জুমবাংলা ডেস্ক : ভারতের কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনারের খুনিদের প্রায় চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য আনারকে যারা হত্যা করেছে, তাদের প্রায় চিহ্নিত করে ফেলেছি। আমাদের শুধু ঘোষণা বাকি। দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থা একমত হতে পারলে ঘোষণা দেব।
তিনি বলেন, আমরা মৃতদেহটা এখন উদ্ধার করতে পারিনি। আপনারা যা শুনেছেন, আমরা সেগুলোই শুনেছি। যে পর্যন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করতে না পারব, সে পর্যন্ত অফিসিয়ালি আপনাদের কিছু বলতে পারছি না। এ বিষয়ে দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। আনোয়ারুল আজিম আমাদের ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের এমপি, ওই বর্ডার এলাকাটা সন্ত্রাসকবলিত। সে এলাকারই তিনি এমপি। কী কারণে হত্যাকাণ্ড হয়েছে সে বিষয়ে আমরা সুনিশ্চিত না হয়ে কিছুই বলা ঠিক হবে না। আমরা আগে সুনিশ্চিত হই, তারপর আপনাদের বিস্তারিত জানাব।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, এখন পর্যন্ত নতুন কিছু আমাদের কাছে আসেনি। আমাদের পুলিশ, আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা, ভারতের পুলিশ এবং ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা মিলে কাজ করছি; যাতে আরও কিছু তথ্য বেরিয়ে আসে। আমরা সুনিশ্চিত হয়েছি তাকে হত্যা করা হয়েছে। যারা হত্যা করেছে, তাদের মুখ থেকে আমরা এগুলো শুনেছি। তবে, মৃতদেহ এখনো উদ্ধার করতে পারেনি। আমরা মৃতদেহ উদ্ধারের চেষ্টা করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, তদন্তের খাতিরে আমরা আপনাদের বলেছিলাম, তদন্তটা মোটামুটি গুছিয়ে এনে আপনাদের জানাব। আমরা এখন নতুন কিছু আপডেট এই মুহূর্তে দিতে পারছি। এই মুহূর্তে আর কোনো সংবাদ আমরা পাইনি। এটুকু বলতে পারি, প্রায় আমরা চিহ্নিত করেছি।
মন্ত্রী আরও বলেন, একজন সংসদ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে, এ বিষয়টি আমরা খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। প্রধানমন্ত্রীসহ সবাই গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বিষয়টি। আশা করছি খুব অল্প সময়ে আমরা আপনাদের কিছু জানাতে পারব।
এদিকে, এই হত্যার ঘটনায় তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগও। ইতোমধ্যেই তারা মূল হোতাসহ কয়েকজনকে আটকও করেছে।
ডিবির তদন্ত থেকে জানা যায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীবনী গার্ডেনে ট্রিপ্লেক্স ফ্ল্যাট ভাড়া করেন মূল পরিকল্পনাকারী এমপির বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন। আগে থেকেই ভারতে অবস্থান করা কয়েক সন্ত্রাসীর সঙ্গে চুক্তি করেন তিনি। এরপর ৫ কোটি টাকার চুক্তিতে বাংলাদেশ থেকে ওই ফ্ল্যাটে নিয়ে যান মূল কিলার চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহকে।
ঢাকার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, শাহীন কিলার আমানুল্লাহকে নিয়ে কলকাতায় যান গত ৩০ এপ্রিল। সংসদ সদস্য আনার হত্যার ছক কষেন ওই ফ্ল্যাটে বসেই। এরপর সেখান থেকে ১০ মে দেশে ফেরেন শাহীন। তখন ওই ফ্ল্যাটে অবস্থান করেন শাহীনের বান্ধবী শিলাস্তি রহমান, মূল কিলার আমানুল্লাহ, জিহাদ, সিয়াম, মোস্তাফিজ ও ফয়সাল। ১৩ মে রাতে হত্যা মিশন বাস্তবায়ন করে আমানুল্লাহ, শিলাস্তি ও ফয়সাল দেশে ফেরেন। তাদের আটকের পর হত্যারহস্য উদ্ঘাটন হয়। তাদের কাছে পাওয়া যায় এমপি আনার হত্যার লোমহর্ষক কাহিনি।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই ফ্ল্যাটে যাওয়ার পর আনারকে শাহীনের টাকার জন্য চাপ দেন আমানুল্লাহ ও তার সহযোগীরা। একপর্যায়ে আনারের গলায় চাপাতি ধরেন আমানুল্লাহ। এ নিয়ে ধস্তাধস্তি হয়। পরে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) এক কর্মকর্তা কালবেলাকে জানিয়েছেন, কলকাতার ওই ফ্ল্যাট থেকে সব তথ্য দেশে অবস্থানকারী মূলহোতা শাহীনকে জানানো হয়। হত্যার পর আমানুল্লাহ ঘটনা জানান শাহীনকে। তখন শাহীন লাশ গুম করার নির্দেশ দেন।
আমানুল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ডিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, শাহীন আমানকে নির্দেশ দেন লাশ গুম করতে। সেই নির্দেশ পেয়ে আমান এমপি আনারের লাশটি কেটে টুকরো টুকরো করেন। এরপর বাইরে থেকে কিনে আনা হয় সাদা পলিথিন, ব্লিচিং পাউডার ও দুটি বড় সাইজের ট্রলি ব্যাগ। লাশ টুকরো করার পর তা ঢোকানো হয় পৃথক দুটি ট্রলিতে। লাশের টুকরোগুলো ব্যাগে ঢোকানোর পর বাইরে থেকে আনা ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ওই ফ্ল্যাটের মেঝে পরিষ্কার করে ফেলা হয়।
আনোয়ারুল আজিম হত্যার তদন্তের বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ঘটনাটি মর্মান্তিক। তিনি (আনার) ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ এলাকার জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি। তার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এলাকার মানুষ স্তম্ভিত। আমরা গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। এটি নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড, এটা মনে করেই তদন্ত কর্মকর্তারা কাজ করছেন। নিবিড়ভাবে ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। কয়েকজন আমাদের কাছে আছে, তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচ্ছি। তদন্তের স্বার্থে আমরা সবকিছু বলতে পারছি না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।