জুমবাংলা ডেস্ক: টানা দুই কার্যদিবস ১ টাকা ৪০ পয়সা কমার পর গতকাল মঙ্গলবার আড়াই টাকা বেড়ে ডলারের দাম উঠেছে ১০৮ টাকায়। খোলাবাজারে দাম আরও চড়া। গতকাল এই বাজারেও প্রায় ১ টাকা বেড়ে ১১৫ টাকায় উঠেছে। দাম নিয়ন্ত্রণে প্রায় প্রতিদিনই রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারপরও ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না। ডলারের দাম বাড়ায় আমদানি বিল নিষ্পত্তিতে ব্যবসায়ীদের খরচ আরও বেড়েছে। ফলে পণ্যমূল্য বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ব্যাংকগুলো বলছে, প্রবাসী আয় ও রপ্তানি বিল নগদায়নের রেট নির্ধারণ করে দেওয়ার পর ডলার সংগ্রহ করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে প্রবাসী আয়ের সঙ্গে রপ্তানি আয়ের রেটে বিস্তর ব্যবধান থাকায় রপ্তানিকারকরা ডলার নগদায়ন করতে চাইছেন না। আবার নির্ধারিত রেটে প্রবাসী আয় সংগ্রহের কারণে ব্যাংকগুলোর গড় ভারিত খরচ বেশি হয়ে যাচ্ছে।
বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা কমাতে আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার গত সপ্তাহে বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর একদিনের ব্যবধানেই গত ৯ সেপ্টেম্বর আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম ১০ টাকা ১৫ পয়সা বেড়ে ১০৬ টাকা ১৫ পয়সায় ওঠে। পরের দিন বুধবার দর আরও ৭৫ পয়সা বেড়ে ১০৬ টাকা ৯০ পয়সা হয়। তবে
বৃহস্পতিবার দর ১৫ পয়সা কমে ১০৬ টাকা ৭৫ পয়সা হয়। আর গত সোমবার তা আরও ১ টাকা ২৫ পয়সা কমে ১০৫ টাকা ৫০ পয়সায় নেমেছিল। তবে গতকাল একলাফে আড়াই টাকা বেড়ে ডলারের দাম উঠেছে ১০৮ টাকায়।
এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর সব পর্যায়ে ডলার কেনাবেচার অভিন্ন রেট নির্ধারণ করে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) নেতারা। এতে রপ্তানি আয়ে ডলারের দাম ৯৯ টাকা এবং প্রবাসী আয়ে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ফলে ডলার সংগ্রহে গড়ে সর্বোচ্চ খরচ হয় ১০৩ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে ১ টাকা মুনাফা যোগ করে আমদানিকারকদের কাছে প্রতি ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১০৪ টাকা ৫০ পয়সা নেওয়ার কথা ব্যাংকগুলোর। কিন্তু বাস্তবে এই দামে আমদানি এলসি নিষ্পত্তির জন্য ডলার পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। গতকাল বেশিরভাগ ব্যাংকে আমদানি এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে প্রায় ১০৮ টাকা থেকে ১১১ টাকার মধ্যে। তবে এই রেটের কমেও কয়েকটি ব্যাংকে এলসি নিষ্পত্তি হয়।
পাশাপাশি খোলাবাজারেও চলছে ডলার সংকট। মূলত করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পর সবকিছু চালু হওয়ায় চিকিৎসাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষের বিদেশ ভ্রমণ বেড়েছে। আর এ শ্রেণির মানুষের অধিকাংশই খোলাবাজার থেকে ডলার সংগ্রহ করছেন। ফলে এই বাজারে সরবরাহের চেয়ে জোগান কম থাকায় ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। গতকাল মানি চেঞ্জারগুলোতে প্রতি ডলার কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হয়েছে ১১৪ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১৫ টাকা। যা একদিন আগেও ছিল ১১৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১৪ টাকা।
মতিঝিলের পাইওনিয়ার মানি এক্সচেঞ্জ হাউসের চেয়ারম্যান মো. রোকন উদ্দিন আমাদের সময়কে বলেন, সম্প্রতি কেউ ডলার বিক্রি করতে আসছেন না, যারা আসছেন সবাই কিনতে চান। এ কারণে ডলারের দাম কমছে না। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামীতে খোলাবাজারে ডলারের দাম কমার সম্ভাবনা কম বলেও জানান তিনি।
দেশে ৫ মাসের বেশি সময় ধরে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। আমদানি ব্যয়ের অস্বাভাবিক উলম্ফন ও প্রবাসী আয়ের নিম্নমুখী প্রবণতার কারণে ডলারের সংকটকে কেন্দ্র করেই এ অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ডলারের বাজারের অস্থিরতা কমাতে প্রতিনিয়তই রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকালও প্রায় ৫ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এই নিয়ে চলতি অর্থবছরের ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রিজার্ভ থেকে মোট ডলার বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০৪ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। আর গত অর্থবছরের পুরো সময়ে বিক্রি করা হয় ৭৬২ কোটি ডলার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।