আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জম্মু-কাশ্মীরের অবরুদ্ধ জনতার মুক্তির দাবিতে গত শুক্রবার জাতিসংঘ মঞ্চে দাঁড়িয়ে জ্বালাময়ী ভাষণ দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান। তিনি জাতিসংঘের প্রতি দ্রুত কাশ্মীরের মানবাধিকার ও স্বায়ত্ত্বশাসনের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান। অন্যথায় কারফিউ উঠলে সেখানে রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে বলে জানান।
তার এই ভাষণের পরপরই রাস্তায় নেমে আসে শত শত কাশ্মীরি। তারা আতশবাতি, টায়ার জ্বালিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। এসময় তারা ইমরান খানের পক্ষে স্লোগান দেয়। অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির নমে দেয়া হয় মুর্দাবাদ।
এর জের ধরে শনিবার থেকে রাজধানী শ্রীনগরসহ কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থানে আবারও কারফিউ বলবৎ করেছে মোদি সরকার। বাড়ানো হয়েছে সেনা প্রহরাও।
৪৫ মিনিটের ওই ভাষণে ইমরান খান কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি পরমাণু যুদ্ধে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। তিনি মোদিকে উদ্দেশ্য করে বলেন,‘কাশ্মীরে কারফিউ তুলে নেয়ার পর কি পরিস্থিতি হবে তিনি কি তা আন্দাজ করতে পারেন? তিনি কি মনে করেন, কাশ্মীরের জনগণ ৩৭০ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্তটি মেনে নেবে? তখন কাশ্মীরিরা রাস্তায় বেরিয়ে আসবে। তখন ভারতীয় সেনারা কি করবে? তারা তাদের লক্ষ্য করে গুলি করবে। ফলে সেখানে রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে।’
ইমরান খানের এই ভাষণ কাশ্মীরি জনগণের মন কেড়ে নিয়েছে। শ্রীনগরের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আবদুল মজিদ বলেন, ‘জাতিসংঘে ইমরানের ভাষণ শুনে আমার মন ভরে গেছে। মনে হচ্ছে কেউ একজন আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। কেউ একজন আমাদের পক্ষে কথা বলছেন। আমরা এখন আর একা নই।’
কাশ্মীরিদের এই মনোভাব আঁচ করতে পেরেই ইমরানের বক্তৃতার মাত্র একদিন পরেই উপত্যকার বিভিন্ন অংশে ফের কারফিউ বলবৎ করেছে ভারত। যদিও ভারত তাদের এই পদক্ষেপের সপক্ষে কোনো বিবৃতি দেয়নি। তবে এটা বুঝতে কষ্ট হয় না যে, ইমরানের ভাষণের জের ধরেই কাশ্মীরে নিরাপত্তা জোরদার করেছে ভারত। জাতিসংঘে মোদি ভাষণ দেন মাত্র ১৭ মিনিট, সেখানে তিনি কাশ্মীরের নাম পর্যন্ত উল্লেখ করেননি। এরপরই ডায়াসে আসেন ইমরান খান এবং প্রায় এক ঘণ্টা ধরে কথা বলেন পরিবেশ বিপর্যয়, সন্ত্রাসবাদ, অর্থ পাচার ও কাশ্মীরের ওপর ভারতের নির্যাতন নিয়ে।
তার ভাষণকে স্বাগত জানিয়ে কাশ্মীরের মোহাম্মদ মুস্তফা বলেন,‘ভারতীয় নেতারা কাশ্মীর ইস্যুটিকে নিজেদের আভ্যন্তরীণ ইস্যু হিসাবে উল্লেখ করে থকেন। কিন্তু যখন তারা কোনো আন্তর্জাতিক ফোরামে যান তখন এটিকে দ্বিপাক্ষিক সমস্যা বলে স্বীকার করে নেন। আসলে তারা কাশ্মীরিদের জীবন নিয়ে খেলছে। লাখ লাখ মানুষকে জেলে পুরে রেখেছে।’
ইমরানের ভাষণের পরপরই শ্রীনগরের রাস্তায় নেমে আসে শত শত মানুষ। তারা ইমরান খানের সপক্ষে স্লোগান দেয়। শুক্রবার রাত জুড়ে বিভিন্ন মসজিদের লাউড স্পিকার থেকেও ভেসে আসে গর্জন।
আদিল আহমদ নামে একজন বলেন,‘জনগণ এখন ভারতীয় শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখার যুক্তিসঙ্গত কারণ খুঁজে পেয়েছে। কেননা তারা মনে করছে যে পাকিস্তান কাশ্মীরের জন্য ঝুঁকি নিতে রাজি রয়েছে।’
প্রসঙ্গত, কাশঈর সংকটকে কেন্দ্র করে এর আগে দু’বার যুদ্ধ করেছে ভারত ও পাকিস্তান। গত ফেব্রুয়ারিতেও পুলওয়ামা হামলাকে কেন্দ্র করে দু দেশের মধ্যে আরো একবার যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
শনিবার সকাল ৯টায় শ্রীনগরের লাল চকে ভারত বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন মঞ্জুর আহমাদ (৪৫)। তিনি বলেন,‘আমরা এই সঙ্কটের একটা সমাধান চাই।’
কাশ্মীরের বাসিন্দারা আরো মনে করছেন, কাশ্মীর সঙ্কট সমাধানে জাতিসংঘ এগিয়ে না এলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে, এমনকি দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধও লেগে যেতে পারে।
তবে আপাততঃ ইমরান খানের ভাষণেই তারা দারুণ খুশি। কেননা এখান থেকেই ভারতের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার রসদ পেয়েছেন তারা।
এদিকে নিউ ইয়র্ক থেকে দেশে ফেরার পরও কাশ্মীরি জনগণের স্বাধীনতার পক্ষ নিয়ে কথা বলেছেন ইমরান। খান। তিনি বলেন, জাতিসংঘ কিংবা কোনো দেশ যদি এগিয়ে না আসে তাহলে পাকিস্তান একাই কাশ্মীরিদের পক্ষে লড়ে যাবে। তিনি কাশ্মীরিদের পক্ষে জেহাদ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।
এ পরিস্থিতিতে সোমবার পাকিস্তানের অধীনে থাকা আজাদ কাশ্মীরে সফরে যান ইমরান খান। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসায় থাকা ভূমিকম্পে আহতদের ঘুরে ঘুরে দেখেন।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর আজাদ কাশ্মীরে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ৪০ জন নিহত িএবং আরো ৬৮০ জন আহত হন। এদের মধ্যে ১৭২ জনের অবস্থা ভয়াবহ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।