আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ১৯১টি পাজেরোসহ ২২০টি নতুন গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী নির্বাচনে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে যারা দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের জন্য কেনা হচ্ছে এ গাড়িগুলো।
শুধু তাই নয়, আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্যও মিতসুবিশি পাজেরো কিউএক্স-২৪২৭ সিসি মডেলের ৬০টি গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গাড়িগুলো কেনার প্রস্তাবে ইতোমধ্যে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সব মিলিয়ে ২৮০টি গাড়ি কিনতে সরকারের মোট ব্যয় হবে প্রায় ৪৪৫ কোটি টাকা।
বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। তবে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতোমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে বিভিন্ন মহলে।
জানা গেছে, গত ২১ আগস্ট নির্বাচনী কর্মকর্তা এবং আগামী নির্বাচিত সরকারের মন্ত্রীদের জন্য ২৮০টি গাড়ি কেনার প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়ায় এসব গাড়ি কিনবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এদিকে, গাড়ি কেনার এই সিদ্ধান্তে চলতি বছর সরকারের জারি করা পরিপত্র উপেক্ষিত হয়েছে। গত ৮ জুলাই জারি করা পরিপত্রে বলা হয়েছিল, পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সব ধরনের নতুন যানবাহন কেনা বন্ধ থাকবে। তবে পরিচালন বাজেটের আওতায় সরকারি কর্মকর্তা ব্যবহৃত গাড়ি ১০ বছরের বেশি পুরনো হলে অর্থ বিভাগের অনুমতি নিয়ে নতুন গাড়ি কেনা যেতে পারে। তবে পরিবহণ পুলের তথ্য বলছে, মন্ত্রীদের জন্য কেনা গাড়ি ৯ বছরের পুরনো, ফলে এখানে শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে।
এছাড়া, এই বিপুল পরিমাণ গাড়ি কিনতে গিয়ে চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ সংক্রান্ত যে অর্থ বরাদ্দ আছে, তার চেয়ে বেশি খরচ হয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) জন্য প্রতিস্থাপক হিসেবে ১৯৫টি মিতসুবিশি পাজেরো কিউএক্স-২৪২৭ সিসি মডেলের জিপ এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জন্য ২৫টি মাইক্রোবাস কেনায় সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রতিটি জিপের দাম ধরা হয়েছে এক কোটি ৬৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। আর প্রতিটি মাইক্রোবাসের দাম পড়ছে ৫২ লাখ টাকা। এ ধরনের ২২০টি গাড়ি কিনতে সরকারকে খরচ করতে হচ্ছে ৩৪৩ কোটি ২৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
অথচ, চলতি অর্থবছরের বাজেটে যানবাহন অধিদপ্তরের অনুকূলে মোটরযান ক্রয় খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৩২৮ কোটি ৩৩ লাখ ২০ হাজার টাকা।
তার উপর, আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য কিনতে যাওয়া ৬০টি পাজেরো গাড়িতে খরচ হচ্ছে ১০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ২৮০টি গাড়ি কিনতে ব্যয় হবে ৪৪৪ কোটি ৮৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। বাড়তি এই খরচ অন্য খাতের বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে মেটানোর অনুমোদন দিয়েছে অর্থ বিভাগ।
বিশেষভাবে প্রশ্ন উঠেছে মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে। অনেকেই বলছেন, পরবর্তী সরকারের মন্ত্রীসভা যে ৬০ সদস্যেরই হবে, এটা কীভাবে নির্ধারণ করল অন্তর্বর্তী সরকার।
পাশাপাশি এসব গাড়ি এখন কেন কেনা হচ্ছে, সেই প্রশ্নও উঠছে। এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পরবর্তী সরকার বা মন্ত্রীরা কী গাড়ি ব্যবহার করবেন, কী গাড়ি কিনবেন; তার সিদ্ধান্ত বর্তমান সরকার কেন নিচ্ছে? এটা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নয়।
তিনি আরও বলেন, এর মাধ্যমে ব্যয়সাশ্রয়ী পদক্ষেপের পরিপত্র উপেক্ষা করা তো বটেই, একই সঙ্গে প্রশ্ন আসবে, পরবর্তী সরকারের জন্য গাড়ি কেনার দায়িত্বটা অন্তর্বর্তী সরকারকে কে দিয়েছে? অনতিবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করা উচিত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।