নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: থোকায় থোকায় সারি সারি গাছে বাঁশের মাচায় ঝুলছে সবুজ আঙুর। একেক থোকায় শ-খানেক হবে। এমনি দৃশ্য দেখা যায় গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউপির সাতখামাইর পশ্চিম পাড়া গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা সবুজের বাগানে। তার বাগানে ফলেছে রসে ভরা ছোট্ট মিষ্টি আঙুর ফল। আঙুর চাষ করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন তরুণ এই কৃষক।
২০ শতাংশ জমির মাচায় থোকায় থোকায় ঝুলছে আঙুর ফল। তা দেখতে যেমন মানুষ ভিড় করছেন, তেমনই আঙুর চাষের পরামর্শ ও চারা সংগ্রহও করছেন বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা। এ অঞ্চলের মাটিতে আঙুর চাষ করতে দেখে এক সময় যারা সবুজকে নিয়ে উপহাস করেছিলেন, এখন তারাই হতবাক হয়ে তার গুণগান গাইছেন।
আঙুর চাষ নিয়ে ইউটিউবে প্রচুর ভিডিও দেখেন কৃষক সবুজ। এরপর উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০২৩ সালে প্রথমবার ঝিনাইদহের মহেশপুরের জগিহুদা গ্রামের আব্দুর রশিদের কাছ থেকে প্রতি পিস ৫৫০ টাকায় ভারতীয় সুপার সনিকা জাতের ২৫টি চারা কিনে আনেন। শুরু করেন আঙুর চাষ। তবে শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি। আশা ছাড়েননি। তারপর মেলে কাঙ্খিত সফলতা।
১১ মাসের মধ্যেই গাছে ফল আসা শুরু করে। কৃষক সবুজ আঙুর চাষের পাশাপাশি চারা উৎপাদনও করছেন। তার আঙুরের বাম্পার ফলন দেখে আশপাশের কৃষকরাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন। স্থানীয় বিভিন্ন নার্সারি ও ব্যক্তি তার কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করতে আসছেন। তিনি প্রতিটি আঙুর কলম চারা মাত্র ২০০ টাকা করে বিক্রি করছেন।
কৃষক সবুজ জানান, প্রথমবার ১১ মাসের মাথায় গাছগুলোয় আঙুর ধরেছে এবং ৩ থেকে ৪ শ কেজি ফল পাওয়ার আশা করছেন। গাছে প্রচুর পরিমাণ ফল হয়েছে। এ আঙুর গাছে ৩০ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। আঙুর গাছ ৮ ফুট দূরত্বে লাগানো হয়েছে। এ গাছ লাগানোর আগে জমি প্রস্তুত করে প্রতিটি গর্তে পাঁচ কেজি বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করেছেন। ৩ ফুট গর্ত করে ইটের গুঁড়া, মোটা বালু ও জৈব সার মাটির সঙ্গে মিশ্রণ করে দিয়েছেন। প্রতিটি গাছের গোড়া মাটি দিয়ে উঁচু করেছেন, যাতে পানি না জমে। আঙুর গাছ যাতে দ্রুত লম্বা হতে পারে তার জন্য উঁচু করে সিমেন্টের খুঁটি এবং বাঁশ দিয়ে মাচা তৈরি করেছেন। ফলে ঝড়-বৃষ্টি এলে গাছ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা কম থাকে।
কৃষক সবুজ নিজের আঙুর বাগানকে উপজেলার একমাত্র বাগান দাবি করে আরো বলেন, আশা করি এ বছর ভালো ফল পাবো। সাধারণত ৮০-৮৫ দিনে ফল খাওয়ার উপযোগী হয়। এখন যে ফল দেখছেন, তা আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে খাওয়া যাবে। সবচেয়ে বড় কষ্টের বিষয় হলো, এ চাষ যখন শুরু করি; তখন আশপাশের মানুষ উপহাস করতে থাকে। অনেকে পাগলও বলেন।
তিনি বলেন, দোকানে তো বসতেই পারতাম না। এখন আমার আনন্দ ধরে না। প্রতিদিন আঙুর দেখার জন্য অনেকের সাক্ষাৎ মিলছে। আশা করি এ বছর অনেক লাভবান হতে পারবো। কোনো মানুষের কাছ থেকে সহযোগিতা পাইনি। এখন স্থানীয় কৃষি অফিসসহ সব সময় মানুষ পাশে থাকছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২ থেকে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তবে এখন আর তেমন বেশি খরচ নেই।
স্থানীয়রা জানান, আঙ্গুর বাগান নিয়ে সবুজ প্রচুর খাটা-খাটুনি করেন। প্রচণ্ড খরার রাতেও বাগানে ২ ঘণ্টা পানি দেওয়ার কাজ করেন। সবুজ একাই বাগানে কাজ করতেন। তার স্ত্রী তাকে মাঝে মধ্যে সহযোগিতা করেন। আঙুর বাগান করে এবার লাভবান বলেও জানান এলাকাবাসী।
সাতখামাইর পশ্চিম পাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম বলেন, সবুজ অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে বাগানে এ আঙুর উৎপাদন করেছেন। পুরো উপজেলায় একমাত্র সবুজই আঙুরের চাষ করেছেন।
সাতখামাইর গ্রামের যুবক পারভেজ বেপারী বলেন, সবুজের বাগান দেখে আমরা এলাকার যুবকরা অনুপ্রাণিত। তরুণ এ কৃষক পারলে আমরাও পারবো। বিদেশ থেকে না এনে নিজ দেশের চাষাবাদ করা আঙুরের বাজার সৃষ্টির অনুরোধ করছি।
একই গ্রামের যুবক ইমন বলেন, প্রতিবেশী সবুজের আঙুর বাগান দেখে আমরা অনুপ্রাণিত। এখান থেকে আঙুর চারা নিয়ে নিজেও চাষ করবো।
শ্রীপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বলেন, গত বছর ২৫টি চারা দিয়ে আঙুর চাষ শুরু করি। আমাদের কৃষি অফিসের সহযোগিতায় সার ব্যবস্থাপনা, পানি ব্যবস্থাপনা এবং বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আরো বৃহদাকারে শুরু করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তিনি এখানে জৈবিক বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কোনো প্রকার কীটনাশক ছাড়াই এবার আঙুর চাষ করছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।