নিজস্ব প্রতিবেদক: টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে শুরু হয়েছে তাবলীগ জামাতের তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। আজ বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের এই ইজতেমা শুরু হয়।
দেশ-বিদেশের শত শত মুসল্লি ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দানে অবস্থান নিয়েছেন। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়নি।
বিশ্ব ইজতেমায় আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের শুভেচ্ছা এবং ইজতেমার সাফল্য কামনা করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী প্রদান করেছেন।
রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ বাণীতে মুসল্লিদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, ইজতেমা ইসলামের সুমহান আদর্শ জানা, বুঝা ও আমলের পথ সুগম করবে। ইসলাম শান্তি ও মানবতার ধর্ম। ইসলামের সুমহান আদর্শ ও আকীদাকে অনুসরণের পাশাপাশি এর প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে বিশ্ব ইজতেমায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মুসল্লিদের অংশগ্রহণ এক মহতী উদ্যোগ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, ইজতেমা বিশ্বের নানা প্রান্তের মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক ঐক্য, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্যের এক অপূর্ব মিলনক্ষেত্র, যা ইসলামী সমাজ, শৃঙ্খলা, ভ্রাতৃত্ব ও মহানুভবতার এক অতুলনীয় দৃষ্টান্ত।
তিনি বলেন,‘আবহমানকাল ধরে আমাদের লালিত অসাম্প্রদায়িক চেতনা, অকৃত্রিম সরলতা ও অতিথি পরায়ণতা এবং সহিষ্ণুতার আলোকবার্তা ইজতেমায় আগত বিদেশী মেহমানদের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে যাবে।’
১৯৬৭ সাল থেকে প্রতি বছর রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশ ইসলামের মর্মবাণী প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। এ মহান ধর্মীয় সমাবেশ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ ও বিশ্বের সর্বস্তরের মানুষ ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করবে।
আগামী ১৫ জানুয়ারি প্রথম প্রহরে আখেরী মুনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা শেষ হবে। চার দিন বিরতির পর আগামী ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হবে। আগামী ২২ জানুয়ারি প্রথম প্রহরে আখেরী মুনাজাতের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি হবে।
এদিকে, বিশ্ব ইজতেমাকে ঘিরে টঙ্গী ও আশপাশের এলাকায় ধর্মীয় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এরই মধ্যে টঙ্গীর তুরাগ তীরে মুসল্লিদের ঢল নেমেছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে মুসল্লিরা আসছেন বিশ্ব ইজতেমা মাঠে। বিদেশিরাও এসেছেন। শীত উপেক্ষা করে চটের ছাউনির নিচে অবস্থান নিয়েছেন তারা।
এবার ইজতেমার মাঠকে ৯১টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলার মুসল্লিরা তাদের নিজ নিজ জেলার খিত্তায় অবস্থান নিচ্ছেন। ১৬০ একর খোলা ময়দানে বাঁশের খুঁটির ওপর পাটের চট দিয়ে টানানো হয়েছে বিশাল প্যান্ডেল। তবে বিদেশি মেহমানদের জন্য টিন দিয়ে করা হয়েছে আবাসস্থল।
ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দানে ২৫টি দেশের প্রায় দেড় হাজার বিদেশি মেহমান উপস্থিত হয়েছেন বলে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরব্বি ডা. খান মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন জানান।
আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ময়দানের চারপাশে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহ আলম।
পুরো ইজতেমা ময়দানকে তিনটি সেক্টরে ভাগ করে আগত লাখ লাখ মুসল্লিদের নিরাপত্তার লক্ষ্যে ইজতেমার ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ইজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বৃহস্পতিবার থেকে ৫ হাজার ৩০ জন পুলিশসহ র্যাব, সাদা পোশাকধারী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ও আনসার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
মুসল্লিদের নিরাপত্তার প্রয়োজনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরাও প্রস্তুত থাকবে। নিরাপত্তা জোরদার করতে র্যাবের কমিউনিকেশন উইং, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে ১৯টি প্রবেশপথসহ চারপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
এছাড়াও থাকছে মেটাল ডিটেক্টর, নাইটভিশন গগল্স, বাইনোকুলার, বোম্ব ডিসপোজাল টিম, এন্টিটেরোরিজম ইউনিট, হেলিকপ্টার-নৌ টহল, কুইক রেসপন্স টিম (কিউআরটি), ফরেনসিক টিম, সাইবার পেট্রোলিং, ডুবুরি দল, স্টাইকিং ফোর্স, এলআইসি, পিএইচকিউ, এপিসি, জলকামান।
এর পাশাপাশি যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় র্যাবের ইন্টেলিজেন্সের সদস্যরা পুরো ময়দান জুড়ে কড়া নজরদারি থাকবে। প্রতিটি খিত্তায় বিশেষ টুপি পরিহিত ও সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা সদস্যরা অবস্থান করবেন। তারা কোনো প্রকার সন্ত্রাসী তৎপরতার ইঙ্গিত পেলে বিশেষ সংকেতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তৎক্ষণিক অবহিত করবেন। আকাশপথ, স্থলপথ, নৌপথ ও রেলপথ কঠোর নজরধারীর আওতায় থাকবে। আকাশ পথে টহল দিবে র্যাবের হেলিকপ্টার।
এদিকে, জিএমপি কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। সিসিটিভি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার ও রুফটপ থেকে পুরো ইজতেমা ময়দানের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এ ছাড়া বিশেষায়িত টিমসহ প্রতিটি খিত্তায় সাদা পোশাকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। অগ্নিনির্বাপণের জন্য প্রতি খিত্তায় এবার দু’টি করে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখা হবে। তুরাগে নৌ টহল থাকবে।
তিনি আরও জানান, বিশ্বইজতেমা ময়দান ও আশপাশে ১৪টি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ রয়েছে পুলিশের। র্যাবের হেলিকপ্টারে টহল থাকবে। এ ছাড়া ডগ স্কোয়াড টিম, মোবাইল পেট্রোল টিম, বোম ডিসপোজল টিম থাকবে।
এদিকে, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিনের উদ্ধৃতি দিয়ে “দি লাইফ সেভিং ফোর্স বাহিনী” ঢাকা জোন-৩ এর উপ-সহকারি পরিচালক এবং টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো. সফিক বাসসকে জানান, এবারের বিশ্ব ইজতেমা সফল ও স্বার্থক করার লক্ষে টঙ্গী তুরাগ নদীর সুবিশাল ইজতেমা ময়দানকে ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারলেস ফ্রিকোয়েন্সির আওতায় আনা হয়েছে।
তিনি জানান, ইতিমধ্যে টঙ্গীর তুরাগ পাড়ের বিশ্ব ইজতেমায় আগত দেশী বিদেশী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অগ্নিনিরাপত্তার জন্য ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। পুরো ময়দানকে ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারলেস ফ্রিকোয়েন্সির আওতায় আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, অগ্নি দুর্ঘটনা মোকাবেলায় ময়দানের প্রতিটি খিত্তায় ফায়ার এক্সটিংগুইসার, ফায়ার হুক, ফায়ার বিটারসহ দু’জন করে ফায়ার ফাইটার দায়িত্ব পালন করবেন। ইজতেমা মাঠের বিভিন্ন স্থানে ফায়ার সার্ভিসের ৩৬১ জন কর্মকর্তা ও ফায়ার ফাইটার মোতায়েন থাকবে।
তিনি জানান, টঙ্গীর তুরাগ নদীসহ ময়দানের চারপাশে ১৪টি পোর্টেবল পাম্প প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও ময়দানের বিভিন্ন স্থানে ৪টি পানিবাহী গাড়ি, রোগী পরিবহনে ৫টি এ্যাম্বুলেন্স, সহজে বহনযোগ্য স্পীড বোট, পিকআপে ডুবুরীদল, বেশ কয়েকটি টু হইলার, ১৩টি জেনারেটর এবং লাইটিং ইউনিট মোতায়েন থাকবে।
ময়দানে ফায়ার কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও টঙ্গী, উত্তরা ও জয়দেবপুর ফায়ার স্টেশনগুলো স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।