জুমবাংলা ডেস্ক: ছাতা মাথায় বিদ্যালয়ের ইউনিফর্মে দল বেঁধে যাচ্ছে বেশ কয়েকজন স্কুলছাত্রী। তাদের একজন সোনিয়া। সে জয়নাতলী গ্রামের মেয়ে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে ভর্তি হয়েছে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার রামচন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে।
সোনিয়া জানায়, প্রতিদিন তাকে চার কিলোমিটার পথ পেরিয়ে যেতে হয় বিদ্যালয়ে। বর্ষাকালে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো পার হতে হয় তাকে। শুধু সোনিয়া নয়, এমন শত শত শিক্ষার্থীকে মাধ্যমিক শিক্ষা অর্জনের জন্য সাত-আট কিলোমিটার দূরে যেতে হচ্ছে। এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয় জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের শিক্ষার্থীদের।
শিল্পাঞ্চল অধ্যুষিত গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের জয়নাতলী, বেলতৈল, বড়বাইদ, বেড়ামতলী, হাসিখালী, বেতঝুড়ি, শিরিশগুঁড়ি ও শিমলাপাড়া গ্রামগুলো পাশাপাশি। এই আটটি গ্রামের আশপাশে নেই কোনো উচ্চবিদ্যালয় কিংবা দাখিল মাদ্রাসা। ফলে অন্যান্য গ্রামের তুলনায় এসব গ্রামের শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয় বেশি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, মাওনা ইউনিয়নে মোট ২১টি গ্রাম। প্রায় ২ হাজার ৭০০ শিক্ষার্থীর জন্য আছে মাত্র দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষে এসব গ্রামের শিক্ষার্থীদের পাশের উপজেলায় সাত-আট কিলোমিটার দূরে চরম ভোগান্তি নিয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য যেতে হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, এই আট গ্রামের দক্ষিণ ও পশ্চিম অংশের শিক্ষার্থীদের পাশের কালিয়াকৈর উপজেলা, পূর্বের বারতোপা উচ্চ বিদ্যালয় এবং উত্তরে সিংগারদিঘি উচ্চ বিদ্যালয়ে এসে পড়াশোনা করতে হয়। মাওনা ইউনিয়নে দুটি উচ্চ বিদ্যালয় ও দুটি দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে।
জয়নাতলী গ্রামের মনির হোসেনের ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র আদর্শ বলে, আমি সকাল ৭ টায় স্কুলের যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হই। কারণ আমাকে বহুদূর যেতে হয় পায়ে হেঁটে। পাশের কালিয়াকৈর উপজেলার রামচন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে যেতে হয় অনেক কষ্ট করে। আমার সঙ্গে আমার গ্রামের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী স্কুলে যায়। আমাদের অনেক কষ্ট হয়। তবে বেশি কষ্ট হয় বর্ষাকালে।
বড়বাইদ গ্রামের স্কুলপড়ুয়া নবম শ্রেণির ছাত্রী রুমা আক্তার বলে, আমাকে চার কিলোমিটার দূরের স্কুলে পড়াশোনার জন্য যেতে হয়। আমাদের আশপাশের কোনো গ্রামে উচ্চ বিদ্যালয় বা মাদ্রাসা নেই।
বেড়ামতলী গ্রামের স্কুলপড়ুয়া তনয় জানায়, আমরা মাসে বেশির ভাগ দিন স্কুলে সঠিক সময় পৌঁছাতে পারি না। কারণ বহু দূরের রাস্তা। পথে ঝড়-বৃষ্টি হলে কোনো বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়। এমন সময় বৃষ্টি শুরু হয়, ফাঁকা মাঠ, বাড়িঘর থাকে না, তখন শরীরের জামা-কাপড় ও বইখাতা ভিজে যায়। তখন আর স্কুলে যাওয়া হয় না। এতে আমাদের পড়াশোনায় সমস্যা হচ্ছে।
জয়নাতলী গ্রামের বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, আমাদের গ্রামের শিক্ষার্থীদের যে কত কষ্ট করে পড়াশোনা করতে হয়, তা বলে শেষ করা যাবে না। সারা বছর কষ্ট। রাস্তাঘাট না থাকায় দূরের রাস্তা পায়ে হেঁটে যেতে হয়। বর্ষাকালে তো ভোগান্তির সীমা থাকে না।
মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য আনিসুর রহমান দুলাল বলেন, আমাদের কয়েকটি গ্রামের মধ্যে বিদ্যালয় না থাকায় আমাদের সন্তানদের পড়াশোনায় খুব সমস্যা হচ্ছে। দূরে স্কুল থাকায় নিজের সন্তানের প্রতি সব সময় খেয়াল রাখতে পারছেন না অভিভাবকগণ। আমাদের গ্রামের মানুষের প্রাণের দাবি, আটটি গ্রামে যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এর জন্য অনেক মানুষ জমি দিতেও প্রস্তুত রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম খোকন বলেন, আমার ইউনিয়নে দুটি উচ্চ বিদ্যালয় ও দুটি দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে। যার কারণে শিক্ষার্থীদের দূর-দূরান্তে গিয়ে পড়াশোনা করতে হচ্ছে। তাতে চরম ভোগান্তি হচ্ছে। আমি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
শ্রীপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নূরুল আমিন বলেন, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার কষ্ট লাঘবে স্থানীয়ভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। একটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক বিষয় থাকে, এখানে জমি মূল বিষয়। যথাযথভাবে স্থানীয়রা উদ্যোগ নিলে এই সমস্যা সমাধান হওয়া সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।