বিনোদন ডেস্ক : শিল্প ও সংগ্রাম হাঁটে হাত ধরে। মিছিলে নেমে আসে শিল্পী, স্লোগান হয়ে ওঠে গান। অন্যতম উদাহরণ ফারজানা সিঁথি। তার ভেতরে শিল্পী ও যোদ্ধা— দুই সত্তার-ই বাস। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গর্জে উঠেছিলেন রাজপথে। এবার গানচিত্রে ছড়িয়েছেন দ্যুতি। জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর ও নিকিতা গান্ধীর গাওয়া ‘ইচ্ছেরা’ শিরোনামের গানে মডেল হয়েছেন। সেই অভিজ্ঞতা, পথচলা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন সিঁথি।
‘ইচ্ছেরা’ গানটি ইউটিউবে প্রায় এক মিলিয়ন দর্শক পেয়েছে। এতটা সমাদৃত হবে প্রত্যাশা করেছিলেন?
ভালো কিছু হবে এরকম প্রত্যাশা অবশ্যই ছিল। ভালো সংবাদ এটি। কেননা এর আগে মানুষ আমাকে অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে দেখেছে এখন অভিনয়শিল্পী হিসেবে দেখছে। ভালো সাড়া পাচ্ছি।
আসিফ আকবরের গানের মডেল হয়েছেন। সুযোগ হিসেবে দেখছেন নাকি ডিজার্ভ করেন?
আমি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। ২০১৯ থেকে মডেলিং করছি। আত্মবিশ্বাস আছে, আমার একটি কণ্ঠ আছে যার কারণে আপনারা আমাকে অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে চেনেন বা জানেন। আসিফ ভাইয়ের গানে মডেলিং করাকে সুযোগ হিসেবে দেখছি না। কেননা আমার মধ্যে সেই সম্ভাবনা যথেষ্ট আছে। হয়তো আন্দোলনের কারণে আগে জেনেছেন। কিন্তু আজ হোক কাল হোক অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে না জানলেও সিঁথিকে আপনারা অভিনয় শিল্পী হিসেবে জানতেন। তবে সেটা হয়তো আরেকটু দেরিতে স্বাভাবিকভাবে হতো। এত চিৎকার করে না।
যখন প্রস্তাব পেলেন তখনকার অনুভূতি কেমন ছিল?
অনুভূতিটা খুব মিশ্র ছিল। প্রথমত আসিফ ভাই ও তার গান নিয়ে আমাদের সবার একটা নস্টালজিক জায়গা আছে। আমি আমার ভাই-বোনদের প্রেম করতে, ছ্যাকা খেতে দেখেছি আসিফ ভাইয়ের গান দিয়ে। এ কারণে যখন প্রস্তাব আসে তখন বিস্মিত হয়েছি, ভালোও লেগেছে।
আসিফ আকবরকে মানুষ হিসেবে কেমন মনে হয়েছে?
আসিফ ভাই আমার দেখা সেরা মানুষদের একজন। ভীষণ স্পষ্টভাষী। দেশ, প্রকৃতি, মানু্ষ প্রাণী— সবকিছুর প্রতি ওনার প্রেম খুব দারুণ, খুব সুন্দর। উনি আমার আইডল বলতে পারেন। তাকে প্রচণ্ড শ্রদ্ধা করি ও মানি।
ওনার গান শোনা হতো?
ছোটবেলায় গান বলতে আসিফ ভাইয়ের গানই শুনতাম। ভালো লাগা, আবেগ ও পুরনো স্মৃতির জায়গা জুড়ে তিনি আছেন। তিনি দীর্ঘ সময় নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে মন খুলে গান করতে পারেননি। এখন নতুনরূপে দেখছি এবং সেখানে আমি সুযোগ পাচ্ছি। ভালো লাগছে এবং আমি খুব উত্তেজিত।
গানটি প্রকাশের পর কাজের প্রস্তাব কেমন আসছে?
আসিফ ভাইয়ের গানের আগে হাবিব ওয়াহিদ ভাইয়ের একটি মিউজিক ভিডিওতে মডেল হয়েছি। ‘একলা মানুষ’ শিরোনামের। শিগগিরই মুক্তি পাবে। ওই গানের পর আসিফ ভাইয়ের গানের কাজ করেছি। আর কাজের প্রস্তাব এর আগেও এসেছে এখনও আসছে। তবে বেছে বেছে করছি। গতানুগতিক কাজ করার উদ্দেশ্য আমার নেই । সে কারণে ২০১৯ থেকে স্থিরচিত্রের মডেল হিসেবে কাজ করছিলাম। কারণ আমার মনে হয়েছে দক্ষতা বাড়িয়ে উপযুক্ত সময়ে সামনে আসব। সেভাবেই আগাচ্ছি।
পাঠ্যবইয়ে কবি হাসান রোবায়েতের লেখা ‘সিঁথি’ কবিতাটি যুক্ত হয়েছে। জুলাই বিপ্লব নিয়ে লেখা। গুঞ্জন ছড়িয়েছে কবিতাটি আপনাকে নিয়ে লেখা। বিষয়টি আসলে তা না। আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
আমি এখানে সাংবাদিকদের অনেকটাই দোষ দেব। কেননা আপনারা এমন এমন শিরোনাম দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেন যে মানুষ ভেতরে কি আছে না পড়েই অস্থির হয়ে যায়। তবে এই বিষয়টি আমি এখনও জানি না। কেননা অসুস্থ ছিলাম। সামাজিক মাধ্যমে আসতে পারিনি। তাই এরকম কোনো কিছু চোখে পড়েনি। তবে হাসান রোবায়েতের যে সিঁথি শিরোনামে কবিতা আছে মাত্র জানলাম।
আপনার নামের আগে ‘ভাইরালকন্যা’ বিশেষণটি যোগ করা হয়। সংবাদের শিরোনামেও বিষয়টি লক্ষ্যণীয়। কীভাবে দেখেন?
এরকম দুটি সংবাদের শিরোনাম দেখেছিলাম। ওই সংবাদমাধ্যমগুলো এক ঘণ্টার মধ্যে সংশোধন করেছে। আরও যারা এরকম করেছেন তারা না আমার কাছে জেনেছেন না আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন। আমার একটাই কথা— ‘ভাইরালকন্যা’ কিংবা এ ধরনের শব্দ যদি আমার নামের সঙ্গে ব্যবহার করেন তাহলে আমাকে নিয়ে নিউজ করবেন না। যতগুলো সাক্ষাৎকার দিয়েছি সব জায়গায় এটা বলেছি।
সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তার সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে সামাজিক মাধ্যমে বেশ কটাক্ষের মুখে পড়েছিলেন। এতে কি ট্রমার শিকার হয়েছেন?
আমি কোনো ট্রমার মধ্য দিয়ে যাইনি। আমাকে যখন কুইন বলা হয়েছে ক্রাউন পরানো হয়েছে তখনও গায়ে লাগাইনি। যখন গালি দিয়েছে তখনও গায়ে লাগাইনি। এছাড়া আমার বন্ধু-বান্ধব, পরিবার খুবই সাপোর্টিভ। ফলে বিষয়গুলো আমাকে আক্রান্ত করতে পারেনি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আপাদমস্তক কৃষক হতে চাই। চাষাবাদ আমার পরিবার ও শেকড়ের সঙ্গে জড়িয়ে। আমার পূর্বপুরুষেরা সবাই চাষাবাদ করেছেন। একজন সফল ও বৈষম্যহীন কৃষক হব এবং যেসব জায়গায় তারা অধিকার বঞ্চিত ও হয়রানির শিকার সেসব জায়গা নিয়ে কাজ করব। আমার কাছে ভালো থাকা মানে শুধু নিজে না,, দেশ,দেশের মানুষের ভালো থাকা। আমার উদ্দেশ্য একটাই, শান্তিপূর্ণ, ক্ষুধামুক্ত দেশ দেখতেই চাই এবং আমি সেদিকেই এগিয়ে যেতে চাই।
বাংলাদেশ কি আপনার প্রত্যাশা অনুযায়ী হাঁটছে?
বাংলাদেশে যদি এই মুহূর্তে সতেরো কোটি মানুষ থাকে তাহলে বাংলাদেশ ১৭ কোটি প্রকারের। হতে পারে আমার প্রত্যাশা অন্যদের চেয়ে আলাদা তবে আমার দেশকে যেরকম দেখতে চাই যে কারণে রাস্তায় ছিলাম অর্থাৎ আমি আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলাম ফ্যাসিবাদ থাকবে না অধিকার নিশ্চিত হবে বৈষম্য দূর হবে এরকম বাংলাদেশ চেয়ে। ওইরকম বাংলাদেশ পেতে যদি আবার কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় সিঁথিকে আবারও রাস্তায় পাবেন। সূত্র : ঢাকা মেইল
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।