নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ভারত সফরে বাংলাদেশ কী পেলো, এটা আপেক্ষিক প্রশ্ন। বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র হিসেবে ভারত সব বিষয়েই সহযোগিতা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারত সরকারের আন্তরিকতার কোনও অভাব দেখিনি।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এমন একটি রাষ্ট্র, যার সবদিকে ভারত। একপাশে ছোট্ট একটুখানি মিয়ানমার সীমান্ত। বাকি সীমান্তজুড়ে বঙ্গোপসাগর, এটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো-বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের সব দল-মত এক থাকে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। তাঁর সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তিনি ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে ভারত সফর করেন।
বাংলাদেশের ইস্যুতে ভারত সবসময় আন্তরিক উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের সব রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, পাশাপাশি, ছিটমহল বিনিময়ের জন্য সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে স্থলসীমান্ত বিল পাস হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, যখন দু’টি দেশ ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হয়, তখন এটি বাস্তবসম্মত যে অনেক ক্ষেত্রে কিছু পার্থক্য থাকতে পারে। তবে, সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব।
‘আমি সবসময় মনে করি, আলোচনার মাধ্যমে সমস্ত সমস্যা সমাধান করা হয়,’ যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের সফরে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তি আছে। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর রেল ও সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ ছিল। একে একে সেগুলো তো সব চালু হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ভারত এতকিছু করার পরও বিএনপি বলে বেড়াচ্ছে কিছুই হয়নি। এটা মানসিকতা ও আত্মবিশ্বাসের বিষয়।
বাংলাদেশ যাই করে ভারতের সঙ্গে সমান অধিকার ঠিক রেখেই করে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, দেশের স্বার্থের কথা ভুলে যায় বিএনপি। আওয়ামী লীগ সরকার দেশের স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখেই সব চুক্তি করে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে ভারত সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে কী বলেছিলেন? তিনি বলেছিলেন, গঙ্গার পানি চুক্তির কথা বলতে ভুলেই গেছেন। বিএনপি সবসময় দেশের স্বার্থের কথা এমন ভুলেই যায়। এমনকি জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর ভারতের সব পণ্যের বাংলাদেশের বাজারে অবাধ প্রবেশাধিকার দিয়ে দিলে এক রাতের মধ্যেই বাজার ভারতীয় পণ্যে সয়লাব হয়ে যায় বলেও তিনি স্মরণ করিয়ে দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এবারের সফরে কুশিয়ারার পানিবণ্টন চুক্তি সবচেয়ে বড় অর্জন। এ চুক্তির ফলে সিলেট অঞ্চলে ৫৩ হাজার ৮২০ হেক্টর এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণে কাজ করা সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এবারের সফরে গঙ্গার পর প্রথমবারের মতো অভিন্ন নদী কুশিয়ারা থেকে সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের আওতায় ১৫৩ কিউসেক পানিবণ্টনে আমরা একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি। এই সমঝোতা স্মারকের ফলে রহিমপুর সংযোগ খালের মাধ্যমে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা পাওয়া যাবে।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ভারত ইতিবাচক বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করছে। নিজেদের মধ্যে অস্ত্রবাজি ও সংঘাত করছে। পরিবেশকে তারা আরও নষ্ট করছে।
তিনি বলেন, ভারতকে আমরা এ বিষয়টি বলেছি। ভারত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ইতিবাচক। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মিয়ানমারকে নিয়ে। এরা দ্বন্দ্ব ও সংঘাতে লিপ্ত থাকে। ভারত মনে করে, এটার সমাধান হওয়া উচিত। তবে, আমরা কোনো যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই।
বাংলাদেশ জাতির পিতা ঘোষিত পররাষ্ট্র নীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এর উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর আলোকেই তাঁর সরকার পাশ^বর্তী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলার মাধ্যমে সমুদ্র সীমা নির্ধারণ করলেও এই অঞ্চলের স্থিতি বিনষ্ট হয়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য চিনি, পেঁয়াজ, আদা, রসুনের মতো সব পণ্যের রপ্তানি বন্ধের আগে বাংলাদেশকে আগাম বার্তা দেবে ভারত। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার পদক্ষেপ নেবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।