স্পোর্টস ডেস্ক: প্রস্তাবিত ইউরোপিয়ান সুপার লিগ নিয়ে বিতর্ক এতটাই বেড়েছে যে ফ্যান, সাবেক খেলোয়াড়, এমনকি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন কিংবা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁর মতো সরকার প্রধানরাও এতে যোগ দিচ্ছেন। খবর বিবিসি বাংলার।
এখন পর্যন্ত যারা সরব হয়েছেন তার বেশিরভাগই এই পরিকল্পনার বিরোধী।
কিন্তু সারা দুনিয়ায় কোটি কোটি ফ্যান রয়েছে যে ১২টি সেরা ক্লাবের তারা নিয়মিতভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করবে- এই ভাবনাটিই অনেকের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে দিচ্ছে, বিশেষভাবে ইউরোপের বাইরে যেসব ফ্যান থাকেন।
ইএসএল নামে পরিচিত ইউরোপিয়ান সুপার লিগের প্রস্তাবে বলা হচ্ছে, এই নতুন টুর্নামেন্টের স্থায়ী ক্লাব থাকবে ১২টি। এরা হলো: ইংল্যান্ডের আর্সেনাল, চেলসি, লিভারপুল, ম্যানচেস্টার সিটি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও টটেনহাম। স্পেনের অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ। ইতালির এসি মিলান, ইন্টার মিলান ও জুভেন্টাস।
টিভিতে আরও উত্তেজক ম্যাচ?
এভাবেই ১২টি ক্লাব টেলিভিশনের পর্দায় সারা বিশ্বে তাদের ফ্যানদের মন মাতাবে। এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার ফুটবল ফ্যানদের জন্য তো এটা খুশির খবর হওয়ার কথা। কিন্তু সবাই এতে খুশি না।
এটা সত্যি যে ইএসএল-এর খবরে ইউরোপের বাইরে থেকে বহু ফ্যান সোশাল মিডিয়ায় তাদের খুশির কথা জানিয়েছেন। কিন্তু ইউরোপের ভেতরের ফ্যানদের অনেকেই এই পরিকল্পনাকে মেনে নিতে পারছেন না।
তারা বলছেন, বড় ক্লাবগুলোর অর্থের লোভ বেড়ে গেছে। কারণ এই টুর্নামেন্ট থেকে ইউয়েফার চেয়েও বেশি টাকাপয়সা কামাতে পারবে।
ধারণা করা হচ্ছে যে, ইএসএল থেকে ক্লাবগুলো শুধুমাত্র টিভি সম্প্রচার থেকেই বছরে ৪৮০ কোটি ডলার আয় করতে পারবে। যা বর্তমান টুর্নামেন্টের আয় থেকে এটা দ্বিগুণ বেশি।
ব্রাজিলের ফ্যান জুলি চিচারিনি থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। সেখান থেকে তিনি টুইট করেছেন, ক্লাবগুলোর তরফে এটা একটা জঘন্য লজ্জার কাজ হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের মুশফিক উস সালেহিন রিয়াল মাদ্রিদের ফ্যান। তিনি টুইটারে লিখেছেন, টাকার জন্য ইউরোপীয় ফুটবল তারা আত্মা বিক্রি করছে।
কিন্তু এদের বাইরে ইন্টারন্যাশনাল ফ্যানরা নতুন সুপার লিগ নিয়ে যথেষ্ট উত্তেজিত।
টুর্নামেন্ট বড়, মজাও বেশি
নাইজেরিয়ার ফ্যান জন টুইটারের মাধ্যমে বিবিসিকে জানিয়েছেন যে, ইএসএল-এ তার দল চেলসি নিয়মিতভাবে ইউরোপের সেরা ক্লাবগুলোর মুখোমুখি হবে, এটা জেনে তিনি খুশিই হয়েছেন।
তিনি উল্লেখ করেন, ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল মাদ্রিদর সাথে চেলসির যে সেমিফাইনাল টাইয়ের ম্যাচ রয়েছে, সেটা ওই দুই ক্লাবের মধ্যে গত ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ঘটতে যাচ্ছে।
তিনি মন্তব্য করেন, সুপার লিগে এধরনের ম্যাচ হবে প্রতি বছর। এরকম আরও বহু উদাহরণ রয়েছে। টুর্নামেন্ট যত বড় হবে, ম্যাচেও হবে আরও বেশি মজা।
চার্লস ওয়েশোমো থাকেন নাইজেরিয়ার লেগোস শহরে। তিনি লিভারপুলের বিরাট ফ্যান। তিনিও ইএসএল-এর প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন।
চার্লস ওয়েশোমো বলেন, আমি এর পেছনে কারণ গত পাঁচ কি ছয় বছরে ফুটবলের মান অনেক কমে গেছে।
ইউয়েফা এবং ফিফার মতো ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, এখন ইএসএল হলে তারা নড়েচড়ে বসার সুযোগ পাবে।
তিনি বলেন, গত কয়েক দশক ধরে ইউয়েফা এবং ফিফা একচেটিয়া ব্যবসা করেছে। এসময় অনেক কেলেঙ্কারির ঘটনা আমরা দেখতে পেয়েছি। ইএসএল হলে এখন তারা সমস্যাগুলো আরও তাড়াতাড়ি সমাধান করতে উদ্যোগী হবে। যেমন, বর্ণবাদ বা ভিএআর ইস্যুতে আমরা তাদের বিশেষ কোন ভূমিকা রাখতে দেখিনি।
তরুণ ফ্যানদেরই আগ্রহ বেশি
গত বছর ডিসেম্বর মাসে ইংলিশ ফ্যানদের নিয়ে বিবিসি একটি জরিপ চালিয়েছিল। তার ফলাফল থেকে দেখা গিয়েছিল সে সময় বেশিরভাগ উত্তরদাতা এই ইএসএল পরিকল্পনার বিরোধী হলেও তরুণদের মধ্য থেকে কম বিরোধিতা করা হয়েছিল।
বয়স পঞ্চান্নের নীচে এমন উত্তরদাতারা জানিয়েছিলেন ইউরোপিয়ান সুপার লিগের আয়োজন করা হলে তারা খুশিই হবেন।
পঞ্চান্নের ওপরে বয়স এমন উত্তরদাতাদের মাত্র ১০% এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছিলেন।
তবে এটা মনে রাখা দরকার যে ইএসএল গঠনের এটা এক প্রাথমিক পদক্ষেপ। আগামী কয়েক মাস ধরে এ নিয়ে একটা টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, এমন সম্ভাবনাও রয়েছে।
যেমন, বর্তমান ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন মিউনিখ অথবা রানার-আপ প্যারিস সেইন্ট জার্মেই’র মতো ক্লাবগুলো ইএসএল পরিকল্পনার সাথে নেই।
ইউয়েফা বলছে, ১২টি ক্লাবের প্লেয়াররা ভবিষ্যতে ওয়ার্ল্ড কাপের মতো টুর্নামেন্টে নিজের দেশের হয়ে খেলতে পারবেন না।
ইএসএল-এর ম্যাচগুলো দেখার জন্য ফ্যানদের আরও বেশি টাকাপয়সা খরচ করতে হবে কিনা, তাও পরিষ্কার না। টিভি রাইটস কিভাবে বিক্রি হবে সে সম্পর্কে কোন ব্যাখ্যা নেই।
যেমন, ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচগুলো চলতি মৌসুম থেকে ব্রাজিলে বিনা-পয়সায় ফেসবুকে সম্প্রচার করা হবে। ২০২১/২২ সাল থেকে ম্যাচগুলো টিভিতেও দেখানো হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।