ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম: অস্থির মসলার বাজারে এখনও স্থিরতা আসেনি। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের অন্যতম প্রধান পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গরম মসলার দাম কোনোটির কমেছে আবার কোনোটির বেড়েছেও।
ডলার সংকট, বিশ্ববাজারে বুকিং রেট বৃদ্ধি, ভারত থেকে আমদানির ক্ষেত্রে নানা মাত্রিক সংকট এবং সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে মসলার দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তার বিপরীতে ভোক্তা বা ক্রেতা সাধারণের অভিযোগÑ আমদানি, সরবরাহ সবই ঠিক থাকার পরও অসাধু সিন্ডিকেটের কারসাজিতে মসলার বাজারে এই অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি মসলার বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোজার ঈদে জিরা বিক্রি হয়েছিল প্রতিকেজি ৬৫০ টাকায়। গত সপ্তাহের সোমাবারে দাম ছিল ৭৩০ আর আজ (মঙ্গলবার) বিক্রি করা হচ্ছে ৭৮০ টাকায়। এতে কেজি প্রতি আরো ৫০ টাকা দাম বেড়ে গেছে।
শুকনো মরিচের দামও আরো কিছিুটা বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে প্রতিকেজি শুকনো মরিচ বিক্রি হয়েছে ৩৩০ থেকে ৩৬০ টাকায়। এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। আদার দাম ছিল কেজি ১৮০ টাকা করে, কিন্তু সপ্তাহের ব্যবধানে আদার দাম কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা করে।
রসুনের দাম অপবির্তিত ১৫০ টাকা, ধনিয়া অপরিবর্তিত ২০০ টাকা, হলুদ ১৩০ থেকে ১৪০ টাকাতেই রয়েছে, তাছাড়া দামের পরিবর্তন হয়নি সরিষা (কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০), মেথি (১২০ থেকে ১৬০), আলু বোখারা (৪৮০ থেকে ৫০০), কিশমিশ (৪৪০ থেকে ৪৬০), কাঠবাদাম (৭৪০ থেকে ৭৬০), কাজু বাদাম (৮২০ থেকে ৯৫০), পোস্তা (২ হাজার ৬৬০ থেকে ২ হাজার ৭৫০) এবং পাঁচফোড়ন (১৫০ থেকে ২০০ টাকা।
এদিকে পাইকারি বাজারে বেশ কিছু মসলা পণ্যের দাম কমেছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দামের এই পরিবর্তনের কারণে জনমনে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি বজারে গোল মরিচের দাম এক হাজার থেকে কমে এখন ৬৬০ টাকায় নেমে এসেছে। একইভাবে দারুচিনি ৫৭০ টাকা থেকে কমে ৩৩৫ টাকায়, মসলাজাতীয় পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছিল লবঙ্গ ও এলাচের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি লবঙ্গে ৩৪০ কমে ১ হাজার ৮০০ টাকার স্থলে এখন ১৪৬০ টাকায় নেমে এসেছে। এলাচের দামাও ১ হাজার ৬০০ টাকার স্থলে কেজিতে ১৫০ টাকা কমে গিয়ে ১৪৫০ বিক্রি করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম অনেকটুকু কমে গেছে। আমদানি বন্ধ থাকায় গত সপ্তাহে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা দামে। এথন ভাল মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকায়, আর নিম্ন মানেরটা বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। পেঁয়াজের দাম আরও কমতে পারে বলে জানালেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
এদিকে মসলার আমদানি ও সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে জানিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আসন্ন কোরবানির ঈদে যে পরিমাণ মসলার চাহিদা রয়েছে, সে পরিমাণ বা তার চেয়ে আরও বেশি মসলার আমদানি হয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্য মতে মে মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত জিরা আমদানি হয়েছে ৪১৪.৩৭ টন, দারুচিনি আমদানি হয়েছে ৫৪৩৮ টন, লবঙ্গ ৪২৩ টন, এলাচ আমদানি হয়েছে ৮৫৮ টন, জয়ত্রী ১০৬ টন, গোল মরিচ ৪৯৩ টন।
ব্যবসায়ীরা জানান, হলুদ, মরিচ, মেথি, কালিজিরা, তেজপাতা, আদা, রসুন, সরিষা, পেঁয়াজ এবং ধনিয়াসহ অধিকাংশ মসলার বাজার আমদানিনির্ভর। এসব মসলার কিছু অংশ দেশে উৎপাদিত হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত। তাই দেশের মসলা বাজার ৮০ ভাগই বিশ্ববাজারের ওপর নির্ভরশীল।
খাতুনগঞ্জে ভারত, চীন, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, সিরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান, কলম্বিয়া, গুয়েতেমালা, মাদাগাস্কার এবং আরব আমিরাতসহ বেশকিছু দেশ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মসলাপণ্য আমদানি করা হয়।
এর মধ্যে ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া থেকে এলাচ এবং মিসর, পাকিস্তান ও কম্বোডিয়া থেকে জিরা আমদানি হয়। চীন ও ভিয়েতনাম থেকে দারুচিনি এবং শ্রীলঙ্কা, কমোরোজ দ্বীপ, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে লবঙ্গ আমদানি হয়। অন্যদিকে ভারত, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া থেকে রসুন এবং মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং মাদাগাস্কার থেকে আদা আমদানি হয়। তাছাড়া ইন্দোনেশিয়া এবং থাইল্যান্ড থেকে গোলমরিচ আমদানি হয়।
এদিকে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবসায়ীদের মর্জির ওপর নির্ভরশীল। অনেক দিন ধরে গরম মসলার বাজার ঠান্ডা ছিল। কিন্তু কোরবানির ঈদ কাছে আসায় দাম কেবল বেড়েই যাচ্ছিল। এখন আবার কিছুটা কমতে শুরু করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।