লাইফস্টাইল ডেস্ক : বয়ঃসন্ধির ছেলেমেয়েদের নিয়ে এখন ভাবনা অনেক৷ লুকিয়ে নেশা করছে না তো? খারাপ সঙ্গে পড়ে খারাপ কাজ করছে না তো? সর্বক্ষণ স্মার্টফোনে বুঁদ হয়ে থাকছে না তো?
প্রথমেই বলে রাখা ভাল, এই সমস্যা নতুন কিছু নয়৷ বরাবরই বয়ঃসন্ধির ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই সমস্যা ছিল৷ তবে হ্যাঁ, এ-কথা ঠিকই যে, এখন পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক আলাদা৷ আগে এত সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপার ছিল না৷ স্মার্ট ফোন তো দূরের কথা, আশির দশক পর্যন্ত মধ্যবিত্ত পাড়ায় একটা কি বড়জোর দুটো ল্যান্ডলাইন টেলিফোন ছিল৷ কমবয়সিরা আর যাই হোক, বাইকের জন্য অন্তত বায়না করতো না৷ স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের হাতে-হাতে দামি মোবাইলেরও কোনও গল্প ছিল না৷ আর সর্বোপরি, বাড়িতে ঠাকুমার মৃত্যুর পর কয়েকদিন যেতে-না-যেতেই মদ নিয়ে বসে বন্ধুদের সঙ্গে বার্থ-ডে পার্টি ও তৎসংলগ্ন খুনোখুনির শিরোনামও ছিল না৷
তাই এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অভিভাবক হিসেবে আপনার দায়িত্ব অনেক বেড়ে গিয়েছে৷ সন্তানের সব আবদারকে যেমন প্রশ্রয় দেওয়াও ঠিক নয়, আবার সর্বক্ষণ বকাঝকা করে তাকে দাবিয়ে রাখাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়৷ এক্ষেত্রে আপনি ডেমোক্র্যাটিক পেরেন্টিং বা মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে পারেন৷ বলি তাহলে৷
যদি দেখেন আপনার সন্তান আপনার থেকে কিছু লুকোচ্ছে, তাহলে প্রথম থেকেই সতর্ক হন৷ পুলিশি জেরা না-করে, তার সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করুন৷ আর সেই সুযোগে জেনে নিন তার কী সমস্যা৷ কোনও খারাপ সঙ্গে পড়ে কোনও খারাপ কাজ যদি সে করে ফেলে তাহলে সে তখন আপনার কাছে তা স্বীকার করবে৷ প্রয়োজনে আপনি তার ফেসবুক ফ্রেন্ড হয়ে যান৷ ওর বন্ধুদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান৷ তাহলে দেখবেন, ওর বন্ধু-সার্কেলে আপনি পরিচিত হয়ে উঠবেন৷ হেলিকপ্টার পেরেন্টিং না-করেও আপনি জেনে যাবেন ওর মেলামেশা কাদের সঙ্গে, ওর ঘোরাবেড়ানো কোথায়-কোথায়৷
যদি দেখেন বাড়ি থেকে টাকা চুরি হচ্ছে, আর তারজন্য সন্দেহের তির আপনার সন্তানের দিকেই থাকছে, তাহলে সতর্ক হোন৷ অত টাকা নিয়ে সে কী করছে জানার চেষ্টা করুন কৌশলে৷ বকাঝকা না-করে ওর সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশে বুঝে নিন, নেশা-টেশা করছে না তো সে৷
হাতখরচা অবশ্যই হিসেব করে দেবেন৷ তা আপনি যতই বড়লোক হোন-না কেন৷ মনে রাখবেন, বেহিসেবি খরচা ওকে বেপথু করে তুলতে পারে৷ বন্ধুরা তার সুযোগ নিতে পারে৷ দামি হেডফোন থেকে শুরু করে, দামি স্মার্টফোন, কোনও কিছুর বায়নাই কিন্তু সহজে মেনে নেবেন না৷ সেক্ষেত্রে বলতে পারেন, এবারের পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করলে তবে ভেবে দেখা যেতে পারে৷ তবে অত দামি কখনই নয়, তার কাছাকাছি একটা ফোন বা হেডফোন দেওয়া যেতে পারে৷ তাকে বোঝাতে চেষ্টা করবেন, কত খেটে আপনারা অর্থ উপার্জন করছেন৷ সে-ও যেন বড় হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তবেই এইসব বিলাসিতা করে৷ মা-বাবার টাকায় দামি-দামি গেজেট বা পোশাক, কোনওটাই শোভনীয় নয়৷
ছোট থেকেই কিছুটা মূল্যবোধের পাঠ দেবেন আপনার সন্তানকে৷ অবশ্যই তা জ্ঞান দেওয়ার মতো করে নয়৷ আপনার পরিবারে, আপনার আগের প্রজন্মের যাঁরা খুব কষ্ট করে দাঁড়িয়েছেন এবং নিজে দাঁড়িয়ে গোটা সংসারটাকে দাঁড় করিয়েছেন, তার দৃষ্টান্ত বারেবারেই দেবেন৷
সবচেয়ে বড় কথা, যথাযথ শাসন করেও সন্তানের সঙ্গে কিছুটা হলেও বন্ধুর মতো মিশুন৷ তাহলে দেখবেন, কখনও কোনও বিপদে পড়লে বা অন্যায় কাজ করে ফেললে, তা আপনাকে ঠিকই একসময়ে জানিয়ে দেবে সে৷ আর আপনিও সেইমতো পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারবেন৷
প্রয়োজন হলে, পেশাদার মনোবিদের পরামর্শ নিন৷ আপনার যদি মনে হয়, আপনার সন্তান অহোরাত্র ফোনে বুঁদ হয়ে আছে, তাহলে একজন মনোবিদই বলে দিতে পারবেন, তা স্ক্রিন অ্যাডিকশনের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে কিনা৷ নাকি নেহাত আপনারই মনে হয় ও বেশিক্ষণ ফোন নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করছে, আদতে ব্যাপারটা ঠিক তা নয়৷ যদি দেখেন, বেশ কিছুদিন ধরে আপনার সন্তান গুমরে রয়েছে, তাহলেও মনোবিদের পরামর্শ নিন৷ আর যদি মনে হয় আপনার সন্তান কিছু লুকোচ্ছে আপনার থেকে, কিছুতেই আপনি ওর মনের হদিশ পাচ্ছেন না, তাহলে ওর অজান্তেই আপনি নিজে একজন মনোবিদের পরামর্শ নিন৷ তিনিই আপনাকে ওই পরিস্থিতিতে যথাযথ পথ দেখাতে পারবেন৷
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।