আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফগানিস্তানের কুন্দুজ শহরের এক মসজিদে চালানো আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ৫০ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। কর্মকর্তারা বলছেন মার্কিন সৈন্যরা আফগানিস্তান ত্যাগ করার পর এটা ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা। খবর বিবিসি’র।
কুন্দুজে সাঈদ আবাদ নামের এই মসজিদটিতে সংখ্যালঘু শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ নামাজ পড়তেন। মসজিদের ভেতর মৃতদেহ ছড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
উত্তরাঞ্চলীয় শহরটিতে এই বোমা হামলায় শতাধিক লোক আহত হয়েছে।
হামলার দায়িত্ব কোন গোষ্ঠী স্বীকার করেনি, তবে স্থানীয় একটি ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীসহ সুন্নি মুসলিম চরমপন্থীরা আগেও শিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালিয়েছে।
কট্টরপন্থী সুন্নিরা শিয়াদের কাফের বলে মনে করেন।
আফগানিস্তানে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত আঞ্চলিক গোষ্ঠী ‘আইএস-কে’ দেশটিতে তালেবান শাসনের চরম বিরোধিতা করছে। আইএস-কে প্রধানত দেশটির পূর্বাঞ্চলে সম্প্রতি বেশ কিছু বোমা হামলা চালিয়েছে।
একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী যালমাই আলোকযাই ঘটনার পরই হাসপাতালে ছুটে যান ডাক্তারদের দান করা রক্তের প্রয়োজন আছে কিনা তা জানতে। তিনি বলেন তিনি সেখানে বিশৃঙ্খল দৃশ্য দেখেছেন।
“হামলাস্থলে অ্যাম্বুলেন্স গিয়ে নিহতদের লাশ নিয়ে আসছে,” এএফপি সংবাদ সংস্থাকে তিনি বলেছেন।
বিবিসির সংবাদদাতা সিকান্দার কিরমানি বলছেন যদিও এখনও পর্যন্ত কেউ হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেনি, কিন্তু এই হামলায় আইএস-কে গোষ্ঠীর সবরকম ছাপ দেখা যাচ্ছে। এই গোষ্ঠী অগাস্টে কাবুল বিমানবন্দর লক্ষ্য করে বিধ্বংসী হামলা চালিয়েছিল।
তিনি বলেছেন এই গোষ্ঠী আফগানিস্তানের সংখ্যালঘু শিয়া সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে অতীতে অনেকগুলো হামলা চালিয়েছে, যেখানে মসজিদ, স্পোটর্স ক্লাব এবং স্কুলে বোমা হামলা হয়েছে। সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে আইএস তালেবানের বিরুদ্ধেও হামলা জোরদার করেছে।
রবিবার কাবুলে একটি জানাজা লক্ষ্য করে আইএস হামলা চালিয়েছে, যেখানে যোগ দিয়েছিলেন তালেবানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা। এছাড়াও পূর্বাঞ্চলে নানগারহার এবং কুনার প্রদেশেও বেশ কয়েকটি ছোট মাপের হামলা হয়েছে বলে মি. কিরমানি জানাচ্ছেন। এই দুটি প্রদেশ আগে আইএস-এর শক্ত ঘাঁটি ছিল।
শুক্রবারের এই হামলা যদি আইএস চালিয়ে থাকে, তাহলে দেশের উত্তরাঞ্চলে এই গোষ্ঠী যে তাদের তৎপরতা জোরদার করছে, এ ঘটনা সেটারই স্পষ্ট ও উদ্বেগজনক ইঙ্গিত বলে মি. কিরমানি জানাচ্ছেন।
তালেবান বলছে তারা আইএস-এর কয়েক ডজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে এবং গোষ্ঠীটির সাথে সম্পৃক্ত বলে সন্দেহভাজন অন্যদের হত্যা করেছে বলে তারা ধারণা করছে। তবে আইএস তালেবানের জন্য যে বিশাল একটা হুমকি হয়ে উঠছে, সেটা তারা প্রকাশ্যে বড় করে দেখাতে চাইছেন না বলে মনে করছেন মি. কিরমানি।
বহু আফগান আশা করেছিল তালেবান ক্ষমতা হাতে নেবার পর স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা এলেও একটা অপেক্ষাকৃত শান্তিপূর্ণ শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু সিকান্দার কিরমানি জানাচ্ছেন তালেবান নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করার যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, আইএস তাতে বড়ধরনের হুমকি হয়ে উঠছে।
আমেরিকা ও তালেবানের মধ্যে একটি চুক্তি অনুযায়ী অগাস্টে আফগানিস্তান থেকে বিদেশী সৈন্যরা চলে যাবার পরই তালেবান দেশটির ক্ষমতা গ্রহণ করে।
এর দুই দশক আগে ২০০১ সালে আমেরিকান সৈন্যরা তালেবানকে আফগানিস্তানে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।