আপেক্ষিকতা ও কোয়ান্টাম মেকানিকস: কৃষ্ণগহ্বরের ভেতরের অজানা দুনিয়া

কৃষ্ণগহ্বর

কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যে চিন্তা করা যায় কি না, সে সম্পর্কেও নিশ্চিত নন বিজ্ঞানীরা। কারণ, শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য দেহের ভেতর রক্ত, তথ্য এবং রাসায়নিক আয়নগুলোর সবদিকে চলাচল জরুরি। আপনার দেহের রক্ত আর নিউরন যদি শুধু কৃষ্ণগহ্বরের কেন্দ্রের দিকে ধাবিত হয়, তাহলে বেঁচে থাকলেও আপনার চেতনা কি তখনো বহাল থাকবে?

কৃষ্ণগহ্বরে

আবার ঘটনা দিগন্তের ভেতরে স্থান আর কালের চেহারাটা কেমন, তা–ও জানা নেই আমাদের। তাই সেখানে কী ঘটে, বলা মুশকিল। মহাকর্ষ নিয়ে মানবজাতির সেরা আবিষ্কার আপেক্ষিকতা তত্ত্ব শুধু কৃষ্ণগহ্বরের বাইরে ভালোভাবে কাজ করে। কৃষ্ণগহ্বরের ভেতরে ক্ষুদ্র পরিসরে তা অকার্যকর। কারণ, সেখানে কোয়ান্টাম মেকানিকসকে অগ্রাহ্য করলে চলবে না। তবে কৃষ্ণগহ্বরের ভেতর আপেক্ষিকতা তত্ত্ব আসলেই অকার্যকর কি না কিংবা কিছুটা সঠিক কি না, তা–ও আমরা নিশ্চিত জানি না।

আপেক্ষিকতা তত্ত্ব যদি সেখানে সামান্য হলেও সঠিক হয়, তাহলে এর সমীকরণ থেকে আমরা যেসব তথ্য পাই, তা মোটেও সুখকর নয়। কারণ, কৃষ্ণগহ্বরের কেন্দ্রের যত কাছে যাবেন, মহাকর্ষ তত বেশি শক্তিশালী হতে থাকবে। আপনি দ্রুত থেকে আরও দ্রুত বেগে কেন্দ্রের দিকে ছুটতে থাকবেন। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে যে কৃষ্ণগহ্বর আছে, সেখানে পড়ে গেলে কেন্দ্রে পৌঁছাতে আপনার সময় লাগবে মাত্র ২০ সেকেন্ড। অবশ্য কেন্দ্র পর্যন্ত আপনার পৌঁছানোর কথা নয়। তার অনেক আগেই স্প্যাগেটিফিকেশন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এখন কৃষ্ণগহ্বরের ভেতর যদি আপেক্ষিকতা একদমই কাজ না করে, তাহলে আপনার ভাগ্যে কী ঘটতে পারে? এ ক্ষেত্রে আর তত্ত্ব কাজ করে না, তার জায়গা দখল করে কল্পনা। বিজ্ঞানীসহ বিশেষ করে বিজ্ঞান কল্পকাহিনি লেখকদের জন্য খুবই প্রিয় একটা বিষয় সেটা। এই দলের মতে, ঘটনা দিগন্ত পার হওয়ার পর মজার মজার সব ঘটনা ঘটতে পারে। কিছু পদার্থবিদের অনুমান, কৃষ্ণগহ্বরের ভেতর একেবারে আলাদা এক মহাবিশ্ব রয়েছে। কাজেই ঘটনা দিগন্ত পেরিয়ে নতুন একটা মহাবিশ্বে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে! কে জানে সত্যি কি না!

আরেক দলের অনুমান, কৃষ্ণগহ্বরের ভেতর কোনো ওয়ার্মহোলের সংযোগ থাকতে পারে, যেটা মহাবিশ্বের আরেকটা প্রান্তের সঙ্গে যুক্ত। তাহলে ওয়ার্মহোলের ওই প্রান্তে কী আছে? বিজ্ঞানীদের অনুমান, সেখানে হয়তো কোনো হোয়াইট হোল বা শ্বেতগহ্বর থাকতে পারে। মানে কৃষ্ণগহ্বরের ঠিক বিপরীত চরিত্রের মহাজাগতিক বস্তু। কৃষ্ণগহ্বর যেমন সবকিছু নিজের কেন্দ্রে টেনে নেয়, শ্বেতগহ্বর তেমনি সবকিছু বাইরে ঠেলে পাঠিয়ে দেয়। আর ওই সব বস্তু আসে কৃষ্ণগহ্বর থেকে। কাজেই ভাগ্য ভালো থাকলে, এমন কোনো শ্বেতগহ্বর দিয়ে আবারও মহাবিশ্বে বেরিয়ে আসা যাবে হয়তো।

আপনি মারা যান বা বেঁচে থাকুন—ভাগ্যে যেটাই ঘটুক না কেন, আপনি যে মহাবিশ্বের অনেক গোপন রহস্য জেনে যাবেন, তাতে সন্দেহ নেই! সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব ও কোয়ান্টাম মেকানিকসের নতুন দিগন্তও উন্মোচিত হবে আপনার মহান হাত দিয়েই। কিংবা নতুন কোনো মহাবিশ্বও আবিষ্কৃত হতে পারে। তাহলে আপনিই হবেন দুঃসাহসিক মহাজাগতিক কলম্বাস! কিন্তু দুঃখের ব্যাপারটা হলো, এসব গোপন রহস্য চিরকাল গোপনই থেকে যাবে। সে কথা কাউকেই বলে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়তো পাবেন না কোনো দিন! জীবনানন্দের ভাষায়, ‘এ পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর।’