আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউক্রেনে হামলা করার জন্য রাশিয়া যেসব কারণ দেখিয়েছে তার ‘সবই মিথ্যা।’ ইউক্রেনে হামলার ব্যাপারে রাশিয়া বলেছে, ইউক্রেনে রুশ ভাষাভাষীদের গণহত্যা করা হচ্ছে। তাদের স্বাধীন করতে বিশেষ সামরিক অভিযান চালানো হচ্ছে।
গণমাধ্যম সিএনএনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এমন কথা বলেছেন, রাশিয়া থেকে পালিয়ে আসা এক রুশ প্যারাট্রুপার। তিনি খেরসনে রুশ সেনাদের হয়ে যুদ্ধ করেছেন।
সিএনএনকে প্যারাট্রুপার পাভেল ফিলাতেভ বলেছেন, তার সহযোদ্ধারা ক্লান্ত, ক্ষুদার্থ এবং হতবিহ্বল। তাছাড়া রাশিয়ার যুদ্ধ ‘শান্তি বিনষ্ট করছে।’
দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে পাভেল ফিলাতেভ বলেছেন, আমরা বুঝতে পেরেছিলাম আমাদের একটি কঠিন যুদ্ধে জড়ানো হচ্ছে, যেখানে আমরা শুধুমাত্র শহর ধ্বংস করছিলাম, কাওকে স্বাধীন করছিলাম না।
তিনি আরও বলেন, অনেকে ভেবেছে আমাদের সরকার আমাদের কাছে যে কারণ ব্যাখা করছে, আমরা তার কারণ দেখিনি।এটি আমাদের নৈতিকতাকে ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়েছিল। আমরা বুঝতে পারছিলাম আমরা ভালো কিছু করছি না।
তিনি জানিয়েছেন, তাদের ক্রিমিয়া থেকে খেরসনে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাদের ছিল না কোনো আধুনিক অস্ত্র। সরকার বলেছিল তাদের খেরসনে পাঠানো হচ্ছে সেখানকার মানুষকে স্বাধীন করতে। কিন্তু খেরসেন গিয়ে দেখতে পান সাধারণ মানুষ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। কেউ তাদের স্বাধীন করতে বলেনি।
ফিলাতেভ নামে এই প্যরাট্রুপার আরও জানিয়েছেন, রাশিয়ার সেনাবাহিনীর আধুনিক অস্ত্র নেই। তাদের আফগানিস্তানে ব্যবহার করা অস্ত্র দিয়ে পাঠানো হয়েছিল।
তিনি বলেন, আমাদের ব্যারাক ছিল ১০০ বছরের পুরনো। সেখানে সব সেনাদের স্থান হচ্ছিল না। আমাদের সব ধরনের অস্ত্র ছিল আফগানিস্তান আমলের।
তিনি আরও বলেন, খেরসন ঘিরে ফেলার কয়েকদিন পর খাওয়ার মতো খাবার, পানি এবং ঘুমানোর স্থান আমাদের ছিল না। সেখানে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ছিল। আমরা ঘুমাতে পারতাম না। আমরা ময়লা আবর্জনা দিয়ে আমাদের ঢেকে রেখেছিলাম শুধুমাত্র নিজেদের উষ্ণ রাখার জন্য।
তাছাড়া প্রেসিডেন্ট পুতিনের সমালোচনাও করেছেন ফিলাতোভ। তিনি বলেছেন, রাশিয়ার সরকার এই হামলা চালানোর মাধ্যমে সবচেয়ে বোকার মতো কাজ করেছে।
তিনি বলেন, এরচেয়ে খারাপ আমাদের সরকার আর কিছু করতে পারে না। আমি জানি না আমাদের সরকার আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। পরবর্তী ধাপ কি? পারমাণবিক যুদ্ধ?
তিনি আরও বলেন, আমি দেখতে পাচ্ছি আমার দেশে কি হচ্ছে। আমি শঙ্কিত। সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে, দুর্নীতিগ্রস্ত। রাশিয়ায় যে আইন চলে সেটি হলো দমনমূলক।
প্যারাট্রুপার ফিলাতেভ রাশিয়া থেকে পালানোর আগে নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ১৪১ পৃষ্ঠার একটি দীর্ঘ পোস্ট করেন। সেখানে যুদ্ধের বিস্তারিত বর্ণনা করেন।
তার আশঙ্কা জনসম্মুখে যুদ্ধ নিয়ে কথা বলায় তার ওপর প্রতিশোধ নিতে পারে রাশিয়ার সরকার।
এ ব্যাপারে ফিলাতেভ বলেন, আমাকে হয়ত জেলে ভরা হবে। অথবা আমাকে সরিয়ে দিয়ে (হত্যা করে) চুপ করিয়ে দেওয়া হবে। আগে এরকম ঘটনা অনেক ঘটেছে। আমি এখন অন্য কোনো উপায় দেখি না। যদি এটি হয়। এটি হবে।
সূত্র: সিএনএন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।