আমি ঢাকার ডন, শীর্ষ সন্ত্রাসী কে এম শাহাদত বলছি। আপনাকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে। আপনি কলম চালান। আর আমরা লোহা লক্করের অস্ত্র চালাই। যার ভেতরে বুলেট থাকে। শোনেন, আপনি পুলিশ, র্যাব, আর্মি, ডিবি, বিডিআর সবারে ইনফরমেশন দিয়া রাহেন। মামলা করে রাখেন। ওগরো দিয়া প্রটেকশন দিয়া রাখেন। পারলে টেকায়েন। আমি আপনার আদরের সন্তান একটা তুলে নিয়ে ২০ লাখ টাকা নেব। যদি আমি নিতে পারি তাহলে আমি মানুষের বাচ্চা। তা না হলে আমি জানোয়ারের বাচ্চা।
এই ধরনের হুমকি দিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার এক শিক্ষকের কাছে গত রবিবার সকালে শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের নামে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে। সেদিনই মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও সমাজক কর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রাজ্জাক মোহাম্মদপুর থানায় একটি জিডি করেছেন।
তিনি জিডিতে উল্লেখ করেছেন, সকাল সোয়া ১১টার দিকে তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে একটি ০১৬৬০২০০৩০৪ নম্বর থেকে ফোন আসে। তখন ওই নম্বর থেকে অপরিচিত ব্যক্তি তার কাছে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অপারগতা জানালে তাঁর ও তাঁর পরিবারের ক্ষতি করবে এবং ছেলে ও মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে ২০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করার হুমকি দেয়।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি আবদুল লতিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওই শিক্ষক থানায় একটি জিডি করেছেন। আমরা ফোনকারীদের ধরার চেষ্টা করছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এক সময় এমন ফোনে চাঁদাবাজি বেশি ছিল। এখন কমেছে। এরা প্রতারক। সাধারণ মানুষের নম্বর সংগ্রহ করে চাঁদা দাবি করে। প্রথমে ৫-১০ লাখ চায়। শেষ পর্যন্ত ৫ হাজারও নেয়। যারা প্রতরণা বুঝতে পারেন তাদের কাছ থেকে নিতে পারে না। তবে যারা ভয় পায় তাদের এরা পেয়ে বসে।’ আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যে ফোন থেকে ওই শিক্ষককে ফোন করা হয়েছে সেটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তবে এদেরকে আমরা গ্রেপ্তারের চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
নিচে শিক্ষক আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচয়দানকারী শাহাদত ও নবী উল্লাহ নবীর কথোপকথন তুলে ধরা হলো :
(শিক্ষক আবদুর রাজ্জাকের কাছে ফোন আসে)
রাজ্জাক : হ্যালো স্লামালেকুম
নবী : স্লামালেকুম।
রাজ্জাক : কে বলছেন প্লিজ।
নবী: জ্বি আবদুল রাজ্জাক সাহেব…
রাজ্জাক : জ্বি জ্বি
নবী : (অস্পষ্ট) …ভাইজান, ভালো আছেন আপনি?
রাজ্জাক : জ্বি ভালো আছি। কে বলছেন?
নবী : আলহামদুলিল্লাহ অবশ্য বলব, আমি নবী উল্লাহ নবী বলছিলাম। আপনি কই আছেন এখন ভাই?
রাজ্জাক : কে বলছেন নবিরুল ইসলাম?
নবী : আমি নবী উল্লাহ নবী। মোহাম্মদপুরের নবী।
রাজ্জাক : নামটা আমার পরিচিত। কিন্তু চিনতে পারছি না আরকি।
নবী : আমি মোহাম্মদপুরের পিসি কালচারের নবী উল্লাহ নবী।
রাজ্জাক : জ্বি জ্বি বলেন।
নবী : ভাই, আপনার সাথে কথা একটু কথা বলবে আমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই ডন শাহাদত ভাই। ঢাকা আন্ডার ওয়ার্ল্ডের ডন কে এম শাহাদত সাহেব।
রাজ্জাক : ওরে বাপরে এরকম লোকের সঙ্গে আমি কি কথা বলব, আমি নিজেই জানি না। ঢাকার আন্ডার ওয়ার্ল্ডের ডন।
নবী : জ্বি আপনি ভাই কোনো পাঠ করে আমাদের সাথে কোনো লাভ হবে না ভাই, ভাই হিসাবে বলছি।
রাজ্জাক : আপনাকে চিনি না জানি না। আমারতো ভয়ও লাগে। আপনি মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজে আসেন কথা বলি।
নবী : আমি সেটা জানি কোথায় যাইতে হবে আপনার সাথে জানি। আগে বড় ভাইকে সালাম দিয়া কথা বলেন বড় ভাইয়ের সাথে। দাদা কথা বলেন রাজ্জাক ভাইয়ের সাথে।
রাজ্জাক : আচ্ছা ঠিক আছে।
(এ পর্যায়ে শাহাদতের কাছে ফোন দেয় নবী)
শাহাদত : হ্যালো।
রাজ্জাক : আসলামু আলাইকুম।
শাহাদত : আলাই..কুম .. আস সালাম। কেমন আছেন।
রাজ্জাক : জ্বি ভালো আছি। আপনি কে বলছিলেন?
শাহাদত : আমি শাহাদত কথা বলছিলাম ভাই।
রাজ্জাক : পিসি কালচার থেকে?
শাহাদত : আমি শীর্ষ সন্ত্রাসী কে এম শাহাদত ভাই।
রাজ্জাক : এর ধরনের পরিচয় দিলেতো ভাই খারাপ লাগে। আমরাতো শিক্ষক মানুষ।
শাহাদত : আপনি কলম চালান। আর আমরা লোহা লক্করের অস্ত্র চালাই। যার ভেতরে বুলেট থাকে।
রাজ্জাক : এ ধরনের কথা আমাকে বলছেন কেন?
শাহাদত : আপনার একটু হেল্প আমাদের করতে হবে।
রাজ্জাক : কি হেল্প?
শাহাদত : অর্থনৈতিক হেল্প, টাকা দিয়ে হেল্প করতে হবে। চাঁদা দিয়ে হেল্প করতে হবে।
রাজ্জাক : আমি শিক্ষক মানুষ। আমার দেয়ার ক্ষমতা নেই।
শাহাদত : তাই, ভদ্রভাবে আপসে সুসম্পর্ক …
রাজ্জাক : এ ধরনের কোনো হেল্প করতে পারব না। আমি ক্ষমা প্রার্থী আপনার কাছে।
শাহাদত : কেন ভাই?
রাজ্জাক : শিক্ষক মানুষ কষ্ট করে চলি।
শাহাদত : আমি সবে মাত্র আপনার কছে টাকা চাইছি, টাকার অংক বলি নাই।
রাজ্জাক : টাকার অংক বলার দরকার নাই। আমি আপনাকে হেল্প করতে পারব না।
শাহাদত : টাকা দিতে হবে ১০ লাখ।
রাজ্জাক : আমি কিছুই করতে পারব না। এ ধরনের দাবি করবেন না।
শাহাদত : দিতে হবে।
রাজ্জাক : পারলে আপনি নিবেন।
শাহাদত : আপনি চ্যালেঞ্জ করলেন?
রাজ্জাক : চ্যালেঞ্জ না। আমি টাকা দিতে পারব না।
শাহাদত : চ্যালেঞ্জটা কেন করলেন। (ধমক) কথা কম বলেন।
রাজ্জাক : আপনি আন্ডার ওয়ার্ল্ডের কিং হন যেই হোন কলেজে এসে কথা বলেন। আপনি ফোনে বলেন কেন?
শাহাদত : আপনারে বলাইতাছি। আপনার বাসায় বসে মিটিং করব।
রাজ্জাক : আমার বাসায় আসবেন কেন?
শাহাদত : শোনেন, আপনি পুলিশ, র্যাব, আর্মি, ডিবি, বিডিআর সবারে ইনফরমেশন দিয়া রাহেন। মামলা করে রাখেন। ওগরে দিয়া প্রটেকশন দিয়া রাখেন। পারলে টেকায়েন। আমি যদি পারি আপনার আদরের সন্তান একটা তুলে নিয়ে ২০ লাখ টাকা নেব। যদি আমি নিতে পারি তা হলে আমি মানুষের বাচ্চা। তা না হলে আমি জানোয়ারের বাচ্চা।
রাজ্জাক : হঠাৎ আপনি আমার পিছে লেগে গেছেন কেন?
শাহাদত : আপনি ফোনটা রাখেন। আপনি পুলিশ র্যাব দিয়া গার্ড রাইখেন। আপনার বাসায় মিটিং কইরা টাকা নিব।
রাজ্জাক : আপনাকে আমি চাঁদা দেব কেন?
শাহাদত : কেন দেবেন সেটাই দেখাব আমি। কেন দিবেন সেটাই দেখাব।
রাজ্জাক : রাখি। আসলামু আলাইকুম।
শাহাদত : অলাইকুম সালাম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।