আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রায় আট দশক পরে আবার সেই দেশভাগের ছায়া ভারত-পাকিস্তানের আটারি-ওয়াঘা সীমান্তে! স্বামী-সন্তান, আত্মীয়-স্বজন ফেলে চলে যেতে হচ্ছে-১৯৪৭ সালের হৃদয় ভাঙা সেই বিচ্ছেদ! একই জঠরে বেড়ে ওঠা জনপদ যখন দুভাগ হয়ে যায়-সেই বুকফাটা দৃশ্যগুলোই আবার অশ্রুসজল করে তুলছে দুই দেশের হতভাগ্য নাগরিকদের! কাশ্মীর হামলার হঠাৎ ঝড়ে আবার ভাঙছে তাদের প্রাণের বন্ধন! ছেড়ে যেতে হচ্ছে শেকড়ের মায়া; আত্মার টান!
সীমান্তে ফের জীবন্ত হয়ে উঠেছে অতীতের সেই বিভক্তি। এক বুক কষ্ট চেপে দেশে ফিরছেন ভারত-পাকিস্তানের নাগরিকরা। তবে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে নয়, আবারও ভাগ হয়েই। নতুন এ স্বদেশ যাত্রাও যেন দেশভাগের সেই ভয়াল স্মৃতিগুলোর এক নতুন অধ্যায়। সেদিনও সীমানার শেকলে থমকে গিয়েছিল সম্পর্কের বাঁধন; আজও সেই বিভাজনেরই প্রতীক হয়ে উঠেছে নিষ্ঠুর সীমান্ত। খবর ভূ-খণ্ডের মালিকানা। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, এপি, ইন্টারনেট।
কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। যা দুই দেশের নাগরিকদের জন্য এক কঠিন বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। রোববার ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিলের পর থেকে ৯ জন কূটনীতিক ও কর্মকর্তাসহ ৫৩৭ জন পাকিস্তানি নাগরিক আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ভারত ছাড়েন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ভারতের বিভিন্ন শহরে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। কেউ ভারতীয় বিয়ে বা অনুষ্ঠানেও যোগ দিতে এসেছিলেন। কিন্তু তাদের সেই আনন্দমুখর মুহূর্তগুলো ধুলোয় মিশে দিয়েছে ভিসা বাতিলের নীতি। সীমান্ত পেরিয়ে আবারও পাকিস্তানে ফিরে যেতে বলা হয় তাদের। নিমিষেই নেমে আসে অন্ধকার। স্বজন হারানোর বেদনা। এদিকে পাঞ্জাবের আন্তর্জাতিক সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে পাকিস্তান থেকে প্রায় ৮৫০ জন ভারতে ফিরে এসেছেন। যার মধ্যে ১৪ জন কূটনীতিক ও কর্মকর্তাও রয়েছেন।
পাকিস্তানি নাগরিক সরিতা কানওয়ার তার পরিবারসহ ভারতে এসেছিলেন। ফেরার সময় তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেছেন, ‘আমার মা ভারতীয় নাগরিক, তাকে আমাদের সঙ্গে পাকিস্তান যেতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা অনেক বছর পর একত্রিত হয়েছিলাম কিন্তু এখন আমাদের ভিসা বাতিল। তিনি আমাদের সঙ্গে যেতে পারছেন না।’ একইভাবে, দুই পাকিস্তানি নববধূ যারা ভারতীয় স্বামীর সঙ্গে নতুন জীবন শুরু করতে এসেছিলেন। তাদের স্বপ্নও ভেঙে চূড়মার হয়ে যায় যখন ভারত সরকার ভিসা বাতিল করে। তাদের মধ্যে একজন বলেছেন, ‘আমরা দুই বছর ধরে একসঙ্গে থাকার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, কিন্তু আসামাত্র কয়েকদিন পরেই আমাদেরকে ফেরত যেতে বলা হচ্ছে।’
সদ্য বিবাহিত জাকিয়া ফেরদৌসি একজন ভারতীয় নাগরিক। কিন্তু তার স্বামী সাহেকজাদা মুনাদি পাকিস্তানি। সাম্প্রতিক উত্তেজনার কারণে ভারত ছাড়তে হয়েছে মুনাদিকে। স্বামীকে বিদায় জানাতে গিয়ে কন্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করা ৭২ বছর বয়সী পাক নাগরিক রেজিয়া সুলতানা সরকারের কাছে আকুতি জানিয়েছেন, যদি আমাদের কোনো ভুল হয়ে থাকে, আমাদেরকে হত্যা করুন, কিন্তু দেশ থেকে বের করে দেবেন না। আমরা এখানেই থাকব, আমরা এখানেই জীবন কাটিয়েছি। ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে এই বিচ্ছেদ শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং একটি মানবিক সংকটের চিত্র।
একদিকে কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত তার প্রতিক্রিয়া হিসাবে পাকিস্তানিদের প্রতি কঠোর হয়ে উঠেছে, অন্যদিকে, পাকিস্তানি নাগরিকদের জীবনে অত্যন্ত কঠিন সময় তৈরি হয়েছে। পরিবারগুলো ভিসা বাতিলের কারণে একে অপরকে ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। বহু মানুষ তাদের প্রিয়জনদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। এই ঘটনার মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় যোগ হলো। যেখানে মানুষের মৌলিক মানবিক অনুভূতি আর রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব জড়িয়ে পড়েছে।
যদি পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়, মোদিকে তার বাড়ি পর্যন্ত ধাওয়া করব: খাজা আসিফ
উল্লেখ্য, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পর পাকিস্তানের সঙ্গে একগুচ্ছ প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তার মধ্যে অন্যতম ছিল আত্তারি সীমান্তের ‘ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট’ (আইসিপি) বন্ধ করা এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের ১৪ ধরনের ভিসা বাতিল করা। ২৭ এপ্রিলের মধ্যে ভারত থেকে পাকিস্তানি নাগরিকদের বেরিয়ে যাওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। তবে পাকিস্তানি নাগরিকদের মধ্যে যারা দীর্ঘমেয়াদি ভিসা বা কূটনৈতিক ভিসা পেয়েছেন তারা এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে আছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।