বাঙালির আদি খাদ্যতালিকায় আলুর যে কোনো স্থান ছিল না, তা একরকম নিশ্চিত ইতিহাসবিদরা। মাত্র কয়েকশ বছর, মানে ১৭ শতকের শুরুর দিকে পর্তুগিজ নাবিকদের মাধ্যমে ভারত অঞ্চলে আসে দক্ষিণ আমেরিকার পেরুসংলগ্ন আন্দিজ পর্বতমালা এলাকার কন্দজাতীয় এই সবজি। অথচ কালের বিবর্তনে আজ বাঙালির প্রতিদিনের খাদ্য রসনায় আলুবিহীন তরকারি চিন্তা করা কঠিন। শুধু বাঙালি কেন; আলু আজ এমন এক সবজি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা গড়ে দিয়েছে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের খাদ্যভিত্তি।
পৃথিবীতে আলুর উৎপত্তি ও বিকাশ কীভাবে, তা নিয়ে প্রচুর গবেষণা হলেও মূল সূত্রটি ছিল অজানা। তবে নতুন এক গবেষণা বলছে, আলু মোটেও মৌলিক কোনো সবজি নয়; বরং অন্তত ৯০ লাখ বছর আগে বুনো টমেটো গাছের সঙ্গে আলুজাতীয় এক ধরনের গাছের ‘দুর্ঘটনাজনিত প্রেম’ থেকেই উৎপত্তি হয়েছে আজকের আলুর। গত বৃহস্পতিবার সেল সাময়িকীতে এ-সংক্রান্ত এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে বলে জানিয়েছে সিএনএন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আজ থেকে অন্তত ১০ হাজার বছর আগে লাতিন আমেরিকার মানুষ প্রথম আলুর চাষ করতে শুরু করেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে উদ্ভিদ সাধারণত জীবাশ্ম হিসেবে ভালোভাবে সংরক্ষিত না হওয়ায় এতদিন এই ফসলটির সঠিক আদি উৎস রহস্যই থেকে গিয়েছিল। সম্প্রতি একদল বিবর্তনবিদ ও জিনবিজ্ঞানী দাবি করেছেন, আধুনিক আলুর উৎপত্তি হয়েছিল অন্তত ৯০ লাখ বছর আগে বুনো টমেটোজাতীয় গাছের সঙ্গে একটি আলুর মতো উদ্ভিদের আকস্মিক মিলনের ফলে।
গবেষক দলটি মানুষের চাষ করা ও বুনো আলু প্রজাতির ৪৫০টি জিন বিশ্লেষণ করে দেখতে পান, প্রায় ৯০ লাখ বছর আগে বুনো টমেটো ও ‘ইতুবেরোসাম’ নামক আলুসদৃশ এক ধরনের উদ্ভিদ পাশাপাশিই জন্মাত। পরবর্তী সময়ে প্রাকৃতিকভাবে আন্তঃপ্রজননের মাধ্যমে দুই উদ্ভিদের মধ্যে মিলন হয়। এই সংকরায়নের ফলে যে নতুন গাছটি তৈরি হয়, সেটিই প্রথমবারের মতো টিউবার বা কন্দ উৎপন্ন করে। টমেটো বা ‘ইতুবেরোসাম’ আলাদা করে কন্দ তৈরি করতে পারত না। কিন্তু তাদের সংমিশ্রণে যে হাইব্রিড গাছ জন্ম নেয়, সেটির মধ্য দিয়েই আলুর মতো কন্দের বিকাশ ঘটে। এই কন্দ মূলত মাটির নিচে পুষ্টি সঞ্চয়ের জন্য গাছের অভিযোজন প্রক্রিয়ার এক অংশ।
পৃথিবীজুড়ে শতাধিক বুনো আলু প্রজাতি পাওয়া যায়, যেগুলোর অনেকটিই কন্দ তৈরি করে। যদিও সব কন্দ খাওয়ার উপযোগী নয়। কারণ, এগুলোর কিছুতে বিষাক্ত যৌগ থাকে। গবেষণার প্রতিবেদনটির সহলেখক এবং চীনের কৃষি জিনোমিকস ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সানওয়েন হুয়াং বলেন, কন্দের বিবর্তন আলুকে কঠিন পরিবেশে টিকে থাকার মতো বিরাট সুবিধা দিয়েছিল। ফলে ক্রমে এর নতুন নতুন প্রজাতির বিকাশ ঘটে। বিশ্বজুড়ে যে বৈচিত্র্যপূর্ণ আলু আমরা আজ দেখি ও খাই, তা আদি বুনো টমেটো ও ইতুবেরোসাম জাতীয় উদ্ভিদের দুর্ঘটনাজনিত প্রেমেরই ফসল।
গবেষকরা জানিয়েছেন, বুনো টমেটো ও ইতুবেরোসামের আন্তঃপ্রজননে কন্দ তৈরিতে কোন গাছটি কোন জিন সরবরাহ করেছিল, তাও তারা শনাক্ত করেছেন। এই তথ্য ভবিষ্যতে এমন আলুর নতুন জাত তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে, যেগুলো রোগপ্রতিরোধী ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূলতা সহনীয় হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।