জুমবাংলা ডেস্ক: বহু মানুষের ভিড়ে বাবার কাঁধে চড়ে উঁকি দিচ্ছিল ছোট্ট ৬ বছরের ছোট শিশু জয়া। রিটজ কার্লটনের বলরুমে কালো কোট পরা অসংখ্য মানুষের ভিড়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে এসেছে সে। ‘আমি চেয়েছিলাম, সে এক নজর প্রধানমন্ত্রীকে দেখুক।’-কথাটি বলছিলেন জয়ার বাবা আব্দুল্লাহ নিয়ামি। উত্তর ভার্জিনিয়ায় গেল সপ্তাহে এই বিরল দৃশ্য দেখার সুযোগ পায় আমেরিকা। যেখানে একজন নারী সরকার প্রধানকে দেখতে ভিড় জমান অনেকেই, যা পেতে এখনও অপেক্ষমাণ অধিকাংশ মার্কিন নাগরিক।
রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগদানের পর নর্দান ভার্জিনিয়ায় থাকার সময় এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শক্তি-সাহসের প্রতিচ্ছবি তিনি। রাশিয়ার জনসংখ্যা থেকে বেশি একটি দেশকে দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব দেওয়া এবং ২০ বারের বেশি হত্যাচেষ্টার শিকার হওয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু একজন রাষ্ট্রপ্রধানই নন, এর পাশাপাশি একজন দাদীও। চলতি বছর ৭৬তম জন্মদিন পালন করছেন তিনি। লন্ডন শহরের পাশেই এক শহরে ছেলে ও নাতি-নাতনিদের সঙ্গে জন্মদিন পালন করবেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী যেমন, তেমনই একজন দাদিও। আমি আমার নাতি-নাতনিদের জন্য রান্না করি। চিকেন বিরিয়ানি বানাই। আর আমার ছেলের বাসায় এ জন্য আলাদা রান্নাঘরও আছে।
শেখ হাসিনার সফরকালে তার কাছ থেকেও এসব গল্প শুনতে পাই। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি একথাগুলো বলেন।
একটি চমৎকার সুন্দর কক্ষে ওই সাক্ষাৎকারের সময় সঙ্গে একজন অনুবাদক ও স্টাফ প্রধান ছিলেন। এ ছাড়া দেয়ালে ছিল তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বড় ছবি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের ১৭জন সদস্যসহ তাকে হত্যা করা হয়েছিল। তবে পিতার রাজনৈতিক আদর্শকে ধারণ করে শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
সম্প্রতি জাতিসংঘ অধিবেশনে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘শরণার্থী জীবন ভালো নয়। তারা নিজের দেশে ফিরতে চায়।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও অভিবাসীদের নিয়ে সংকট চলছে এমন প্রসঙ্গ তুললে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকার অভিবাসীদের তুলনা করা চলে না। তাদের প্রচুর জমি আছে। ফাঁকা জায়গা আছে। তাদের তো অভিবাসীদের নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর দেশ। কিন্তু আমাদের জমি কম। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের একটা রাজ্যের সমান।’
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক নানা তদন্তের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এছাড়া তিনি নিজের দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে কঠোরতার জন্যও পরিচিত। ২০১৫ সালে সন্ত্রাসবাদ দমনে এমন কঠোর অবস্থানের কারণে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছ থেকেও শুভেচ্ছা পেয়েছিলেন।
সম্প্রতি ‘হুম! ছেলে’ শিরোনামে একটি ‘মিম পোস্ট’ ছড়িয়ে পড়ে। এটিকে ইতিবাচক হিসেবেই নিয়েছেন অনেকে।
শেখ হাসিনা এক বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘নারীরা পুরুষের চেয়ে ভালো।’ এ মন্তব্যের পর মুচকি হেসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। পরে এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, বাংলাদেশের দারিদ্রতা, শিক্ষার সংগ্রামে নারীরা যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন সেটি সত্যিই বড় একটি বিষয়। তাদের স্থবিরতা দেশের অগ্রগতিকে থামিয়ে দেবে।
গত এক দশকে শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি, আবাসন সুবিধা ও দারিদ্র্যতা দূরীকরণে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘দেশে এখন কুঁড়েঘর নেই। সাধারণ কাঠামোর ঘরও এখন ঢেউ টিনের ছাঁদ ও ইটের দেয়ালের ঘর। আর সেগুলোও দেওয়া হয়েছে নারীদের নামে। ফলে কোনো পরিবার যদি আলাদা হয়ে যায়। তাহলেও ঘরটি কিন্তু নারীই পাবে, পুরুষ নয়।’
বিশ্বব্যাংককে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশের জন্ম হয় তখন দেশটি ছিল দরিদ্র। সেখান থেকে এখন দেশটি নিম্ন মধ্যম আয়ের অর্থনীতিতে পৌঁছেছে। স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন, আবাসন নিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে নারীদের বিনিয়োগ দেশকে উন্নত করতে সহায়তা করেছে।
গত সপ্তাহে জাতিসংঘে ভাষণ দেওয়ার পর তিনি স্থানীয় আদিবাসীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে মনস্থির করেন।
রিটজ কার্লটনের বলরুমে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ইউসুফ চৌধুরী। ৬৬ বছর বয়সী ওই বয়োজ্যেষ্ঠ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি বলেন, আমি সকাল ৬টায় বোস্টনের উড়োজাহাজে উঠে পড়ি। পরে এখানে চলে আসি।’
প্রধানমন্ত্রীকে ২০বার হত্যাচেষ্টার কথা স্মরণ করে উদ্বিগ্ন ছিলেন নিরাপত্তাকর্মীরাও। তবে প্রধানমন্ত্রীর আগমনে উচ্ছ্বসিত ছিলেন হোটেলকর্মীরা। কয়েকঘণ্টার আয়োজনে সেখানে প্রায় ২০০ জন অতিথি অংশ নেন। শেষ পর্যন্ত খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই তাদের সবার উদ্দেশ্যে কথা বলবেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মালিহা জামান নামে এক নারী বলেন, ‘অবশ্যই তাকে একবার দেখার জন্য এসেছি। তিনি এমন এক নারী যিনি আমাদের অনুপ্রেরণা।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী শিক্ষার জন্য যেই উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তার কল্যাণেই বর্তামানে মাস্টার্স শেষ করে ভার্জিনিয়ায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজের সুযোগ পেয়েছেন মালিহা।
শাহেদা পারভীন নামে আরেকজন বলেন, ‘তিনি প্রবীণদের কথা ভাবেন, শিক্ষা নিয়ে ভাবেন। তিনি যোগাযোগ বৃদ্ধিতে কাজ করেছেন। একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু করেছেন। তিনি শিশুদের সম্পর্কে চিন্তা করেন, তিনি গর্ভবতী মহিলাদের সম্পর্কে অনেক যত্ন নেন। যেই বিষয়গুলো নারী হিসেবে আমাদের ভাবায়।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।