জুমবাংলা ডেস্ক : লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি ও আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের মালিক আনোয়ার হোসেন খানকে ১৩৩ কোটি টাকার অনৈতিক সুবিধা দিয়েছে বেসরকারি খাতের যমুনা ব্যাংক। তিন কিস্তির সমপরিমাণ অর্থ আদায় করে আনোয়ার খান মডার্নের ঋণ পুনঃ তফসিলের নির্দেশনা থাকলেও তা করা হয়নি। উল্টো ঋণের অর্থ আদায় না করেই সুদ আয় দেখানো হয়েছে। এত সব ঋণ অনিয়মের পরও আনোয়ার হোসেন খান সংসদ নির্বাচন করেছেন এবং আছেন ব্যাংকের পর্ষদেও।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে দেখা যায়, ২০২২ সালের জুনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপত্তি নিয়ে ধানমণ্ডিতে অবস্থিত আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের ১২৪ কোটি টাকার ঋণের পুনঃ তফসিল অনুমোদন করে যমুনা ব্যাংক। কিন্তু সেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শর্ত পরিপালন করতে বলা হয়। শর্ত অনুযায়ী, পুনঃ তফসিল করেতে হলে সুদসহ ঋণের তিন কিস্তির সমপরিমাণ অর্থ ব্যাংককে পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু ঋণ পুনঃ তফসিল হলেও সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করেনি আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল।
শুধু তা-ই নয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন দল বিষয়টি জানতে পারলে ওই ঋণকে ক্ষতিজনক মানে খেলাপি করতে নির্দেশনা দেয়, কিন্তু সেটিও করা হয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের ১২৪ কোটি টাকার ঋণের ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত ছয়টি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেনি। এসব কিস্তিতে প্রতিষ্ঠানটির পরিশোধ করার কথা ছিল ১৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বর্তমানে আনোয়ার খান মডার্নের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
তথ্য বলছে, আনোয়ার খান মডার্ন থেকে ঋণ আদায় না করলেও ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ঋণটি পুনঃ তফসিল বাবদ প্রায় ১১ কোটি টাকা আয় খাতে নেওয়া হয়েছে। এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষিত শর্তের লঙ্ঘন।
এসব অনিয়মের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফের যুমনা ব্যাংককে দুটি নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দিয়েছে। যেখানে বিআরপিডির সার্কুলার পরিপালন করে ঋণটিকে মন্দ মানে খেলাপি হিসেবে দেখানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে আদায় না করেই যে-ই অর্থ আয় খাতে নেওয়া হয়েছে, সেই আয়কে স্থগিত সুদ খাতে দেখাতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। পরে ব্যাংকটির অতিরিক্তি ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সালামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনিও সংশ্লিষ্ট শাখায় যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আর শিখা বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যাংক কম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর ১২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের সাত দিন আগে খেলাপি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তিনি নির্বাচনে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। অন্যদিকে ১২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের এক দিন আগে কোনো কম্পানির পরিচালক বা কোনো প্রতিষ্ঠানের অংশীদার খেলাপি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তিনি অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। এসব আইনের কারণে নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের মালিক আনোয়ার হোসেন খানের নির্বাচনে অযোগ্য হয়ে পড়ার কথা। কিন্তু খেলাপি না দেখানোতে বিষয়টিকে শর্তভঙ্গ হিসেবেই দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
শুধু তা-ই নয়, খেলাপিযোগ্য ঋণ থাকার পরও বেসরকারি খাতের শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক হিসেবেও বহাল তবিয়তে আছেন আনোয়ার হোসেন খান। ব্যাংক কম্পানি আইন অনুযায়ী কোনো ঋণখেলাপির ব্যাংক পরিচালক হওয়ার সুযোগ নেই।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর আনোয়ার হোসেন খানকে জনসম্মুখে আর দেখা যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোনসেটও বন্ধ রয়েছে। এ জন্য তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।