গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা প্রতিদিনই আবহাওয়ার নানা রকম পরিবর্তনের মুখোমুখি হচ্ছি। কোথাও তীব্র গরমে নাভিশ্বাস উঠছে, আবার কোথাও হঠাৎ করে নেমে আসছে বজ্রসহ বৃষ্টি। এই বৈচিত্র্যপূর্ণ আবহাওয়া আমাদের দৈনন্দিন জীবন, কৃষিকাজ এবং স্বাস্থ্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। আজকের আবহাওয়ার অবস্থা এবং আগামী ৭২ ঘণ্টার সম্ভাব্য আবহাওয়ার পূর্বাভাস/আবহাওয়ার খবর নিয়ে এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে বিস্তারিত তথ্য।
আজকের আবহাওয়া: সারাদেশে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা
আজকের আবহাওয়া অনুসারে, রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। একইসঙ্গে ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ী ঝোড়ো হওয়াও বয়ে যায় যেতে পারে।
Table of Contents
রোববার (১৩ এপ্রিল) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, আজ আকাশ আংশিক মেঘলা থেকে অস্থায়ীভাবে মেঘলা থাকতে পারে। সেইসঙ্গে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তবে দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আর এসময় পশ্চিম অথবা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮-১২ কিলেমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে এবং তা অস্থায়ীভাবে ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৪০-৫০ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
এছাড়াও রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কয়েকটি জায়গায় বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ীভাবে মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সারদেশে দিন এবং রাতের সামান্য তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
এছাড়া দেশের অন্যত্র আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে এবং আকাশ আংশিক মেঘলা থাকবে। এই ধরনের আবহাওয়ার কারণে অতিরিক্ত গরম অনুভূত হতে পারে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই পর্যাপ্ত পানি পান এবং সরাসরি রোদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা উচিত।
আগামী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস: কোন বিভাগে কতটা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা
রবিবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে যে সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা আরও সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়ে গেছে। বিশেষ করে পাহাড়ি ও নদীবেষ্টিত অঞ্চলে আকস্মিক বৃষ্টিপাতের কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাস অনুযায়ী, সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এই সময়কালে কৃষিপ্রধান এলাকাগুলোতে বৃষ্টির ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। যেমন আম ও লিচুর বাগানে বৃষ্টির পানিতে গাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। তবে যেসব এলাকায় শস্য কাটার মৌসুম চলছে, সেখানে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
আবহাওয়ার এই পরিবর্তনজনিত পরিস্থিতিতে নাগরিকদের উচিত নিয়মিত আবহাওয়ার আপডেট জানা এবং আবহাওয়াবিদদের নির্দেশনা অনুযায়ী চলাফেরা করা। এর ফলে ঝুঁকি কমে যাবে এবং স্বাস্থ্য ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
বজ্রপাত থেকে সুরক্ষায় করণীয়
বজ্রপাতের সময় নিরাপদ আশ্রয় খোঁজা
বাংলাদেশে বর্ষাকালে বজ্রপাত একটি সাধারণ ঘটনা। বজ্রপাতের সময় উঁচু গাছ, খোলা মাঠ বা উঁচু স্থানে অবস্থান না করাই ভালো। বাড়ির ভিতরে অবস্থান করা এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত।
আবহাওয়া অ্যাপ বা সরকারি পূর্বাভাসের উপর নির্ভরতা
বর্তমানে সরকারি আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং বিভিন্ন আবহাওয়াবিষয়ক অ্যাপ রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে পূর্বাভাস জানা সম্ভব। এগুলোর ব্যবহার বাড়ানো গেলে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পাবে এবং মানুষ সতর্ক থাকতে পারবে।
তাপপ্রবাহের প্রভাব এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
উত্তপ্ত আবহাওয়া এবং তাপমাত্রার বৃদ্ধি জনস্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তিরা এই সময় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন।
- হালকা ও ঢিলেঢালা কাপড় পরা উচিত
- প্রচুর পানি পান করা উচিত
- সূর্য যখন তীব্র—বিশেষ করে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত—বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন
- বাজারে বের হলে ছাতা বা ক্যাপ ব্যবহার করুন
চাষাবাদ ও কৃষি খাতে আবহাওয়ার প্রভাব
আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তন সরাসরি প্রভাব ফেলে কৃষিকাজে। অনেক সময় দেখা যায়, বৃষ্টির কারণে খেতের ধান পড়ে যায়, আবার কখনও কখনও খরার কারণে গাছের বৃদ্ধি থেমে যায়। আবহাওয়ার পূর্বাভাস কৃষকদের আগেভাগে প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করে।
যেমন, বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলে চাষিরা শস্য কেটে ফেলতে পারেন অথবা খামারে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে পারেন। ঠিক তেমনি খরা হলে সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে শস্য রক্ষা করা যায়।
এই প্রসঙ্গে নতুন চাষাবাদ পদ্ধতি বিষয়ক একটি প্রতিবেদন পাঠকদের পড়া উচিত।
শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতা ও এর প্রতিকার
হঠাৎ বৃষ্টিপাতে শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও ময়লা-আবর্জনা জমে থাকা এর মূল কারণ।
এই সমস্যা সমাধানে শহরবাসীকে সচেতন হতে হবে এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে। নর্দমা পরিষ্কার রাখা এবং বর্জ্য সঠিক স্থানে ফেলা অত্যন্ত জরুরি।
এ বিষয়ে আরও জানতে পারেন জলাবদ্ধতা সমাধান সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে।
FAQs: আজকের আবহাওয়া ও পূর্বাভাস সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্ন
আজকের আবহাওয়ার পূর্বাভাস/আবহাওয়ার খবর কোথায় পাওয়া যাবে?
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং মোবাইল অ্যাপ থেকে প্রতিদিনের আবহাওয়ার আপডেট জানা যায়।
আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোথায় বৃষ্টি হতে পারে?
রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু স্থানে বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
বজ্রপাতের সময় কী করা উচিত?
বাড়ির ভিতরে অবস্থান করা, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করা এবং গাছপালা ও খোলা জায়গা এড়িয়ে চলা উচিত।
তাপপ্রবাহ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কী?
প্রচুর পানি পান করা, রোদে বের না হওয়া, হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরা এবং ঘনঘন বিশ্রাম নেয়া উপকারী।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস/আবহাওয়ার খবর কৃষকদের জন্য কতটা জরুরি?
পূর্বাভাস কৃষকদের শস্য রক্ষায় সহায়তা করে। তারা বৃষ্টির আগে ফসল কাটতে পারেন বা খরা মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিতে পারেন।
জলাবদ্ধতা কীভাবে এড়ানো যায়?
আবহাওয়ার পূর্বাভাস: ড্রেন পরিষ্কার রাখা, আবর্জনা সঠিক স্থানে ফেলা এবং নগর পরিকল্পনা উন্নত করার মাধ্যমে জলাবদ্ধতা রোধ সম্ভব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।