বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দ্রুত উন্নত হচ্ছে প্রযুক্তি। খুলছে নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার। একসময় যেসব বিষয় মানুষের কাছে ছিল কেবল কল্পনা, এখন তা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। একসময় মানুষের কাছে যা মনে হতো নিছক
রূপকথা, এখন তার অনেকগুলোই মানুষের কাছে স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
এভাবে মহান আল্লাহ যুগে যুগে তাঁর বান্দাদের বিভিন্ন নিদর্শনের সাক্ষী করে তাঁর বড়ত্বের জানান দেন, যা থেকে কেবল জ্ঞানীরাই শিক্ষা গ্রহণ করে।
কোরআন-হাদিসে বর্ণিত আল্লাহর সাহায্যে সংঘটিত হওয়া নবী-রাসুলদের মুজিজাগুলোও ঠিক এ রকম। মহান আল্লাহ বিভিন্ন সময় তাঁর মনোনীত বান্দাদের সাহায্য করতে বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত করেছেন, যা সে যুগের মানুষের কাছে অকল্পনীয় ছিল। যারা ঈমানদার ছিল, এসব ঘটনা তাদের ঈমান আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল, আর যারা ছিল বেঈমান, তারা মহান আল্লাহর এসব কুদরতের নিদর্শনকে জাদুটোনা কিংবা অন্য কোনো তকমা দিয়ে হেয় করার চেষ্টা করেছিল।
আর যেসব তথাকথিত জ্ঞানী পরবর্তী সময়ে এসেছে, তারা তো এসব ঘটনাকে নিছক রূপকথা বৈ কিছুই মনে করত না। অথচ মহান আল্লাহ পৃথিবীব্যাপী প্রযুক্তিগত উত্কর্ষ দান করে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন যে এখন একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায় যে মহান আল্লাহর বাণীগুলো কতটা নিখুঁত ছিল! কোরআন কত সত্য কিতাব, যা দেড় হাজার বছর আগে পৃথিবীর শুরু থেকে ঘটে যাওয়া আল্লাহর কুদরতের নিদর্শনগুলো সম্পর্কে আমাদের জানিয়ে গেছেন। অথচ আমরা জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে কোরআনের সেই বাণীগুলোর মর্মই বুঝতে পারিনি। তারই একটি ক্ষুদ্র উদাহরণ বর্তমান রোবটিক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং ও সুপারসনিক ফ্লাইট প্রযুক্তি।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর সুলাইমানের জন্য আমি বাতাসকে অনুগত করে দিয়েছিলাম, যা সকালে এক মাসের পথ এবং সন্ধ্যায় এক মাসের পথ অতিক্রম করত। আর আমি তার জন্য গলিত তামার প্রস্রবণ প্রবাহিত করিয়েছিলাম। আর কতিপয় জিন তার রবের অনুমতিক্রমে তার সামনে কাজ করত। তাদের মধ্যে যে আমার নির্দেশ থেকে বিচ্যুত হয়, তাকে আমি জ্বলন্ত আগুনের আজাব আস্বাদন করাব। তারা তৈরি করত সুলাইমানের ইচ্ছানুযায়ী তার জন্য প্রাসাদ, ভাস্কর্য, সুবিশাল হাউসের মতো বড় পাত্র ও স্থির হাঁড়ি।
হে দাউদ পরিবার, তোমরা কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আমল করে যাও এবং আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই কৃতজ্ঞ।’
(সুরা : সাবা, আয়াত : ১২-১৩)
পবিত্র কোরআনের এই আয়াতে মহান আল্লাহ সুলাইমান (আ.)-কে দেওয়া কয়েকটি মুজিজার কথা উল্লেখ করেছেন। যার প্রতিটিই একসময়ের মানুষের কাছে
রূপকথার মতো মনে হলেও বর্তমান প্রযুক্তির যুগে মহান আল্লাহ এটা মানুষের জন্য সম্ভব করে দিয়েছেন। যা কোনো ধরনের দৃশ্যমান মেশিন বা প্রযুক্তি ছাড়া তাঁর নবীর জন্য আরো বহুগুণ উন্নত পদ্ধতিতে সম্ভব করেছিলেন। উল্লিখিত এই আয়াতে বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত কয়েকটি উন্নত প্রযুক্তির ধারণা পাওয়া যায়। নিম্নে সেগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো—
সুপারসনিক ফ্লাইট
এই আয়াতের প্রথমাংশে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আর সুলাইমানের জন্য আমি বাতাসকে অনুগত করে দিয়েছিলাম, যা সকালে এক মাসের পথ এবং সন্ধ্যায় এক মাসের পথ অতিক্রম করত।’ অর্থাৎ সুলাইমান (আ.) খুব দ্রুতগতিতে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সফর করতে পারতেন। বিমান আবিষ্কারের মাধ্যমে সুলাইমান (আ.)-এর এই মুজিজার মাহাত্ম্য মানুষের অনেক আগেই বুঝে এলেও তার নতুন প্রযুক্তি সুপারসনিক ফ্লাইট এখন তা আরো সহজে বুঝতে সাহায্য করছে।
গণমাধ্যমের তথ্যমতে, মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বিশ্বের দ্রুততম বিমান তৈরি করেছে। সুপারসনিক বিমানের নাম এক্স-৫৯। এ বিমানে আট ঘণ্টার যাত্রায় সময় লাগবে মাত্র দেড় ঘণ্টা। খুব তাড়াতাড়িই নতুন প্রজন্মের এই বিমান বাজারে আসছে বলেই জানিয়েছে নাসা। সাধারণ বিমান বা ফাইটার জেটের গতি তো দূর, সুপারফাস্ট সুপারসনিক বিমান কনকর্ড টারবোজেটের গতিকেও হার মানাবে এটি। এ বিমানে করে নিউইয়র্ক থেকে লন্ডনে যাওয়া যাবে নিমেষেই। এই তথ্য আমাদের কিছুটা হলেও অনুমান করতে সাহায্য করে যে সুলাইমান (আ.) কিভাবে সকালে এক মাসের পথ আর সন্ধ্যায় এক মাসের পথ পাড়ি দিতেন।
লিকুইড থ্রিডি মেটাল প্রিন্টিং
আয়াতে উল্লেখ আছে যে মহান আল্লাহ সুলাইমান (আ.)-এর জন্য গলিত তামার ঝরনা প্রবাহিত করেছিলেন, যা দিয়ে তিনি বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ জিনিস তৈরি করতেন। বর্তমান যুগেও তামার ব্যবহার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, বৈদ্যুতিক তার থেকে শুরু করে প্রযুক্তির বহু খাতে ব্যাপকভাবে রয়েছে। তবে বর্তমান যুগে এতে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি যোগ করে একে আরো গতিশীল করার চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে এমআইটির গবেষকরা একটি নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, যেখানে গলিত অ্যালুমিনিয়ামকে সূক্ষ্ম কাচের গুঁড়ার মধ্যে প্রবাহিত করে দ্রুত কঠিন বস্তু তৈরি করা যাচ্ছে। এই পদ্ধতিতে বড় আকারের বস্তু, যেমন—টেবিলের পা বা চেয়ারের ফ্রেম, মাত্র কয়েক মিনিটে তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। ভবিষ্যতে এর মাধ্যমে বড় আকারের ধাতব বস্তু দ্রুত তৈরি করে শিল্প খাতে নতুন বিপ্লব ঘটাবে এই প্রযুক্তি।
(সূত্র : https://shorturl.at/DdD7k)
এআই রোবট
আয়াতে উল্লেখ আছে যে ‘আর কতিপয় জিন তার রবের অনুমতিক্রমে তার সামনে কাজ করত।’ বর্তমান যুগেও মহান আল্লাহ মানুষের মাথায় এমন বুদ্ধি দিয়েছেন যে মানুষ তাদের অনেক কঠিন কাজ এআই রোবটের মাধ্যমে খুব দ্রুত ও সহজে করিয়ে নিচ্ছে। এআইয়ের কাজকর্ম দেখলে মনে হয় যে তাকে হুকুম করলে সে অনেকটা জিনের মতোই কাজ করছে। গত বছর সিএনএনে ইলন মাস্কের একটি ভবিষ্যদ্বাণী প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তিনি বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থান চাকরিগুলোকে ‘ঐচ্ছিক’ করে তুলবে, কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা রোবটগুলো বেশির ভাগ পরিষেবা প্রদান করবে।
(সূত্র : https://shorturl.at/XLn9Q)
অ্যাডভান্স থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি
আয়াতে উল্লেখ আছে যে ‘তারা তৈরি করত সুলাইমানের ইচ্ছানুযায়ী তার জন্য প্রাসাদ, ভাস্কর্য, সুবিশাল হাউসের মতো বড় পাত্র ও স্থির হাঁড়ি।’
বর্তমানে এআই, মেশিন লার্নিং ও অ্যাডভান্স থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির সাহায্যে এ রকম কাজগুলো খুব দ্রুত ও সহজে করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বিশ্বের কয়েকটি দেশে থ্রিডি প্রিন্টেড মসজিদ ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মিত হয়েছে, যা কয়েক হাজার বছর আগে সুলাইমান (আ.)-এর জিনদের দ্বারা তৈরি স্থাপনার কথা মনে করিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, কারখানাগুলোতে অটোমেটিক মেশিনে এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় বহু পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। একসঙ্গে অনেক মানুষের রান্না করার জন্য এখন বড় বড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল কুকার আবিষ্কৃত হয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে একসঙ্গে বহু মানুষের জন্য রান্না করা যায়।
বর্তমান যুগের এই প্রযুক্তিগুলোকে কোরআনের আয়নায় দেখলে মহান আল্লাহর সেই বাণীটি হৃদয়ে উঁকি দেয়, ‘অতএব, তোমরা তোমাদের রবের কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?’ (সুরা : আর রহমান, আয়াত : ১৩)
Vivo V40e 5G : 50MP Selfie ক্যামেরা সহ স্মার্টফোন, জেনে নিন ডিটেইলস
উল্লেখ্য, কোরআনের কোনো তথ্য বিজ্ঞানের আলোকে না বোঝা গেলে বুঝতে হবে, বিজ্ঞান এখনো সে বিষয়ে সঠিক জায়গা পর্যন্ত আসতে পারেনি, তবে কোরআন চির উন্নত ও চির আধুনিক। মুমিন তাঁর রবের সব বাণী কোনো যুক্তি ছাড়াই মেনে নেবে।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর পবিত্র কোরআন বোঝা ও আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সূত্র : কালের কণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।