জুমবাংলা ডেস্ক: শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী আল্লামা শফী ও বাবুনগরীর পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সদ্য প্রয়াত মহাসচিব আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদী।
মঙ্গলবার ভোরে ‘উম্মুল মাদারিস’ বলে খ্যাত উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার বাইতুল আতিক জামে মসজিদসংলগ্ন একটি কবরস্থানে তাকে (মাকবারাতুল জামিয়া) চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে।
একই কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও আরেক আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া। তিনি জানান, গত সোমবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে এশার নামাজের পর হেফাজতের কেন্দ্রীয় আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর ইমামতিতে মহাসচিব আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদীর জানাজা সম্পন্ন হয়।
এর পর মহাসচিবের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এ সময় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও মহাসচিবের আত্মীয়রা সঙ্গে ছিলেন।
ভোর রাত ৪টার দিকে হেফাজত মহাসচিবের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি হাটহাজারী মাদ্রাসায় পৌঁছার বিষয়টি নিশ্চিত করেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিস। তিনি জানান, হেফাজত মহাসচিবের একান্ত ইচ্ছা অনুযায়ী হাটহাজারী মাদ্রাসার মাকবারাতুল জামিয়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও আরেক আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
এর আগে গত সোমবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদী। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।
গত শনিবার থেকে ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন নুরুল ইসলাম জিহাদী।
তার ছেলে মোর্শেদ বিন নূর জানিয়েছিলেন শনিবার রাত ৯টার দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার বাবাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদী শিক্ষাজীবন সমাপ্তির পর পটিয়া থানাধীন কৈয়গ্রাম মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। ওই মাদরাসায় এক বছর শিক্ষকতার পর বাবুনগর মাদরাসায় আহুত হলে সেখানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত হন।
এরপর বাবুনগর মাদরাসায় কয়েক বছর অধ্যাপনার পর ঢাকার আশরাফুল উলুম বড় কাটারা মাদরাসায় ১৯৮২ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। এ সময়ে তার বাবার মৃত্যুর পর তিনি নিজ বাড়িতে চলে যান ও পুনরায় বাবুনগর মাদরাসায় যোগদান করেন।
১৯৮৪ সালের ১০ জুলাই তিনি ঢাকা জেলার অন্তর্গত খিলগাঁও-এ আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম প্রতিষ্ঠা করেন। অদ্যাবধি তিনি এই মাদরাসার মহাপরিচালক ও শায়খুল হাদিস হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। পাশাপাশি তিনি দারুল উলুম হাটহাজারীর মজলিসে শূরা এবং বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা ও আমেলার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
১৯৭৮ সালে ইসলাম বিদ্বেষীদের প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে তিনি “ইসলামী আন্দোলন পরিষদ” নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার করেছিলেন। তিনি দীর্ঘ সময় ছিদ্দিক আহমদের সাহচর্যে ছিলেন। কাদিয়ানী বিরোধী আন্দোলন ও খতমে নবুয়ত আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যে ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশ’র মহাসচিব হন তিনি।
প্রসঙ্গত রাজধানী ঢাকার খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদী গত বছরের ২৬ ডিসেম্বরে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।