আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাংলাদেশের প্রথম আলো নিন্দে ছাড়া আমার সম্পর্কে কিছু ছাপায় না। পত্রিকাটির বিখ্যাত লেখক আনিসুল হক ধারাবাহিকভাবে ছাপাচ্ছেন লেখকদের সম্পর্কে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। আমার সম্পর্কে লিখতে গিয়ে তিনি একের পর এক কাকে আমি বিয়ে করেছি, তার লিস্ট দিলেন। এটির কি খুব দরকার ছিল? এই লিস্ট তো মৌলবাদি এবং নারীবিদ্বেষীর দল প্রতিনিয়ত আওড়াচ্ছে।
অজানা তো কিছু নয়। আমার সম্পর্কে যার কিছুই জানা নেই, আমার লেখা একটি বাক্যও যে কোনওদিন পড়েনি, সে অন্তত বিয়ে কটা করেছি তা জানে। কটা বিয়ে করলাম মানে ঠিক কটা পুরুষের সঙ্গে শুলাম। লোকের আকর্ষণ ওই শোয়া ব্যাপারটায়। পুরুষ হাজার মেয়ের সঙ্গে শুলেও একটি মেয়ে সারাজীবন একটি পুরুষের সঙ্গে শোবে, এটিই লোকেরা জানে এবং মানে।
এটির অন্যথা হতে দেখলে তারা অবাধে বেশ্যা বলে ডাকবে মেয়েদের, তবেই না তারা পুরুষ! আনিসুল হক নিশ্চয়ই বোঝেন, ওইসব দু’দিনের বিয়ে, যদি সত্যিই ওগুলোকে বিয়ে বলিই (আইনের চোখে সম্ভবত ওগুলো বিয়ে ছিল না, যেহেতু কাবিন বলে কিছু ছিল না ওসবে), আমার জীবনে নিতান্তই অর্থহীন ছিল। কিন্তু অর্থহীন ব্যাপারটিকে একজন লেখকের মূল্যায়ন করতে গিয়ে বড় অর্থপূর্ণ করে তুলেছেন।
আনিসুল হককে যদি আজ আর্থার মিলার সম্পর্কে লিখতে বলা হয়, তবে তিনি তাঁর বইগুলো পড়বেন, তারপর তাঁর লেখা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা লিখবেন। তিনি কিন্তু একের পর এক আর্থার যে বিয়ে করেছেন, সেসবের দীর্ঘ বর্ণনা করবেন না। কেন করবেন না? আর্থার মিলার পুরুষ, সে কারণে করবেন না।
পুরুষ-লেখক কটা বিয়ে করলেন, কজনের সঙ্গে শুলেন, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। যদি তিনি চিত্রপরিচালক মার্টিন স্করসেসে বা জেমস ক্যামেরন সম্পর্কে লেখেন, তিনি তাঁদের সবগুলো ছবি দেখে তারপর সেসবের ওপর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করবেন। স্করসেসে বা ক্যামেরন পাঁচটি করে বিয়ে করেছেন, এটি আনিসুল হকের কাছে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য বিষয় হবে না।
একই রকম তিনি যদি সমরেশ বসুকে নিয়ে লেখেন, তাঁর লেখার বিষয় হবে তাঁর লেখা, তাঁর বিয়ে নয়। যদি হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে লেখেন, তিনি তাঁর লেখা উপন্যাস, তাঁর নাটক নিয়ে লিখবেন। ক’দিন হুমায়ুন আহমেদ কাকে নিয়ে কোথায় গিয়েছেন, কাকে আবার টুপ করে বিয়ে করে ফেলেছেন, এগুলো প্রধান বিষয় হবে না তাঁর লেখার। আমাকে নিয়ে লিখতে গিয়ে সবচেয়ে মূখ্য করেছেন আমার বিয়ে, সবচেয়ে গৌণ করেছেন আমার লেখালেখি। আমার লেখা ৪৫টি বইয়ের একটিও পড়ে দেখার প্রয়োজন তিনি মনে করেননি।
আমি যে মানুষ হিসেবে উদার, বিনয়ী, বন্ধুবৎসল, আমার সেন্স অব হিউমার ভালো, আমার লেখার ক্ষমতা ভালো, আমি বিপ্লবী, সংগ্রামী, আপোসহীন, এসব তাঁর চোখে পড়েনি। চোখে পড়েনি সমাজের মেয়েরা যে আমার লেখা পড়ে জেগে উঠেছে, সচেতন হয়েছে, সেসবের কিছুই। পুরুষ-লেখক হলে এসব চোখে পড়ে। কারণ পুরুষ-লেখকরা তো লেখক, যৌ না ঙ্গ নয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।