্তিময় এ রাত ফজরের সূচনা পর্যন্ত’। (সুরা কদর)।
এ রাত কুরআন নাজিলের রাত। মহত্ত্ব ও গুরুত্বসহকারে মহান আল্লাহর ইবাদতের রাত। এ রাত হলো হাজার মাস তথা তিরাশি বছর চার মাসের চেয়ে উত্তম। ওই ব্যক্তির চেয়েও ভাগ্যবান আর কে হতে পারে, যে এ রাতে নির্ঘুম থেকে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার সুযোগ পেয়েছে। এ পবিত্র রাতে ফেরেশতারা পৃথিবীতে আসে মানবজাতির জন্য বরকত, রহমত ও কল্যাণ নিয়ে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষ্যে দেশবাসীসহ বিশ্বের সব মুসলমানকে শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন। এক বাণীতে তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা সবাই এই মহিমান্বিত রজনিতে মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে বিশেষভাবে ইবাদত ও দোয়া করি যেন আল্লাহ বাংলাদেশের জনগণসহ বিশ্ববাসীকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্তি দেন।’
সূর্যাস্তের পরপরই এ রাতে মহান আল্লাহ তার আরশ থেকে প্রথম আকাশে নেমে আসেন। মায়া আর দয়া নিয়ে, প্রেম ও ভালোবাসা দিয়ে মানবজাতিকে ডাকেন আর বলেন, ‘কে আছ পাপী! তুমি ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। কে আছ দুঃখী! আমি তোমার দুঃখ মোচন করব। কে আছ রোগী! আমি তোমাকে সুস্থ করে দেব। কে আছ দায়গ্রস্ত! আমি তোমাকে দায়মুক্ত করে দেব। তোমাদের কার রিজিকের প্রয়োজন! আমার কাছে চাও, আমি তার রিজিক বৃদ্ধি করব।’ মহান আল্লাহ এভাবে ফজর পর্যন্ত ডাকতে থাকেন। যারা তার ডাকে সাড়া দিয়ে প্রার্থনায় লিপ্ত হয়, তারা কল্যাণকামী হয়। সৌভাগ্যবান হয়।
নবিজি (সা.) একদিন সাহাবায়ে কেরামদের (রা.) সামনে বনি ইসরাইলের এক উপাসকের কথা বলছিলেন। সে ব্যক্তি এক হাজার মাস ধরে আল্লাহর ধ্যান ও সাধনায় লিপ্ত ছিল। এ কথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) আফসোস করতে লাগলেন-আর বললেন, আমরা এত বছর ইবাদত করব কীভাবে? তা ছাড়া আমাদের অনেকে তো এত বছর বেঁচেও থাকি না। ঠিক তখনই জিবরাইল (আ.) এ রাতের সুসংবাদসহ সুরা কদর নিয়ে নবিজির (সা.) কাছে হাজির হলেন এবং এ উম্মতকে শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসাবে প্রমাণ করে দিলেন। (তাফসিরে মাজহারি)।
নবিজি (সা.) বলেন, ‘তোমরা মাহে রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর তালাশ করো।’ (বুখারি)। এ রাত হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার রাত। হজরত আয়েশা (রা.) একবার রাসুল (সা.)কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে আমি ওই রাতে কী দোয়া করব? তখন নবিজি (সা.) বললেন, তুমি এ দোয়াটি করবে-‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফউন; তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি তো ক্ষমাশীল! ক্ষমাকে তুমি ভালোবাসো। অতএব, আমাকে তুমি ক্ষমা করো।
নবিজির (সা.) সময় অনেক সাহাবি (রা.) রমজানের ২৭ তারিখকে লাইলাতুল কদর হিসাবে স্বপ্ন দেখেছেন। সাহাবিরা (রা.) নবিজিকে (সা.) স্বপ্নের কথা জানালে নবিজি (সা.) বলেন, আমিও এমনটা স্বপ্নে দেখেছি। হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহর শপথ করে বলছি-নবিজি (সা.) ২৭ রমজানের রাতকে লাইলাতুল কদরের রাত বলেছেন।’ অন্য হাদিসে রয়েছে, নবিজি (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যদি দুর্বল অথবা কোনো কারণে অক্ষম হয়ে থাকে, সে যেন রমজানের ২৭ তারিখ রাতে ইবাদত করে।’ (মুসলিম)। আরেক হাদিসে এসেছে-নবিজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর পেতে চায়, সে যেন তা রমজানের সাতাশতম রাতে অনুসন্ধান করে। (মুসনাদে আহমদ)।
এ রাতে আমরা নফল ইবাদত করব। ধীরগতিতে নফল নামাজ পড়ব। স্থিরতার সঙ্গে রুকু-সিজদা করব। বারবার মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইব। এ রাতে যে ক্ষমা পেল না, তার চাওয়া-পাওয়া সবই ব্যর্থ। তার জীবন পুরোটাই অনর্থ। এ রাতে একনিষ্ঠ চিত্তে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করব। আল্লাহর কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হব, জীবনে সব পাপ ছেড়ে দেওয়ার। অন্যায়ের জন্য মহান আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হব। কোনো বান্দার অধিকার নষ্ট করলে, তার অধিকার আদায়ের প্রতিশ্রুতি দেব। মহান আল্লাহর কাছে নিজের দুঃখ-কষ্টগুলো তুলে ধরব। নিজের ভুলগুলো স্বীকার করে তার কাছে ক্ষমা চাইব।
হে আল্লাহ! আমরা গুনাহগার, আপনি পরওয়ারদেগার! আপনি আপনার বান্দাদের ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, অতএব আমাদের ক্ষমা করেন। আমিন।
লেখক : ইমাম, আমির উদ্দিন দারোগা ঘাট মসজিদ, বাবুবাজার, ঢাকা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।