নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে শুরু করে আর্থিক খাতের শীর্ষ পদে যারা আছেন তাদেরকে নীতিমালার আলোকে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে বলেছেন অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, কেউ নিজেকে অনিরাপদ মনে করলে কর্মক্ষেত্রে আসার জন্য জোর করা হবে না। অতীতে কেউ অপরাধ করে থাকলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্ঠা হিসেবে আজ সচিবালয়ে প্রথম অফিস করেন সালেহউদ্দিন আহমেদ।
নিজ দপ্তরে ঢোকার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।
সাবেক এই গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে শুরু করে সকল ব্যাংক ও আর্থিক খাতের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান সচল থাকবে। কেউ চলে গেছেন, কেউ আছেন, এগুলো আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। যারা চার্যে আছেন তারা কাজ করবেন এজ পার শিডিউল, এজ পার রুলস-রেগুলেশন, এজ পার নর্মস। ব্যাংক চলবে, পুঁজিবাজার চলবে, ব্যবসা-বাণিজ্য চলবে, পোর্ট চলবে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অর্থনীতি চলবে। নরমাল ওয়েতে কাজ করলে কোন সমস্যা হবে না। কেউ যদি অতীতে কিছু করে থাকে যথাবিহীত আইনত পদক্ষেপ হবে। জোর করে একে বের করো, ওকে বের করো- ঠিক নয়।
এশিয়ান এইজের সাংবাদিক ডেপুটি গভর্নর, ব্যাংক এমডি থেকে শুরু করে আর্থিক খাতের শীর্ষ কর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে আনলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, তারা নিজেদের নিরাপদ মনে করলে কর্মক্ষেত্রে আসবেন। অনেকে চাপে পড়ে বা স্বেচ্ছায় পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন, গভর্নর পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। এগুলো আমি সিদ্ধান্ত দিতে পারিনা। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শ করেই সিদ্ধান্ত দিতে হবে। আর্থিক খাতের কর্মকর্তাদেরকে বলা হবে, আপনারা নিজস্ব নিরাপত্তার বিষয়টি দেখবেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আসবেন সেটা বলা হয়নি। কেউ অনিরাপদ মনে করলে জোর করতে পারিনা।
দেশ কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ মুহূর্তের মূল কাজ হলো আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করা। আইনশৃঙ্খলা মানে শুধু রাস্তাঘাটের আইনশৃঙ্খলা নয়, বরং ব্যাংক পুরোপুরি চালু করা, বন্দরগুলো অনেকাংশে অচল – সেগুলো চালু করা।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এ ছাড়া সামষ্টিক অর্থনীতিতে যেসব চ্যালেঞ্জ আছে, যেমন মূল্যস্ফীতি, সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে মোকাবিলার চেষ্টা করা হবে। অর্থনীতি মন্থর হতে পারে, কিন্তু থমকে গেলে পুনরায় চালু করতে অনেক সময় লেগে যায়। সুবিধা হলো বাংলাদেশের মানুষের অফুরন্ত কর্মস্পৃহা আছে। গুটিকয়েক মানুষ ছাড়া বেশির ভাগ মানুষই কাজে যোগ দেবেন।
এই সরকারের খুব বেশি দিন ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছা নেই জানিয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভবিষ্যৎ সরকারের জন্য আমরা মসৃণ পথ তৈরি করে যেতে চাই। সে জন্য সাংবাদিকদের সহযোগিতা দরকার। আমাদের কর্মোদ্যোগী মানুষ দরকার। কেবল নির্দেশনা পেলে কাজ হয়ে যাবে, এমন হলে চলবে না।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ভুলত্রুটি হলে সমালোচনা করবেন, কিন্তু অপ্রয়োজনীয় সমালোচনা না করার আহ্বান জানান তিনি।
ব্যাংকিং কমিশন হবে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হোক, এরপর সংস্কারের প্রসঙ্গ আসবে। এখনই সংস্কার শুরু হলে মূল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।
লাইনচ্যুত অর্থনীতিকে লাইনে আনতে কত সময় লাগবে, এমন প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমার মনে হয় না মৌলিক কাজগুলো করতে বেশি সময় লাগবে। অর্থনৈতিক কার্যক্রম ছিল, একেবারে লাইনচ্যুত হয়ে যায়নি। বরং গতি হারিয়ে ফেলেছিল। আমরা গতি বৃদ্ধি করব।’
মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতি ছাড়াও উন্নয়ন কৌশলে ভুল ছিল। মানুষ সামগ্রিকভাবে উন্নয়নের সুফল পায়নি। প্রবৃদ্ধি হয়েছে, কিন্তু তার ফল কে পেয়েছে, কাদের কাছে টাকা গেছে, সেটাই মূল বিষয়। সরকার চায়, সমতাভিত্তিক ও ন্যায্য প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। সব মানুষের জীবন–জীবিকার বিষয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হবে।
গভর্নরের পদত্যাগের প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, গভর্নরের পদ সংবেদনশীল। তিনি পদত্যাগপত্র দিয়েছেন, এ বিষয়ে আগামীকালের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন বা দেশের যেকোনো আইন যথেষ্ট আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু তা মানা হয় না। যাদের মানানোর কথা তাঁরা সেটা করেননি। যাঁদের মানার কথা, তাঁরাও মানেননি।
অর্থ পাচার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা সবাই জানি, এ বিষয়ে তথ্য লাগবে। এর প্রক্রিয়া আছে, তা মেনেই এসব করতে হবে।’
ইসলামী ব্যাংকে সর্ববৃহৎ ঋণ জালিয়াতি, ৩৪০০ কোটি টাকা এস আলমের পকেটে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।