জুমবাংলা ডেস্ক : লড়াইটা ছিল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ আর প্রিমিয়ার লিগেরই ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটির মধ্যে। একদিকে ম্যান সিটির বিরুদ্ধে আর্থিক নীতিমালা ভাঙার ১১৫টি ঘটনায় অভিযোগ এনেছে প্রিমিয়ার লিগ, যে মামলার শুনানি শুরু হয়েছে গত মাসের শেষদিকে। অন্যদিকে লিগ কর্তৃপক্ষ ওই অভিযোগ আনার পর সিটি উল্টো লিগের নিয়মের বৈধতা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছে।
সিটির চ্যালেঞ্জের সে শুনানিরই রায় এসেছে গতকাল, কিন্তু আরবিট্রেশন প্যানেলের সে রায় এমনই অবস্থা হয়েছে যে, ম্যানচেস্টার সিটি ও প্রিমিয়ার লিগ – দুই পক্ষই দাবি করছে, রায়ে তাদের জয় হয়েছে!
প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ মূলত টুর্নামেন্টের ‘অ্যাসোসিয়েটেড পার্টি ট্রানজেকশান’ (এপিটি) নীতিমালা ভাঙার ১১৫টি ঘটনা নিয়ে সিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিল। এরপর সেই নীতিমালার বৈধতা নিয়েই পাল্টা চ্যালেঞ্জটা জানিয়েছে সিটি। তবে দুটি আলাদা মামলা, অর্থাৎ প্রিমিয়ার লিগের আইনের বৈধতাকে প্রশ্ন করে সিটির করা এই অভিযোগের সঙ্গে সিটির বিরুদ্ধে প্রিমিয়ার লিগের আনা ১১৫ অভিযোগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
এপিটি কী? সাধারণত ক্লাবের মালিকানার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান বা সিস্টার কনসার্ন ক্লাবের স্পনসর হলে সেক্ষেত্রে ওই চুক্তির অঙ্ক কীভাবে দেখানো হবে, সে ক্ষেত্রে এই নীতিমালা মানার বাধ্যবাধকতা আসে। সিটিকে ঘিরে প্রিমিয়ার লিগের দুটি অভিযোগ ছিল, তারা তাদের মালিক শেখ মনসুরের সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট অন্য প্রতিষ্ঠান ইতিহাদ অ্যাভিয়েশন গ্রুপ ও ফার্স্ট আবুধাবি ব্যাংকের সঙ্গে স্পনরশিপের চুক্তিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বড় করে দেখিয়েছে।
এর প্রেক্ষিতে সিটি প্রিমিয়ার লিগের এপিটি নীতিমালার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছে, প্রিমিয়ার লিগ মূলত ‘গালফ অঞ্চলের দেশগুলো থেকে যেসব ক্লাবের মালিক, তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য’ করছে। এপিটির এই নীতিমালাকে ‘আইনসিদ্ধ নয়’ বলেও জানায় সিটি।
শুনানি শেষে গতকাল রায় আসার পর সিটি দাবি করেছে, তাদের দাবিতে তারা ‘সফল’, যদিও আরবিট্রেশন প্যানেল সিটির অভিযোগের মধ্যে শুধু দুটিকে ঘিরেই প্রিমিয়ার লিগকে তদন্ত স্থগিত রাখতে নির্দেশ দিয়েছে। সে দুটি কী? একটি শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে পাওয়া লোনকে হিসাবের বইতে কীভাবে দেখানো হবে, সে ব্যাপারে। অন্যটি বিনিয়োগের বা স্পনসরশিপ চুক্তির ‘যথাযথ বাজারমূল্য’ বা ফেয়ার মার্কেট ভ্যালু (এফএমভি) নির্ধারণের প্রক্রিয়া কেমন হবে।
সিটি মূলত চেয়েছিল, প্রিমিয়ার লিগের এপিটি ও এফএমভি দুই নীতিমালাই বাতিল করা হোক। কিন্তু আরবিট্রেশন প্যানেল সিটির সে দাবি খারিজ করে দিয়ে বলেছে, প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর লাভের অঙ্ক নির্ধারণ ও ভবিষ্যতের ভিত্তি নিরূপণের ক্ষেত্রে এই দুই নীতিমালা অপরিহার্য।
প্যানেলের রায়ের চুম্বক অংশগুলো হলো –
• প্রিমিয়ার লিগের এপিটি নিয়মটি লিগের ক্লাবগুলোর গঠন ও পরিচালনপ্রক্রিয়া ঠিক রাখার ক্ষেত্রে খুবই দরকারি।
• এপিটির নিয়মের কিছু অংশ আইনসিদ্ধ নয়, সেগুলোর সংশোধন দরকার। সে কারণে ম্যান সিটির দুটি চুক্তির তদন্তকে আপাতত স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, নিয়মের অংশগুলো সংশোধনের পর সংশোধিত নিয়ম মেনে তদন্ত করা হবে।
• ম্যান সিটির যুক্তির পক্ষে সৌদি মালিকানাধীন নিউক্যাসল ইউনাইটেড এবং চেলসি ও এভারটনের উদাহরণ টানা হয়েছে। আর প্রিমিয়ার লিগ মূলত আর্সেনাল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুল, টটেনহ্যাম ও ওয়েস্ট হ্যামের উদাহরণ টেনেছে তাদের যুক্তিতে।
এপিটির যে নিয়মগুলোকে প্রিমিয়ার লিগ আইনসিদ্ধ নয় বলে জানিয়েছে, তার কারণ হিসেবে রায়ে বলা হয়েছে, ‘এই নিয়মে শেয়ারহোল্ডারের কাছ থেকে পাওয়া ঋণের’ ব্যাপারটা হিসেবে নেওয়া হচ্ছে না। এভারটন, ব্রাইটন, আর্সেনাল ও চেলসির মতো ক্লাব তাদের মালিকপক্ষের কাছ থেকে বিনাসুদে চড়া অঙ্কের ঋণ পাচ্ছে। সিটির এমন কোনো ঋণ নেই। সে কারণে যুক্তিটা সিটির পক্ষে গেছে যে, অন্য ক্লাবগুলো এসব ঋণকে ‘ন্যায্য বাজারমূল্যের’ হিসেব থেকে বাদ দেওয়ার কারণে অন্যায্য সুবিধা পাচ্ছে। কারণ ন্যায্য বাজারমূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে এসব ঋণের সুদের হিসেবটাও তো আসত!
দ্বিতীয় যে রায়টি সিটির পক্ষে গেছে, সেটি এপিটির ক্ষেত্রে প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষের এফএমভি নির্ধারণের প্রক্রিয়াকে ঘিরে। রায়ে প্যানেল বলেছে, ক্লাবের যে তথ্যের ভিত্তিতে প্রিমিয়ার লিগ একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাচ্ছে, সে তথ্যের ব্যাপারে ক্লাবকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ না দেওয়া ন্যায়সঙ্গত নয়। এফএমভিকে ঘিরে প্রিমিয়ার লিগের সিদ্ধান্তগ্রহণের পুরো প্রক্রিয়াটাকেই অন্যায্য জানিয়ে রায়ে বলা হয়েছে, প্রিমিয়ার লিগের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সুযোগ সিটিকে দেওয়া হয়নি। প্যানেল আরও বলেছে, ন্যায্য বাজারমূল্য বা এফএমভি নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় সব প্রমাণ হাজির করার দায় ক্লাবের ওপর চাপিয়ে দেওয়াও ঠিক নয়, এ দায় প্রিমিয়ার লিগের।
এ তো গেল সিটির পক্ষে যাওয়া রায়ের হিসাব। রায়ে প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে বড় জয়টা হলো, এপিটির ধারণাটাকে আরবিট্রেশন প্যানেল সমর্থন করেছে। এপিটির এই নিয়মকেই যদি প্যানেলের রায়ে অবৈধ বলা হতো, সে ক্ষেত্রে সিটিসহ নিউক্যাসলের মতো ‘কোনো দেশের সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন’ ক্লাবগুলো নিজেদের ইচ্ছেমতো স্পনসরশিপের চুক্তির অঙ্ক বসানোর সুযোগ পেয়ে যেত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।