বিনোদন ডেস্ক : আসিফ আকবরকে খ্যাতি এনে দিয়েছিল ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’। ২০০১ সালে অ্যালবামটি প্রকাশের পর অডিও ইন্ডাস্ট্রিতে আসিফকে অনন্য এক জায়গা করে দিয়েছিল। অনেকের ধারণা, এই অ্যালবাম দিয়েই গানের জগতে প্রবেশ করেন আসিফ আকবর, আদতে তা নয়। এর আগেও প্লেব্যাকে কণ্ঠ দিয়েছেন; কিন্তু সেভাবে নিজেকে জানান দিতে পারেননি।
সে বছরের ৩০ জানুয়ারি প্রকাশ পেয়েছিল ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’। বাংলাদেশের শ্রোতা তো বটেই, বিশ্বের অন্য দেশের বাংলাভাষীরাও চিনে ফেলেছিল কুমিল্লার এই তরুণকে। এই অ্যালবাম তৈরির নেপথ্যে বেশ কিছু গল্প আছে। সোহেল অটলের লেখা আসিফের জীবনী ‘আকবর ফিফটি নট আউট’-এ সেসব গল্পই আছে। ৩০ জানুয়ারি ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ প্রকাশের ২১ বছর পূর্ণ হলো। এদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অ্যালবামটি তৈরির নেপথ্যে সংক্ষিপ্ত গল্প শেয়ার করেছেন ‘আকবর ফিফটি নট আউট’-এর লেখক। কালের কণ্ঠের পাঠকদের জন্য লেখাটা এখানে শেয়ার করা হলো—
‘ক্ষ্যাপা বাসু’ ছবির গান রেকর্ড হয়েছে। সেটাই বাজছিল স্টুডিও সাসটেইন-এ। ‘জ্বালারে, জ্বালা বড় জ্বালা’—এই জাতীয় কথাগুলো বসিয়ে দেওয়া হয়েছে উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ এ আর রহমানের ‘দিল সে’ গানের সুরের ওপর, হুবহু। বাংলাদেশের যে সংগীত পরিচালক কাজটি করেছেন, তিনিও স্বনামধন্য সুরকার, আলী আকরাম শুভ। গানের কথা লিখেছেন ছবিরই পরিচালক কমল সরকার।
১৯৯৯ সালের শেষ দিকের ঘটনা। স্টুডিওর বাইরে, বারান্দায় বসে সিগারেট টানছিলেন আরেক সংগীত পরিচালক ইথুন বাবু। হিন্দি, উর্দু জনপ্রিয় গানের বাংলা ভার্সন (রিমেক) করে তিনি ইতোমধ্যেই রিমেকারদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। প্রায় ছয় ফুট উচ্চতার ইথুন বাবু চেয়ারে বসে বারান্দার গ্রিলের ফাঁকে পা তুলে সিগারেট টানছিলেন। স্টুডিও থেকে ‘জ্বালারে…’ শুনে তিনি পা নামালেন। কান খাড়া করলেন। মনে মনে ভাবলেন, এই কণ্ঠটা দরকার। ভীষণ দরকার। খোঁজ নিলেন ইথুন বাবু। আসিফ নামের এক ছেলে এই গানে কণ্ঠ দিয়েছে। ডাকলেন আসিফকে।
লিকলিকে গড়নের একেবারেই সাদামাটা চেহারার একটা ছেলে। এতই সাদামাটা যে ইথুন বাবু খানিক অবাক হলেন। এই শরীর থেকে এমন ভরাট কণ্ঠ! বিশেষ ভনিতা না করে ইথুন বাবু জানালেন, আসিফকে নিয়ে একটা অ্যালবাম করতে চান। মৌলিক গানের অ্যালবাম। আসিফের হাতে কোনো অপশন ছিল না। অল্প বয়সে বিয়ে-শাদি করে বিরাট দায়িত্বের বোঝা তার কাঁধে। বাবাও হয়ে গেছেন এরই মধ্যে।
টুকটাক স্টেজ শো করে কিংবা সাউন্ডের বিজনেস করে যেভাবে জীবন যাপন করছিলেন, তা-ও বন্ধ হয়ে গেছে আরেক সংগীত পরিচালক শওকত আলী ইমনের এক ‘অবরোধ’-এ। এই গুণী মিউজিক ডিরেক্টর ‘বিশেষ কারণে’ তার পরিচিত-অপরিচিত সব জায়গায় ‘আসিফ ঠেকাও’ সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছেন। বউ-বাচ্চা নিয়ে তখন আসিফ এই ঢাকাতে অনেকটা অসহায় দিন যাপন করছেন। ঠিক ওই মুহূর্তে ইথুন বাবুর অফার তাঁর কাছে মরুভূমির মধ্যে একপশলা বৃষ্টির মতো মনে হলো।
শুরু হলো ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ অ্যালবামের কাজ। বাংলা সংগীতের ইতিহাসে একটা নতুন অধ্যায়েরও শুরু হলো সেদিন। নানা চড়াই-উতরাই আর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা পেরিয়ে ২০০১ সালের ৩০ জানুয়ারি দেশব্যাপী প্রকাশিত হলো ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’। তার পরের গল্প তো সবার জানা।
আসিফ আকবরের জীবনী গ্রন্থের লেখক সোহেল অটল জানালেন, মূল বই ‘আকবর ফিফটি নট আউট’-এ গানটি তৈরির নেপথ্যে গল্প আরো বিশদভাবে লিখেছেন। ২১ বছর পূর্তি উপলক্ষে সংক্ষেপে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জন্য এই লেখাটি লিখেছেন। ৩১ মার্চ আকবর ফিফটি নট আউট প্রকাশ করার একটা তারিখ নির্ধারণ করেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।