আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে জান্তা সরকারের বেড়ে চলা দমন-পীড়ন ও হত্যার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) হস্তক্ষেপ চেয়েছেন দেশটির বন্দি আইন প্রণেতারা। জাতিসংঘে মিয়ানমারের নিযুক্ত দূত কিয়াও মোয়ে তুন সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। খবর রয়টার্স’র।
বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে এক সাংবাদিক বৈঠকে মোয়ে তুন বলেন, ‘মিয়ানমারে অব্যাহতভাবে দমন-পীড়ন, নির্যাতন ও হত্যা চালাচ্ছে জান্তা সরকার। কিন্তু এসবের জন্য জান্তা সরকারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা যাচ্ছে না।’
‘মিয়ানমারের কারাবন্দি আইন প্রণেতারা এ ব্যাপারে আইসিসির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। যদিও মিয়ানমার এখনও আইসিসির সদস্য নয়…কিন্তু আমাদের বিশ্বাস, এমন কোনো উপায় নিশ্চয়ই আছে, যার মাধ্যমে আইসিসিকে এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে এবং জান্তা সরকারের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করা যেতে পারে।’
মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের পর থেকে জান্তা সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন কিয়াও মোয়ে তুন। বর্তমানে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক মহলে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
গত বছর নভেম্বরে জাতীয় নির্বাচনে ভূমিধস জয় লাভ করে মিয়ানমারের নেত্রী সু চির নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি। নির্বাচনে পার্লামেন্টের ৮৩ শতাংশ আসনে জয় পায় দলটি।
মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী দেশটির পার্লামেন্টের মোট আসনের ২৫ শতাংশ এবং গুরুত্বপূর্ণ তিনটি মন্ত্রণালয় সেনাবাহিনীর জন্য নির্দিষ্ট করা; কিন্তু গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচনে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন দেশটির রাজনৈতিক দল এনএলডির বিপুল বিজয় সাংবিধানিক সেই হিসাব ওলট-পালট করে দেয়।
ফলে নির্বাচনের পর বেসামরিক প্রশাসনের সঙ্গে ক্ষমতার ভাগাভাগির প্রশ্নে অস্বস্তি শুরু হয় মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে।এর প্রেক্ষিতেই নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে ১ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলায় রক্তপাতহীন এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
দেশটির সেনাপ্রধান মিং অং হ্লেইংয়ের নেতৃত্বে সংঘটিত ওই অভুত্থানে বন্দি হন মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী সু চি এবং তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) বেশ কয়েকজন সদস্য। এদের মধ্যে সু চির মন্ত্রিসভার কয়েকজন মন্ত্রী, প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী ও পার্লামেন্ট সদস্যরাও রয়েছেন।
সেনাবাহিনীর অভুত্থানের অব্যবহিত পরই ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন মিয়ানমারের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদো, প্রধান শহর ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়সহ সারা দেশে শুরু হয় টানা বিক্ষোভ সমাবেশ-মিছিল ও অসহযোগ আন্দোলন।
প্রাথমিক পর্যায়ে বিক্ষোভ দমনে রাবারবুলেট, জলকামান ও লাঠিচার্জ ইত্যাদি ব্যবহার করলেও ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের প্রাণঘাতী স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেয় জান্তা সরকার।
মিয়ানমারে কারাবন্দিদের সহায়তা দানকারী বেসরকারি সংস্থা অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপ (এএপিপিএজি) জানিয়েছে, অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে নিহত হয়েছেন অন্তত ২২৪ জন। বৃহস্পতিবারও তিন বিক্ষোভকারী মারা গেছেন দেশটিতে; তাদের মধ্যে একজন মারা গেছেন ইয়াঙ্গুনে এবং অপর দু’জন মনিওয়া ও বাগো শহরে।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘে মিয়ানমারের দূতের বৈঠকের পর জান্তা সরকারের প্রতিক্রিয়া জানতে তাদের একজন মুখপাত্রের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। ওই মুখপাত্র জানিয়েছেন, অতি বিপন্ন বা জরুরি পরিস্থিতিতেই বল প্রয়োগ করছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। তাদের এমন নির্দেশই দেওয়া হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।