আমেরিকায় অবৈধভাবে বসবাসরত ১৮ হাজার ভারতীয়কে ফেরাবে মোদি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসরত ১৮ হাজার অভিবাসীকে চিহ্নিত করেছে ভারত সরকার। নথিহীন এসব নাগরিককে নিজ দেশে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

ব্লুমবার্গের সঙ্গে কথা বলা সূত্র জানিয়েছে, ভারত সরকার সেদেশে বসবাসরত বৈধ অভিবাসীদের ভিসা সুরক্ষিত করা এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতেই অবৈধ ভারতীয়দের চিহ্নিত করে নতুন প্রশাসনকে সহযোগিতা করছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে চাপ কমাতে ভারত সরকার এমনটি করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার ব্রিটেনের পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ট্রাম্পের প্রথম নির্বাহী পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ অভিবাসনকে লক্ষ করে তৈরি করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জাতীয় সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা এবং ইউএস-মেক্সিকো সীমান্তে সেনা মোতায়েনের ব্যবস্থা করা।

সূত্রগুলো ব্লুমবার্গকে জানিয়েছে, যদিও এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসকারী ১৮ হাজার ভারতীয় বংশোদ্ভূতকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তবে প্রকৃত সংখ্যা সম্ভবত আরও অনেক বেশি। পিউ রিসার্চ সেন্টারের মতে, দেশটিকে আনুমানিক সাত লাখ ২৫ হাজার অবৈধ ভারতীয় অভিবাসী রয়েছে। আর এই সংখ্যা মেক্সিকো এবং এল সালভাদোরের পরে তাদের তৃতীয় বৃহত্তম দল করে তোলে।

মূলত এ পদক্ষেপের মাধ্যমে নরেন্দ্র মোদি ট্রাম্পের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং ক্ষমতা গ্রহণের পর তাকে শান্ত করার প্রচেষ্টা করছেন। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে এবং তারা নিয়মিত একে অপরকে ‘মহান বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেন। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার যুক্তরাষ্ট্র-ফার্স্ট নীতির অংশ হিসেবে ভারতের জন্য উচ্চ বাণিজ্য শুল্ক আরোপের হুমকিও দিয়েছেন, যা ভারতের জন্য ক্ষতিকর হবে এবং মোদি সরকার কোনো বাণিজ্য সংঘাত এড়াতে মরিয়া বলে মনে করা হচ্ছে।

ad
যদিও ভারত সরকার অবৈধ অভিবাসী ফিরিয়ে আনার সংখ্যা নিশ্চিত করেনি, তবে অবৈধ অভিবাসনের সমস্যা মোকাবিলায় ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার অংশ হিসেবে উভয় পক্ষই অবৈধ অভিবাসন রোধ করার জন্য একটি প্রক্রিয়ায় নিযুক্ত রয়েছে। ভারত থেকে সেদেশে বৈধ অভিবাসনের ক্ষেত্রে আরও সুযোগ তৈরি করার জন্যই এটি করা হচ্ছে।’

জয়সওয়াল জোর দিয়ে বলেন, প্রক্রিয়াটি এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। তিনি বলেন, অক্টোবরে আমেরিকা থেকে শতাধিক অবৈধ ভারতীয়কে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল এবং গত এক বছরে এক হাজার জনেরও বেশি লোককে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ভারত সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার হলো দক্ষ অভিবাসীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এইচ-ওয়ানবি ভিসার মর্যাদা রক্ষা করা, বিশেষ করে প্রযুক্তি এবং প্রকৌশল খাতে আরও বেশি কর্মী সেদেশে পাঠানো। ২০২৩ সালে এইচ-১বি ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ায় প্রায় ৭৫ শতাংশই ছিল ভারতীয়। যদিও কিছু রিপাবলিকান অভিযোগ করেছেন, এই ভিসার ফলে বিদেশিরা এমন মর্যাদাপূর্ণ চাকরি নিতে পারছেন, যা আমেরিকানদের জন্য হওয়া উচিত ছিল।

ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর টেসলা ও স্পেস এক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক এইচ-১বি ভিসা প্রোগ্রামের প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করেন। ইলনের এই আগ্রহের কারণেই ট্রাম্প এই ভিসা আবার চালু করেন।