রউফুল আলম : সুইডেনের স্টকহোম ইউনিভার্সিটিতে আমার এক সহপাঠীর নাম ছিলো আন্দ্রিয়াস। খুবই চটপটে স্টুডেন্ট। লম্বা ঝাঁকড়া চুল। কথা বললে মনে হতো যেন বজ্রপাত হচ্ছে। খুবই ভরাট তেজস্বী কণ্ঠ। আন্দ্রিয়াসের সবচেয়ে বড় গুণ ছিলো ক্লাসে প্রশ্ন করা। ও শিক্ষকদের অনেক প্রশ্ন করতো। আমি তো প্রথম কয়েকমাস বেশ কাঁচুমাচু হয়ে থাকতাম।
নতুন পরিবেশে গিয়েছি। তাছাড়া দেশে থাকার সময় ইউনিভার্সিটিতে প্রশ্ন করার তেমন সংস্কৃতি দেখিনি। খুব বেশি প্রশ্ন করার অভ্যাসও ছিলো না। আন্দ্রিয়াস আমার চোখ-মুখ খুলে দিয়েছিলো। মজার বিষয় হলো, কোর্সের পরীক্ষা আসলে আন্দ্রিয়াসকে খুঁজে পাওয়া যেতো না। দুই দুইটা কোর্সের একটার ফাইনাল পরীক্ষাও দেয়নি।
কিন্তু ক্লাস করতো প্রতিদিন। প্রশ্ন করতো। আমি তাজ্জব বনে গেলাম। ওকে বললাম, তুমি পরীক্ষা দাও না কেন? ও বলতো পরীক্ষা আমার কাছে বেশ স্ট্রেসফুল একটা কাজ। আমি পরীক্ষা পছন্দ করি না। বললাম, তুমি তো ক্লাস করো। প্রশ্ন করো। বুঝো। ও বললো, আমি এটা ইনজয় করি। আমি শিখছি, এটাই আসল।
মনে মনে ভাবলাম, তোমার ভাগ্য ভালো তুমি এই দেশে জন্মেছো। ক্লাস করো, প্রশ্ন করো, ইনজয় করো কিন্তু পরীক্ষা দাও না। এই আন্দ্রিয়াস পরে অর্গানিক কেমেস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট ছেড়ে দিয়ে নিউরোসাইন্সে গিয়েছিলো। সেখানে গিয়ে এডভান্স কোর্স করে। সেগুলো তার আরো ভালো লাগে। পরীক্ষা দেয়। কিন্তু পরীক্ষায় যে খুব ভালো করতো তা না।
খুবই ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ছিলো ও। কিন্তু পরীক্ষা পছন্দ করতো না। পরীক্ষায় ভালো করতো না। থিসিস করার সময় ওর সুপারভাইজর ওকে খুব পছন্দ করে। পরে সেই ছেলেই নিউরোসাইন্স থেকে পিএইচডি করে ইউসি-বার্কলেতে এসেছিলো পোস্টডক করতে।
আমাদের দেশেও অনেক স্টুডেন্ট পরীক্ষা দিতে পছন্দ করে না। হয়তো কোনো বিষয় তার ভালো লাগে না, তাই নাম্বার কম পায়। জিপিএ কম পায়। কিন্তু আমরা কখনো তাদের বুকে কান পেতে শুনি না তাদের কী সমস্যা। আমরা তাকে বাতিলের খাতায় ফেলে রাখি। আহা, সম্পদের কী অপচয়। লেখক : গবেষক রউফুল আলম, ফেসবুক থেকে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।