বিনোদন ডেস্ক: সম্প্রতি ভারতজুড়ে মুক্তি পেয়েছে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। সুদীপ্ত সেন পরিচালিত এই ছবিটি দেখে ভারতে নির্বাসিত বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন নিজের ফেসবুকে ছবিটি নিয়ে নিজের মতামত দেন। তার সেই স্ট্যাটাসটি জুমবাংলার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
স্ট্যাটাসে তসলিমা লেখেন, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ দেখা হলো। ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ দেখার সময় যে রকম অনুভূতি, এই সিনেমা দেখার সময় প্রায় একই রকম অনুভূতি আমার। যেন মুসলমান মাত্রই বদের হাড্ডি, মুসলমান মাত্রই আতঙ্কবাদী। পৃথিবীর প্রায় ১.৯ বিলিয়ন মুসলমান যদি জঙ্গি হতো, তাহলে পৃথিবীর কী হাল হতো, তা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারি। মুসলমানদের মধ্যে বেনামাজি, বেরোজদার বহুত, মুসলমানদের মধ্যে ধর্ম না-জানা, ধর্মের নানা রকম রুলস এবং রিচুয়ালস না-পালন করা লোকের সংখ্যাই, আমার বিশ্বাস, বেশি। মেয়েদের সমানাধিকারে আর মানবাধিকারে বিশ্বাস করা শিক্ষিত সভ্য লোকের সংখ্যাও এই সম্প্রদায়ে নেহাত কম নয়।’
যুক্তি দিয়ে তসলিমা নাসরিন লেখেন, ‘এগনোস্টিক আর এথিস্টের সংখ্যাও তো বাড়ছে। এরা ধর্ম ঠিকঠাক না মানলেও এদের মুসলমান বলেই ডাকা হয়, যেমন ইহুদি, খ্রিস্টান, হিন্দু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্ম না মানা লোকদেরও ইহুদি, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ বলে ডাকা হয়। এসব তাদের ধার্মিক পরিচয় নয়, এসব সাংস্কৃতিক পরিচয়।’
ছবিটির মান কেমন সে বিষয়ে এই লেখিকা লেখেন, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ কোনোভাবেই উন্নতমানের ফিচার ফিল্ম নয়। এতে আছে কিছু সত্য তথ্য, আছে অতিরঞ্জন। কারও সংলাপকে স্বাভাবিক এবং স্বতঃস্ফূর্ত মনে হয়নি। আইসিসদের বর্বরতা আর বীভৎসতা নিয়ে এ পর্যন্ত বেশকিছু সিনেমা বানানো হয়েছে, সিনেমাগুলো দ্য কেরালা স্টোরির চেয়ে কিন্তু বেটার।’
‘দ্য পাকিস্তান স্টোরি’ বা ‘দ্য বাংলাদেশ স্টোরি’ বানানো জরুরি উল্লেখ করে তসলিমা নাসরিন আরও লেখেন, ‘কেরালা লিটফেস্টে অংশ নিতে রাজ্যের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা কোঝিকড় বা কালিকটে বেশ কয়েকবার গিয়েছি আমি। কালিকটে, আমি অবাক হয়েছি, অনেক মুসলমান নারী-পুরুষ আমার স্পিচ শুনতে এসেছে, এমন কী আমার অটোগ্রাফ নিয়ে গেছে। আমার নাম ঘোষণা করা সত্ত্বেও মুসলমানরা তসলিমাবিরোধী মিছিল করেনি, মিছিল বরং সেক্যুলার কলকাতায় করেছিল কট্টর মুসলমানেরা। কেরালার ৩২০০০ মেয়ে আইসিসে যোগ দিয়েছে, এই তথ্য সম্পর্কে আমার যথেষ্ট সন্দেহ। দ্য কেরালা স্টোরির চেয়ে জরুরি ‘দ্য পাকিস্তান স্টোরি’ বা ‘দ্য বাংলাদেশ স্টোরি’ বানানো।’
সবশেষ এই ছবির প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ আমার পছন্দের সিনেমা নয়। তাই বলে আমি কিন্তু চাই না এই সিনেমা কোথাও নিষিদ্ধ হোক, কোথাও এর প্রদর্শনী কোনো কারণে বন্ধ থাকুক। এই সিনেমা হয়তো কিছু মানুষকে মুসলিমবিরোধী হতে উদ্বুদ্ধ করবে। অনেক শিল্প সাহিত্যেই কোনো দর্শনের বিপক্ষে, কোনো জাতি বা সম্প্রদায় বা ব্যক্তির কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সমালোচনা থাকে, তাই বলে সেইসব শিল্প সাহিত্যকে ঝেঁটিয়ে বিদেয় করতে হবে কেন! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ওপর তৈরি সিনেমাগুলো দেখে জার্মান জাতির ওপর দর্শকরা ক্ষুব্ধ হতে পারে, তাই বলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ওপর সিনেমা বানানো বন্ধ করতে হবে নাকি! দ্য কেরালা স্টোরি যারা নিষিদ্ধ করতে চাইছে, তাদের ক্ষোভের বারুদে আগুন নিক্ষেপ না করে বরং ‘দ্য ইউপি স্টোরি’ নামে সিনেমা বানান! কেউ তো বাধা দেয়নি।’’
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অভিযোগ এনে ইতিমধ্যে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবিটি তামিলনাড়ু ও পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি কিছু কিছু রাজ্যে ছবিটিকে করমুক্ত করা হয়েছে। শত বিতর্ক ও নিষিদ্ধের মুখে পড়েও ছবিটির আয় ঊর্ধ্বমুখী। গত ৫ দিনে ছবিটির আয় দাঁড়িয়েছে ৫৬.৮৬ কোটি রুপিতে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।