জুমবাংলা ডেস্ক : কুড়িগ্রামে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে গভীর রাতে ঘর থেকে ডিসি কার্যালয়ে নিয়ে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগে সদ্য প্রত্যাহার হওয়া কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন নিজেকে মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত বলে জানিয়েছেন।অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগানের বাড়িতে মধ্যরাতে হানা এবং তাকে নির্যাতনের ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন তিনি।
কুড়িগ্রাম থেকে চলে যাওয়ার আগে তিনি নিজের ফেসবুকে কুড়িগ্রামবাসী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, সহকর্মী ও সুধীজনদের উদ্দেশে স্ট্যাটাস দিয়ে এ দাবি করেন। ওই স্ট্যাটাসে কুড়িগ্রামে থাকাকালীন নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া চান সুলতানা পারভীন। এ দিকে অভিযুক্ত সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। জামিনে মুক্ত হওয়ার পর সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে ফোন দিয়েছিলেন সুলতানা পারভীন। নিজেকে রক্ষায় মিডিয়ার সামনে আরিফকে কথা না বলার জন্য অনুরোধও করেছিলেন তিনি। আরিফের সঙ্গে ডিসি সুলতানা পারভীনের কথোপকথনের ওই অডিও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
সোমবার দেয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসে সুলতানা পারভীন বলেন, ‘মোবাইল কোর্ট পরিচালনা নিয়ে সৃষ্ট সম্প্রতি বিভিন্ন মিডিয়ায় পরিবেশিত ও প্রকাশিত সংবাদ বিষয়ে আমার অবস্থান এবং কুড়িগ্রাম জেলায় দু’বছর কর্মকালে আমার কতিপয় গৃহীত উদ্যোগ অবহিত করছি। গত ১৩ মার্চ দিবাগত রাতে নিয়মিত কার্যক্রমের আওতায় কুড়িগ্রামে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চাহিদার প্রেক্ষিতে ৬ জন পুলিশ, ৫ জন আনসার এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ইন্সপেক্টরসহ ৩ জন এবং এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স অভিযানের অংশহিসেবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। আমি পরদিন ১৪ মার্চ সকালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও আদেশের বিষয়টি অবহিত হই। সংশ্লিষ্ট এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই। তিনি যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে মর্মে আমাকে অবহিত করেন। অভিযান এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং এ বিষয়ে আমাকে দায়ী করে যে সংবাদ প্রকাশিত ও পরিবেশিত হচ্ছে তাতে আমি প্রচণ্ডভাবে মর্মাহত।’
নিজের সম্পৃক্ততা ছিল না দাবি করে সুলতানা পারভীন বলেন, ‘নিয়মিত কার্যক্রমের আওতায় অভিযানটি পরিচালিত হয়, যাতে আমার সামান্যতম কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। কিন্তু আমাকে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে এবং হস্তক্ষেপের বিষয়টি উল্লেখ করে নিষ্ঠুরভাবে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে। অভিযান পরিচালনাকালে যদি সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট কোনো পদ্ধতিগত ভুল করেও থাকে, সেটির দায়ভার কি সরাসরি আমার ওপর বর্তায়? মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং সবার প্রতি বিষয়টি ভেবে দেখার অনুরোধ রইল। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মিডিয়ায় আমাকে দোষী করে যেভাবে একপাক্ষিকভাবে গত তিনদিন ধরে যে প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন অসত্য ও অশালীন ভাষায় মন্তব্য করা হচ্ছে, যা দেখে আমি বিস্মিত, হতবাক। শুধু তাই নয়, নতুন নতুন কৌশল সৃষ্টি করেও আমাকে হ্যারেজ করার চেষ্টা চলছে, যে কারণে আমি মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত।’
পুকুর সংস্কারের বিষয় উল্লেখ করে সদ্য প্রত্যাহার হওয়া কুড়িগ্রামের ডিসি বলেন, ‘পুকুরটির সংস্কারকালে দুয়েকজন মানুষ পার্ক-পুকুরটি সুলতানা সরোবর নামে নামকরণের লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার পোস্ট দেয়। ওই পুকুরটি নিজের নামে নামকরণে আমার কখনই কোনো খায়েশ ছিল না কিংবা এখনও নেই। পুকুরটি পার্ক-পুকুর নামেই আছে। কিন্তু এই পুকুরটির নামকরণকে কেন্দ্র করে বিভিন্নভাবে প্রোপাগান্ডা চালানো হয়েছে এবং আমাকে বারবার অপবাদ দেয়া হচ্ছে। ২০১৮ সালের ৩ মার্চ এ জেলায় যোগদানের পর থেকে জেলার সার্বিক আর্থ-সামাজিক এবং মানবিক উন্নয়নে যে সব কর্মসূচি গ্রহণ করেছি এবং বাস্তবায়ন করেছি তার সুফল সাধারণ জনগণ বর্তমানে ভোগ করছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। গত দু’বছরে এ জেলার উন্নয়ন এবং নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির যে সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করেছি একটি মাত্র ঘটনাকে কেন্দ্র করে তা কখনও ধূলিস্যাৎ হতে পারে না। এ বিষয়ে সবার সুবিবেচনা আশা করছি।’
নিজ কর্মকালীন নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি উল্লেখ করে সুলতানা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমার কর্মের মাধ্যমে এ জেলার অগণিত মানুষের শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা পেয়েছি। জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের ছয় মাসের মধ্যেই গত ২০১৮ সালে আমার বদলির আদেশ হলে তা প্রত্যাহারে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মানববন্ধন, সমাবেশে যে আবেগ এবং ভালোবাসার প্রকাশ ঘটেছে, তাতে সত্যিই আমি মুগ্ধ ও ধন্য। সাধারণ মানুষের এ অবদানে আমার কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পেয়েছিল বহুগুণ। আমি সর্বদাই কুড়িগ্রামকে নিজ জেলা ভেবে জেলার উন্নয়নে আন্তরিকভাবে নিবেদিত থাকার চেষ্টা করেছি। গত দুই বছরে কুড়িগ্রাম জেলার সব উপজেলায় বেশকিছু উন্নয়নের/পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে, যা কেউ অস্বীকার করতে পারেন না। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক নিয়মিত কার্যক্রমের আওতায় পরিচালিত একটি মোবাইল কোর্টের কোনো ভুলকে কেন্দ্র করে সব অর্জন ধূলিস্যাৎ হয়ে যেতে পারে না। মোবাইল কোর্ট ভিন্ন একটি বিষয়। সুতরাং ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকেই একে মূল্যায়ন করা উচিত। সব সাংবাদিক ভাই এবং কুড়িগ্রামের সব মানুষের জন্য আমার আন্তরিক ভালোবাসা ছিল এবং চিরদিন থাকবে। আমার ও আমার পরিবারের জন্য সবার নিকট দোয়া প্রার্থনা করছি। সবাই ভালো থাকবেন। অনিঃশেষ শুভকামনা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।