বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার অঙ্গনে এক নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে। ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ)-এর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে উপাচার্য অধ্যাপক আবুল কাশেম মিয়া এবং আরও ১১ জন শিক্ষক স্বেচ্ছায় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের আবেগপ্রবণ আন্দোলন এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পর্কের গভীর দিক ফুটে উঠেছে এই ঘটনায়। শিক্ষক শব্দটি মানে শুধু একজন পড়ানোর ব্যক্তি নয়, বরং শিক্ষার্থীদের জীবন গঠনের পথপ্রদর্শকও। তাই এমন ঘটনাগুলো আমাদের হৃদয়ে গভীর রেখাপাত করে।
ইউআইইউতে শিক্ষক পদত্যাগের পটভূমি
শিক্ষক সমাজের এক অমূল্য সম্পদ। তবে ইউআইইউতে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ শিক্ষাক্ষেত্রের এক সংকটময় পরিস্থিতি তুলে ধরেছে। জানা যায়, সিএসই বিভাগের এক শিক্ষার্থীর বাবার মৃত্যুজনিত কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরীক্ষা দিতে না পারার পরও অতিরিক্ত ফি দিয়ে পুনরায় পরীক্ষা দিতে বলা হয়। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে আন্দোলন শুরু করে।
Table of Contents
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত পদত্যাগপত্রে উপাচার্য অধ্যাপক আবুল কাশেম মিয়া উল্লেখ করেছেন যে, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ রক্ষার্থে দায়িত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পাশাপাশি ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্স রিসার্চের (আইএআর) নির্বাহী পরিচালক এম রিজওয়ান খান, সিএসই বিভাগের প্রধান নুরুল হুদা, ইইই বিভাগের প্রধান কে. মাশুকুর রহমানসহ মোট ১২ জন শিক্ষক পদত্যাগ করেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি ও শিক্ষকদের পদক্ষেপ
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তারা কেবল উপাচার্য এবং সিএসই বিভাগের প্রধানের অপসারণ চেয়েছিলেন। বাকি শিক্ষকদের পদত্যাগের বিষয়ে তারা আপত্তি জানিয়েছে। রাতভর আলোচনার পর পদত্যাগ করা ১০ জন শিক্ষক মৌখিকভাবে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের আশ্বাস দেন।
তৌহিদ রিমেল নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা শিক্ষকদের বলেছি, আমরা আপনাদের পাশে চাই। আপনারা আমাদের ভবিষ্যৎ নির্মাতা। আপনারা চলে গেলে আমরা দিশেহারা হয়ে যাব।” তার এই মন্তব্যই শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্কের আবেগময়তা প্রকাশ করে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বশাসন, মানবিক দিক বিবেচনা এবং সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সম্পর্কের গুরুত্ব
বিশ্বাস ও সম্মান
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্কের ভিত্তি বিশ্বাস ও সম্মানে গড়ে ওঠে। ইউআইইউর ঘটনায় এই সম্পর্কের গুরুত্ব নতুনভাবে সামনে এসেছে। শিক্ষকরা যদি শিক্ষার্থীদের পাশে থাকেন, তবে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে আরও মানবিক ও জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত হবে।
সংকটকালে সিদ্ধান্ত
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত এবং মানবিক সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। এখানে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
উন্নত শিক্ষার পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দেখিয়েছে, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তখনই উন্নতির পথে এগোয়, যখন সেখানে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়ের মধ্যে সম্মান, সহযোগিতা ও দায়িত্ববোধ থাকে।
বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে ইউআইইউ ঘটনার প্রভাব
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শিক্ষা
ইউআইইউর ঘটনাটি অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও একটি সতর্কবার্তা। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি শোনার এবং সংকট দ্রুত সমাধান করার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষা
একটি দেশের উন্নতি নির্ভর করে তার শিক্ষক সমাজের মর্যাদা ও সুরক্ষার ওপর। তাই শিক্ষকদের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো এবং তাদের পাশে থাকা জরুরি।
মানবিক মূল্যবোধের চর্চা
একজন শিক্ষার্থী যখন কোনো সংকটে পড়ে, তখন মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বন করা উচিত। ইউআইইউর ঘটনা মানবিকতার প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করেছে।
FAQs
ইউআইইউতে কেন শিক্ষকরা পদত্যাগ করলেন?
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শান্তি ও শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতেই উপাচার্যসহ ১২ জন শিক্ষক পদত্যাগ করেন।
কী কারণে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছিল?
একজন শিক্ষার্থী বাবার মৃত্যুজনিত কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরীক্ষা দিতে না পারায় অতিরিক্ত ফি দিয়ে পুনরায় পরীক্ষা দিতে বলা হয়েছিল, যা থেকে আন্দোলনের সূত্রপাত।
পদত্যাগ করা শিক্ষকরা কি পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন?
হ্যাঁ, শিক্ষার্থীদের অনুরোধে ১০ জন শিক্ষক মৌখিকভাবে তাদের পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়েছেন।
এই ঘটনার শিক্ষাক্ষেত্রে কী প্রভাব পড়তে পারে?
এই ঘটনা বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে মানবিকতা, স্বচ্ছতা এবং শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি মেনে চলার গুরুত্ব আরও স্পষ্ট করেছে।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্ক কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
বিশ্বাস ও সম্মান ভিত্তিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক উন্নত শিক্ষার অন্যতম ভিত্তি। ইউআইইউর ঘটনা এর বাস্তব দৃষ্টান্ত।
ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে কী করণীয়?
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ নীতি, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং দ্রুত সংকট সমাধানের সংস্কৃতি গড়ে তোলা প্রয়োজন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।