জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের পড়ার টেবিলে পাওয়া গেছে বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, সমরেশ মজুমদারের ‘সাতকাহন’, হুমায়ূন আহমেদের ‘মিসির আলী সমগ্র’, অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের লেখা ‘বঙ্গবন্ধু : মহাকালের মহানায়ক’, শাহাদুজ্জামানের ‘ক্রাচের কর্ণেল’ ইত্যাদি গ্রন্থ। এছাড়া রয়েছে বিভূতিভূষণের ‘উপন্যাস সমগ্র’।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার রায়ডাঙ্গা গ্রামে আবরারের বাড়ি। ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিলেন তিনি। পড়ালেখার চাপ থাকায় গত রোববার ফিরে আসেন। সন্ধ্যায় বুয়েট শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে ব্যস্ত ছিলেন পড়ালেখায়। রাত ৮টার দিকে আবরারকে ওই হলের দোতলার ২০১১ নম্বর টর্চার সেলে ডেকে নিয়ে হুমকি দিতে শুরু করেন বুয়েট ছাত্রলীগের নেতারা।
এ পর্যায়ে ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার আবরারের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ফেসবুক ঘেঁটে বাছ-বিচার না করেই হকি স্টিক দিয়ে পেটাতে শুরু করেন। সেখানে অবস্থান করা সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিনও আরেকটি হকি স্টিক নিয়ে আবরারকে পেটানোতে অংশ নেন। ওই সময় ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন আবরারের হাত ধরে রাখেন। আর আবরারের পায়ে পেটাতে থাকেন উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল। সদস্য মুনতাসির আল জেমি, মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ইশতিয়াক মুন্নাও নির্দয়ভাবে পেটাতে শুরু করেন আবরারকে। কেউ হকি স্টিক দিয়ে, কেউ লাঠি দিয়ে, কেউ বা কিল-ঘুষি দিয়ে ইচ্ছামতো আবরারকে পেটানোতে অংশ নেন। এভাবে ২২ জন অংশ নেন এই ভয়ংকর নির্যাতনে। আবরার একটু কাঁদতেও পারেননি। কারণ তখন তাঁর মুখ চেপে ধরা হয়েছিল। চরম এই নির্যাতনের মধ্যেও আবরার বলেছিলেন, ‘আমি কোনো অন্যায় করিনি, আমাকে মেরো না।’ আরো কিছু বলার চেষ্টা করলেও নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তা আর বলতে পারেননি।
ওই অবস্থার মধ্যেই টর্চার সেলে প্রবেশ করেন বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ও সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ। তাঁরাও অপেক্ষা না করে নিস্তেজ প্রায় আবরারকে পেটাতে শুরু করেন। এভাবেই একপর্যায়ে মেধাবী ছাত্র আবরার মৃ;ত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
তাদের গ্রেফতার করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন ভয়ংকর তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল তাঁদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি।
প্রসঙ্গত, ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ার জের ধরে আবরার ফাহাদকে রোববার (৬ অক্টোবর) রাতে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দুইতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পরদিন সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ লা’শের ময়নাতদন্ত করেন। তিনি বলেন, ‘ছেলেটিকে পি’টিয়ে হ’ত্যা করা হয়েছে।
এই ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে রাজধানীর চকবাজার থানায় একটি হ’ত্যা মামলা দায়ের করেছেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৩ জন ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ।
নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। সূত্র : একুশে টিভি অনলাইন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।