বিজ্ঞানের জগতে আলো নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। বিতর্কের বিষয় হলো আলো কি কণা, নাকি তরঙ্গ? ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জে জে থমসন অনুমান করলেন, কম তাপমাত্রার চেয়ে উচ্চ তাপমাত্রায় ধাতুতে ইলেকট্রনের শক্তি বেশি থাকবে এবং ধাতু থেকে সহজে ও উচ্চগতিতে ইলেকট্রন বেরিয়ে আসবে। কিন্তু মার্কিন বিজ্ঞানী রবার্ট মিলিকানের পরীক্ষায় বিষয়টি ভুল বলে প্রমাণিত হলো।
নির্দিষ্ট কোনো ধাতুর ওপর অতিবেগুনি রশ্মি ফেলে ওই ধাতু থেকে নির্গত ইলেকট্রনের সংখ্যা এবং তাদের গতির ওপর অতিবেগুনি রশ্মির কম্পাঙ্ক ও তীব্রতা কীভাবে প্রভাব ফেলে, তা উদ্ঘাটনের চেষ্টা করলেন লেনার্ড। ঝামেলার শুরু এখানে। বেশ কিছু পরীক্ষায় দেখা গেল, আলোর তরঙ্গ তত্ত্বের সঙ্গে পরীক্ষার ফলাফল মিলছে না। প্রথম অনুমানের কথা ভাবুন: আলো যত উজ্জ্বল, ইলেকট্রন তত দ্রুতবেগে বেরিয়ে আসবে।
কিন্তু লেনার্ড অবাক বিস্ময়ে দেখলেন যে আলোর উজ্জ্বলতা বা তীব্রতার সঙ্গে ইলেকট্রনের শক্তি বা গতিবেগের কোনো সম্পর্ক নেই; বরং নির্গত ইলেকট্রনের শক্তি কম্পাঙ্ক বা আলোকরশ্মির রঙের ওপর নির্ভরশীল। এটি আলোর তরঙ্গ তত্ত্বের অনুমানের একেবারে বিপরীত।
লেনার্ড দেখতে পান, আলোর তীব্রতা বাড়িয়ে ধাতু থেকে ছিটকে বেরোনো ইলেকট্রনের গতি বাড়ছে না। তবে প্রতি সেকেন্ডে নিঃসৃত ইলেকট্রনের পরিমাণ বাড়ছে। সমস্যা হলো, তরঙ্গ তত্ত্ব অনুসারে প্রতি সেকেন্ডে ইলেকট্রনের সংখ্যা বাড়ার কথা আলোর তরঙ্গের কম্পাঙ্কের ওপর নির্ভর করে। পরীক্ষায় আরও দেখা গেল, আলোর কম্পাঙ্ক যদি একটা নির্দিষ্ট মানের নিচে থাকে (যা বিভিন্ন ধাতুর ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম), তাহলে কোনো ইলেকট্রন বেরিয়ে আসে না, আলোর তীব্রতা যা–ই হোক না কেন।
সাগরের ঢেউ বা নুড়ির উপমার ক্ষেত্রে তার মানে দাঁড়াচ্ছে, প্রতি সেকেন্ডে ঢেউয়ের চূড়ার সংখ্যা যদি একটি নির্দিষ্ট মানের নিচে থাকে, তাহলে সুনামির ধাক্কাতেও সৈকত থেকে নুড়িপাথর নড়ানো সম্ভব নয়। কাজেই এখানে আলোর কম্পাঙ্ক শেষ কথা। অর্থাৎ ধাতু থেকে ইলেকট্রন বেরিয়ে আসবে কি আসবে না, তা নির্ভর করে আলোর কম্পাঙ্কের ওপর। সাগরের উপমার ক্ষেত্রে বলা যায়, তরঙ্গ শীর্ষ সংখ্যা যদি প্রতি সেকেন্ডে একটি নির্দিষ্ট সীমার ওপরে থাকে, তাহলে খুব কম বিস্তারের মৃদু ঢেউও সৈকতের নুড়িগুলো ওপরের দিকে ঠেলে তুলতে পারবে।
আর আলোর কম্পাঙ্ক যদি এই সীমার ওপরে থাকে, তাহলে ধাতু থেকে ইলেকট্রন বেরিয়ে আসবে সঙ্গে সঙ্গে। তখন একটুও দেরি হবে না। আলোর তীব্রতা কম হলেও তা ঘটবে। আলোকতড়িৎ ক্রিয়ার এমন ফলাফল আলোর তরঙ্গ তত্ত্ববাদীদের মাথায় ঢুকল না। বিষয়টি অমীমাংসিত রহস্য হিসেবে ঝুলে রইল বেশ কয়েক বছর। ঠিক এ সময় মঞ্চে এলেন আইনস্টাইন। তাঁর কাছে একটা ব্যাখ্যা। কিন্তু সেটা বৈপ্লবিক। অবিশ্বাস্যও বটে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।