আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাশিয়াকে দেখানো যাবে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের মাটিতে রাশিয়ান সেনাদের আবার পদধ্বনি হওয়ার যে ভয় কাজ করছিল, তা কনভেনশনাল যুদ্ধে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে ন্যাটো। সাম্প্রতিক ইতিহাসে এ প্রথমবারের মতো রাশিয়াকে ইউরোপের সঙ্গে সহাবস্থান মেনে চলে টিকে থাকার প্রয়োজনীয়তার মুখোমুখি হতে হবে।
ব্রিটিশ সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন দ্য স্পেকটেটর-এ সম্প্রতি সাবেক মার্কিন সেক্রেটারি অভ স্টেইট হেনরি কিসিঞ্জারের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তিনি কথা বলেছেন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সম্ভাব্য তিন ফলাফল, ১৯৭১ সালে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কোন্নয়নে তার ভূমিকা, সাবেক প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের সাথে তার স্মৃতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। পাঠকদের জন্য কিসিঞ্জারের ইউক্রেন-রাশিয়া বিষয়ক মতামতটি তুলে ধরা হলো।
দ্য স্পেকটেটর’র পক্ষে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন অ্যান্ড্রু রবার্টস।
অ্যান্ড্রু রবার্টস: হেনরি, ডাভোসে আপনি বলেছিলেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার বিভাজন রেখাটি পূর্বের স্ট্যাটাস কুয়ো অবস্থায় ফিরিয়ে আনা উচিত, কারণ এ যুদ্ধকে তার বাইরে নিয়ে গেলে তা শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনের স্বাধীনতার যুদ্ধ নয় বরং রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধে পরিণত হতে পারে। ওই মন্তব্যের জন্য আপনি অনেক সমালোচনার মুখে পড়েন, বিশেষত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির কাছ থেকে আপনাকে সমালোচনা শুনতে হয়। যুদ্ধ যেভাবেই শেষ হোক না কেন, এটির সমাপ্তি হওয়ার পরে বিশ্ব নতুন একটি ভারসাম্য অবস্থা কীভাবে পাবে?
হেনরি কিসিঞ্জার: কোনোভাবে এ যুদ্ধ রাজনৈতিকভাবে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ার আগে থেকেই যুদ্ধের লক্ষ্যবস্তুর বিষয়টি বোঝাপড়া করে নেওয়া উচিত; এ ব্যাপারটি স্পষ্ট করে দেওয়াই ছিল ডাভোসের বিবৃতির উদ্দেশ্য।
জেলেনস্কি আমার বিবৃতি না পড়েই মন্তব্য করেছিলেন। তার অতি সম্প্রতি বিবৃতিতে তিনি মূলত আমি ডাভোসে যা বলেছিলাম তা-ই পুনরায় ব্যক্ত করেছেন। (৭ জুন) তিনি ফাইনান্সিয়াল টাইমস-কে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন সেখানে তিনি আদতে মূল ফ্রেমওয়ার্কটাই গ্রহণ করেছেন।
মৌলিক ফ্রেমওয়ার্কটি হচ্ছে : এ যুদ্ধের তিনটি সম্ভাব্য ফলাফল হতে পারে- আর সে তিনটি পরিণামই কিছু ক্ষেত্রে এখনো অর্জন করা সম্ভব।
প্রথমত, রাশিয়া এখন যে অবস্থায় রয়েছে, সেখানে থাকলেও এটি ইউক্রেনের ২০ শতাংশ জায়গা দখল করে নেবে। তার মধ্যে বেশিরভাগই হচ্ছে ডনবাস, শিল্প ও কৃষিনির্ভর প্রধান এলাকাগুলো, ও কৃষ্ণসাগরের পাদদেশে বিশাল অঞ্চল। রাশিয়া এখানেই ক্ষান্তি দিলেও এটি হবে দেশটির জন্য বিজয়। আর তাতে ন্যাটোর ভূমিকাও প্রাথমিকভাবে যেরকম নির্ণায়ক হিসেবে ধরা হয়েছিল, তা থাকবে না।
অন্য ফলাফলটি হতে পারে ক্রিমিয়া এবং ইউক্রেনের যেসব স্থান রাশিয়া দখল করে নিয়েছে, সেগুলো থেকে দেশটিকে উৎখাত করা। কিন্তু এতে করে যুদ্ধ চলতে থাকলে খোদ রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা যাবে।
তৃতীয় ফলাফলটি হতে পারে যেটা আমি ডাভোসে বলেছিলাম, এবং এখন আমার ধারণা অনুযায়ী জেলেনস্কি যেটা মেনে নিয়েছেন তা। ইউক্রেনের মানুষ যদি রাশিয়াকে আর কোনো অঞ্চল দখল থেকে প্রতিহত করতে পারে ও যুদ্ধ শুরুর সময় যুদ্ধক্ষেত্রের পরিসীমা যেখানে ছিল সেই পরিস্থিতিতে পৌঁছাতে পারে, তাহলে বর্তমানে রাশিয়ার যে আগ্রাসন তা দৃশ্যত পরাস্ত হবে।
এতে করে ২০১৪ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগের পরিস্থিতিতে পুনর্গঠিত হবে ইউক্রেন। এটি পুনরায় অস্ত্রসজ্জিত হবে, ন্যাটোর অংশ না হলেও এর সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত থাকবে। বাকি থাকা সমস্যাগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করা যেতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতি অর্জন করা সম্ভব।
রবার্টস: এমন কি হতে পারে পরিস্থিতি উত্তর-দক্ষিণ কোরিয়ার মতো হয়ে যাবে?
কিসিঞ্জার: আমরা কেবল ইউক্রেনের আড়াই শতাংশ অঞ্চল আর ক্রিমিয়া নিয়ে কথা বলছি। ক্রিমিয়ার ওই অঞ্চলের সাথে সম্পর্ক খাঁটি ইউক্রেনীয়দের চেয়ে ভিন্ন। কারণ শতবছরের বেশি ধরে এটি রাশিয়ান ছিল।
আলোচনার ফলাফল কী হতে পারে তা নিয়ে আমি কোনো অভিমত দিতে চাইনা। কিন্তু পশ্চিমা মিত্রশক্তি যদি রাশিয়াকে ইউক্রেন থেকে তাড়াতে সাহায্য করার ক্ষেত্রে সফল হতে পারে, তাহলে তাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এ যুদ্ধ কতদিন ধরে চলবে।
রবার্টস: কিন্তু, হেনরি, এ তিনটা ফলাফলের কোনোটাতেই পুতিন তার আগ্রাসনের জন্য শাস্তি পাচ্ছেন না, তা-ই না?
কিসিঞ্জার: বরং উল্টোটা। যদি ডাভোসে আমি যেভাবে বলেছিলাম সেভাবে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে, তাহলে সেটি হবে মিত্রশক্তির জন্য প্রকৃত একটি অর্জন। ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে যুক্ত করার মাধ্যমে ন্যাটো আরও শক্তিশালী হবে, যার ফলে বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোর প্রতিরক্ষায় সম্ভাবনা তৈরি হবে। ন্যাটো বা তার সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ইউরোপে সবচেয়ে বড় কনভেনশনাল ভূ-সেনা পাবে ইউক্রেন।
রাশিয়াকে দেখানো যাবে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের মাটিতে রাশিয়ান সেনাদের আবার পদধ্বনি হওয়ার যে ভয় কাজ করছিল, তা কনভেনশনাল যুদ্ধে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে ন্যাটো। সাম্প্রতিক ইতিহাসে এ প্রথমবারের মতো রাশিয়াকে ইউরোপের সঙ্গে সহাবস্থান মেনে চলে টিকে থাকার প্রয়োজনীয়তার মুখোমুখি হতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।