ম্যানহাটন প্রকল্পের নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই। যাঁরা আগে শোনেননি, ক্রিস্টোফার নোলানের সাম্প্রতিক মুভি ওপেনহাইমার-এর কল্যাণে নামটা তাঁদেরও পরিচিত হয়ে গেছে। বাস্তবে এই প্রকল্পের অধীনেই প্রথম পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। অবশ্যই, পরীক্ষার জন্য। সেটা ১৯৪৫ সালের কথা। সে বছরের ১৬ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর ইয়োর্নাদা দেল মুয়ের্তো মরুভূমিতে ঘটানো হয় প্রথম পরমাণু বোমা বিস্ফোরণ—ট্রিনিটি টেস্ট।
এর কিছুদিন পর, একই বছরের ৬ ও ৯ আগস্ট মানব ইতিহাসের ভয়ংকরতম কাজগুলোর একটি ঘটে। জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে লিটল বয় ও ফ্যাটম্যান নামে দুটি পরমাণু বোমা ফেলে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর থেকে অন্তত ৭টি দেশ নিজেদের পারমাণবিক শক্তির পরীক্ষা চালিয়েছে, পারমাণবিক বিকিরণের ভয়াল শক্তি উন্মুক্ত করেছে পৃথিবীতে। এই ঘটনা পরিক্রমায় ঠিক কয়টি পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে এখন পর্যন্ত?
একদম সঠিক সংখ্যাটি হলফ করে বলার উপায় নেই। তবে বিজ্ঞানীদের হিসাবে ২ হাজার ৫৬টি পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করা হয়েছে এখন পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্রের আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুসারে, শুধু যুক্তরাষ্ট্রই এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩০টি পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা করে দেখেছে, যার মধ্যে দুটি ব্যবহৃত হয়েছে যুদ্ধে—যে দুটির কথা বলেছি আগেই। সে কালের সোভিয়েত ইউনিয়ন বা আজকের রাশিয়া এখন পর্যন্ত পরীক্ষা করেছে ৭১৫টি পারমাণবিক বোমা। ফ্রান্স পরীক্ষা চালিয়েছে ২১০টি, যুক্তরাজ্য ও চীন পরীক্ষা করেছে ৪৫ বার, এদিকে উত্তর কোরিয়া ৬টি পরীক্ষা চালিয়েছে, ভারত পরীক্ষা করেছে তিনবার এবং পাকিস্তান দুবার।
সন্দেহ করা হয় আরও একটি পরীক্ষা চালানো হয়েছে। ‘ভেলা ইনসিডেন্ট’ নামের সেই পরীক্ষার দিনক্ষণ ধরা হয় ১৯৭৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। সেদিন আফ্রিকা ও অ্যান্টার্কটিকার মাঝামাঝি, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিন্স এডওয়ার্ড দ্বীপে দুটো আলোর ঝলক ও বিকিরণ শনাক্ত করে মার্কিন ভেলা হোটেল স্যাটেলাইট। তবে সেটা আসলেই পরমাণু বোমার বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট কি না, এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এটিসহ হিসাব করলে সংখ্যাটা হবে ২ হাজার ৫৭।
১৯৯০ দশকের পর থেকে পরমাণু বোমা পরীক্ষার কথা সচরাচর জানা যায় না। এর রাজনৈতিক, পরিবেশগত ও জনস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব আজও মানুষকে আতঙ্কিত করে, চিন্তিত করে। স্বাভাবিকভাবেই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো পরমাণু বোমা পরীক্ষার বিপক্ষে। তবে ১৯৪৫ থেকে ১৯৬৩ পর্যন্ত সময়টা কিন্তু এমন ছিল না। সে সময় পরমাণু বোমার পরীক্ষা ছিল সাধারণ ঘটনা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি তো টেনে দিল দুটি পরমাণু বোমা বিস্ফোরণ, কিন্তু শুরু হয়ে গেল স্নায়ুযুদ্ধ বা কোল্ড ওয়ার। যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যকার টানাপোড়েনে এক ১৯৬২ সালেই পরমাণু বোমার পরীক্ষা চালানো হয়েছে ১৭৮ বার! সে বছর ‘কিউবান মিসাইল ক্রাইসিস’ নামের এক ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে পারমাণবিক সংঘাত লেগে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।