জানেন হয়তো, আগে মোবাইল ফোন বা সেলফোনের ওপরের দিকে ছোট্ট একটা অ্যানটেনা থাকত। বলা বাহুল্য, মোবাইল ফোনের সিগন্যাল বা যোগাযোগের তরঙ্গ ধরার জন্যই থাকত অ্যানটেনাটা। বর্তমানে মোবাইলের নানাবিধ ব্যবহার বেড়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহারেও দরকার স্মার্টফোন। সে জন্য প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন ডাটা আদান-প্রদান বা সিগন্যাল আদান-প্রদান। এসব সিগন্যাল আদান প্রদানের জন্য বর্তমানে আর অ্যানটেনা দেখা যায় না মোবাইলে। প্রশ্ন হলো, কেন?
ফোনের অ্যানটেনার আকার নির্ভর করে ক্যারিয়ার ফ্রিকোয়েন্সি বা সিগন্যাল তরঙ্গের কম্পাঙ্কের ওপর। রেডিও, মোবাইল ফোন বা যেকোনো তারহীন ডিভাইসের জন্য অনন্য তরঙ্গদৈর্ঘ্য এনকোড করা হয়। একে ক্যারিয়ার ফ্রিকোয়েন্সি বলে। একটি বিদ্যুৎক্ষেত্র ও চৌম্বকক্ষেত্রের পর্যায়ক্রমিক নড়াচড়ার মাধ্যমে এই তরঙ্গ তৈরি করা হয়। ক্ষেত্রগুলোর অ্যামপ্লিচ্যুড বা বিস্তার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তৈরি হয় অনন্য সংকেত বা তরঙ্গ। এ তরঙ্গ তারহীন ডিভাইসের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য বহন করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসেচুসেটস ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট বা এমআইটির ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যপক লিজং ঝেং। ক্যারিয়ার ফ্রিকোয়েন্সি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘অ্যানটেনার মধ্যে থাকা ধাতব তার একধরনের বয়া হিসেবে কাজ করে। এতে থাকা চার্জিত ইলেকট্রনগুলো আপেক্ষিক ত্বরণের সাহায্যে ক্যারিয়ার তরঙ্গের প্রবাহ এবং অনুপস্থিতি শনাক্ত করতে পারে। অ্যান্টেনাগুলোর আকার এমন হয় যেন এটা তরঙ্গের কিছু অংশ ধরতে পারে। এ সংকেতের মাধ্যমে পরিমাপযোগ্য বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করা হয়।’
১৯৯৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন তারহীন বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বর্ধিত সীমার নতুন ক্যারিয়ার ফ্রিকোয়েন্সি বা টেলিযোগাযোগ তরঙ্গ নিলামে তোলে। সেখানে প্রথমটির তরঙ্গ ছিল ৯০০ মেগাহার্জের আশপাশে। শুরুর দিকের কর্ডলেস ফোনগুলোর জন্য এটা ব্যবহার করা যেত। তবে ৯০ দশকের শেষ দিকে মোবাইল সেবাদানকারী বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ২ গিগাহার্জের বেশি কম্পাঙ্কের অনেকগুলো ক্যারিয়ার ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ে আসে বাজারে।
প্রথমদিকে মোবাইলগুলোর ক্যারিয়ার তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার। একে তো কম শক্তির তরঙ্গ, তার ওপর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি; ফলে তরঙ্গ ধরার জন্য ওসব মোবাইল ফোনে আলাদা লম্বা অ্যানটেনা থাকত। যাঁরা পুরোনো দিনের রেডিও বা টেলিভিশন দেখেছেন, তাঁরা জানেন, সেগুলোতেও সংকেত ধরার জন্য অ্যানটেনা থাকত।
যা-ই হোক, প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ কম্পাংকের নতুন ক্যারিয়ার তরঙ্গের উপকার পেতে শুরু করে মানুষ। এ তরঙ্গে আগের চেয়ে অনেক দ্রুত এবং বেশি পরিমাণ ডেটা পাঠানো যায়। ২ গিগাহার্জের কম্পাঙ্কের তরঙ্গ ৯০০ মেগা হার্জ তরঙ্গের চেয়ে ভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। এদের ভেদনক্ষমতা, মানে কোনো কিছু ভেদ করে যাওয়ার শক্তিও বেশি। এরা ছড়িয়ে পড়ে বেশি জায়গাজুড়ে।
পুরাতন ৯০০ মেগাহার্জ তরঙ্গের চেয়ে বর্তমানে ব্যবহৃত ক্যারিয়ার তরঙ্গ ৩-৪ গুণ দ্রুতগামী। তরঙ্গদৈর্ঘ্যও প্রায় অর্ধেক। পাশাপাশি উচ্চ ভেদনক্ষমতা সম্পন্ন। তাই আগের মতো মোবাইল ফোনের মাথায় আলাদা কোনো অ্যানটেনার প্রয়োজন হয় না। তরঙ্গ ধরার জন্য ভেতরে মোবাইলের গায়ে বা খোলসের ভেতরে বসানো হয় চিকন ধাতব তার। এতেই মোবাইল বা সেলফোন চারপাশ থেকে আসা সিগন্যালগুলো ধরতে পারে, নতুন সিগন্যাল পাঠিয়ে দিতে পারে বাড়তি কোনো অ্যানটেনা ছাড়াই!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।