পাবনা প্রতিনিধি: বাণিজ্যমন্ত্রী আমদানির ঘোষণা দেওয়ায় পর থেকে পেঁয়াজের দরপতন শুরু হয়েছে। একদিনের ব্যবধানে উত্তরের জেলা পাবনায় প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম কমেছে ৫শ’ টাকা।
গত শুক্রবার প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ৯শ’ টাকা দরে। পরদিন শনিবার সেই পেঁয়াজ প্রতি মণ বিক্রি হয় দুই হাজার ৪শ’ টাকা দরে।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। দাম বেশি হওয়ায় লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন চাষিরা। কিন্তু তাদের সেই আশায় জল ঢেলেছে বাণিজ্যমন্ত্রীর পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা।
আজ (২০ মে) সকালে পাবনার বনগ্রাম হাটে চাষি ও পাইকারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাটে প্রচুর পেঁয়াজ। তবে বাজারে সরবরাহের তুলনায় চাহিদা কম। ব্যাপারীরা বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। শুক্রবার পাবনার চিনাখড়া হাটে যে পেঁয়াজ ২ হাজার ৭শ’ টাকা মণ বিক্রি হয়েছে; সেই মানের পেঁয়াজ শনিবার বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ২শ’ টাকায়।
হাটে আসা অনেক চাষি বলেন, এক রাতের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম ৫শ’ টাকা কমবে, তারা ভাবতে পারেননি।
গত বছর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ভালো পেঁয়াজের দাম ছিল ১ হাজার ৪শ থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকা মণ। দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে দাম কমে হয় ১ হাজার ১শ’ থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকা।
চাষিদের দেওয়া তথ্য মতে, গত বছর মণপ্রতি তাদের খরচ ছিল এক হাজার টাকার বেশি। তার ওপর পেঁয়াজ ঘরে রাখলে ওজনে কমে যায়, পচে যায়। তাই তারা গত বছর লাভবান হতে পারেননি।
তারা বলছেন, এবছর দাম বেশি হলেও ফলন হয়েছে গত বছরের অর্ধেক। সে হিসাবে তাদের উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হয়ে গেছে। মৌসুমের কিছুদিন পর এসে দাম বাড়ায় তারা লাভের আশা করছিলেন। কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রীর আমদানির ঘোষণা তাদের আশা ভেস্তে গেছে।
সাঁথিয়া উপজেলার বামনডাঙ্গা গ্রামের চাষি সাগর হোসেন বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি শুক্রবার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, পেঁয়াজের দাম দু-একদিনের মধ্যে না কমলে আমদানি করা হবে। তার এক ঘোষণাতেই পেঁয়াজের দামের বারটা বেজে গেছে। চাষিরা দু-একটি ফসলে লাভবান না হলে টিকে থাকবে কীভাবে, মন্ত্রী তা ভাবেননি বলেও অভিযোগ করেন ওই কৃষক।
পাবনা সদর উপজেলার শুকচর গ্রামের শুকুর আলী বলেন, শুক্রবার পেঁয়াজের মণ ছিল ২ হাজার ৮শ’ থেকে ২ হাজার ৯শ’ টাকা মণ। আমদানির ঘোষণায় একদিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমে হয়েছে ২ হাজার ২শ’ থেকে ২ হাজার ৩শ’ টাকা। এত বাজার কমে যাওয়ায় পেঁয়াজ ফেরত নিয়ে যাচ্ছি। এই দামে বেচলে আমাদের পোষাবে না। তিনি আরও বলেন, সরকার যদি পেঁয়াজ আমদানি করে তাহলে আমাদের বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো।
বনগ্রাম হাটে আসা আরেক চাষি মজিবর প্রামানিক বলেন, হাটে পেঁয়াজ এনে শুনি দাম মণপ্রতি ৫শ’ টাকা কমে গেছে। পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ায় গাড়ি থেকে পেঁয়াজ নামাচ্ছি না। সরকার যদি আমদানি করে তাহলে সরকারই ব্যবসা করুক। আমরা পেঁয়াজ লাগাব না। কারণ পেঁয়াজ আমাদের জাত ব্যবসা। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে তো ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারবে না।
পেঁয়াজের বেপারী রায়হান উদ্দিন চিনাখড়া, বনগ্রাম, পুষ্পপাড়া, হাজিরহাট, আতাইকুলাসহ বিভিন্ন হাট থেকে পেঁয়াজ কিনে জয়পুরহাট এবং ঢাকায় পেঁয়াজ সরবরাহ করেন। তিনি জানান, একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কমে গেছে। শনিবার তিনি কিনেছেন ২ হাজার ২শ’ থেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকা দরে। আগেরদিন কিনেছেন ২ হাজার ৪শ’ থেকে ২ হাজার ৮শ’ টাকা দরে। আমদানির ঘোষণার পর থেকেই দাম কমতে শুরু করেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার উপ-পরিচালক জামাল উদ্দিন বলেন, চাষির পেঁয়াজ উৎপাদন খরচ পড়ে প্রতি কেজিতে ৩৫-৪০ টাকার ওপর। কিন্তু মৌসুমে চাষিরা ২০-২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। এতে তারা নিশ্চিতভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন।
এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, তখন ওই দরে বিক্রি না করে উপায় থাকে না। কারণ তারা দেনার ভারে জর্জরিত থাকেন। এবছর যে দাম উঠেছে তাতে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। সরকার আমদানি করে দামটা ভারসাম্যপূর্ণ রাখার চেষ্টা করছে। যাতে ক্রেতা-ভোক্তা উভয়েই ভালো থাকেন। এতে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে না বলে মনে করেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।