জুমবাংলা ডেস্ক : দিনাজপুরের বহুল আলোচিত ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবার ওপর হামলার ঘটনায় একমাত্র আসামি রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ।
শনিবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে দিনাজপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আমলী আদালত-৭)-এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দিনাজপুর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি ইমাম আবু জাফর।
তিনি জানান, এই মামলার সবদিক বিবেচনা করে এবং নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, ঘটনার একমাত্র পরিকল্পনাকারী এবং হামলাকারী আসামি রবিউল ইসলাম। এজন্য তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে ৪৫৭/৩২৩/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৫০৬(২)/৩৮০/২০১ পেনাল কোডের ধারা উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, অভিযোগপত্রে এই মামলায় সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা, মোবাইল নেটওয়ার্ক, আলামত হিসেবে ব্যবহৃত লাঠি, হাতুড়ি, ফরেনসিক রিপোর্ট, এমই রিপোর্ট, নোকিয়া ফোন, নগদ ৪৫ হাজার টাকাসহ ৩১টি আলামত থাকার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া অভিযোগপত্রে ৫৩ জনকে স্বাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫ জন স্বাক্ষী ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এই মামলায় প্রায় পৌনে ৩ মাসের সময়ে ৪০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
ওই কর্মকর্তা জানান, রবিউল ইসলাম আইপিএল ক্রিকেট জুয়া, বাজি ধরা ও ক্রাইম পেট্রোল দেখার আসক্তিতে পড়ে যান। পরে এইসব নেশায় পরিণত হওয়ার ফলে কাজে মনোযোগ দিতে পারতেন না। কাজে অবহেলা ও উদাসীনতার জন্য তাকে শাস্তিস্বরূপ ঘোড়াঘাটে বদলী করা হয়। ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ায় পাওনাদারদের চাপ সহ্য করতে না পারায় গত ৯ জানুয়ারি ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ব্যাগ থেকে ১৬ হাজার টাকা চুরি করেন। পরে চাকরির কোনো ক্ষতি হবে না, এই শর্তে ৫০ হাজার টাকা দেন রবিউল। এরপরও ইউএনও রবিউলের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আইপিএলসহ জুয়ায় অভ্যস্ত, বাজিধরা ও জুয়া খেলার কারণে আর্থিকভাবে ঋণগ্রস্ত হওয়া, ইউএনওর ব্যাগ থেকে টাকা চুরি করার ফলে জরিমানা প্রদান, রবিউলের অপেশাদারিত্বের জন্য বিভাগীয় মামলাসহ সাময়িক বহিষ্কার করা এবং পরে তাকে চাকরিচ্যুত করা, পারিবারিকভাবে অশান্তির কারণে রবিউল এই হামলার ঘটনার পরিকল্পনা করেন।
অভিযোগপত্র দাখিল শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইমাম আবু জাফর বলেন, প্রায় আড়াই মাসে মামলার বিভিন্ন বিষয়
পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তে একজন, অর্থাৎ রবিউলের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে জব্দকৃত আলামত, রবিউলের বাড়ি থেকে উদ্ধারকৃত আলামত, সিসিটিভির ফুটেজ, ব্যক্তির স্বাক্ষ্য-প্রমাণ, ডিএনএ রিপোর্ট ও তার ব্যবহৃত মুঠোফোনের অবস্থানসহ বিভিন্ন বিষয়ে তদন্ত করে শুধু ঘটনার সঙ্গে রবিউলের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে অন্য যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, ঘটনার সেঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা না থাকায় তাদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ২টার দিকে সরকারি ডাকবাংলাতে ঘোড়াঘাট ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলী শেখের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টায় তাদেরকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে দুপুর ১টায় হেলিকপ্টার যোগে জাতীয় নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় গত ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ভাই শেখ ফরিদ বাদী হয়ে ঘোড়াঘাট থানায় একটি মামলা করেন। ১১ সেপ্টেম্বর দায়িত্বে অবহেলা ও কাজে গাফিলতির অভিযোগে ঘোড়াঘাটের ওসি আমিরুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়। এদিন রাতে জেলার বিরল উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়নের বিজোড়া গ্রামের খতিব উদ্দীনের ছেলে ও ঘোড়াঘাটের ইউএনও বাসভবনের সাবেক কর্মচারী রবিউল ইসলামকে আটক করা হয়।
গত ১২ সেপ্টেম্বর পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য, দিনাজপুর পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন একটি প্রেস ব্রিফিং করে সাংবাদিকদেরকে জানান, হামলার ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও জড়িত রবিউল ইসলাম।
আদালতের মাধ্যমে দুই দফায় রবিউলকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। অবশেষে ২০ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আমলী আদালত-৭)-এর বিচারক ইসমাইল হোসেনের কাছে দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন রবিউল। পরে এই মামলার সাথে সিসি ফুটেজ, মোবাইল নেটওয়ার্ক, ফরেনসিক রিপোর্ট, ব্যবহৃত হাতুড়িসহ ৩১টি আলামতের মাধ্যমে পুলিশ নিশ্চিত হয়, এই ঘটনার সঙ্গে একমাত্র রবিউলই জড়িত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।