নভেল করোনাভাইরাসের বর্তমান কেন্দ্রস্থল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে প্রাদুর্ভাব কমতে শুরু করছে। ওই দুই অঞ্চলের সংক্রমণ ও মৃত্যুর সাম্প্রতিক প্রবণতা এমনটাই আভাস দিচ্ছে। অবশ্য পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি দেখে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হলে পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)। এর পরও বেশ কয়েকটি দেশে বিধিনিষেধে শিথিলতা আনার উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে প্রাদুর্ভাব কমার প্রবণতা ধরে রাখা কঠিন হতে পারে।
এদিকে ভাইরাসটির সম্ভাব্য উৎস দেশ চীনে নতুন করে সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ছে। গত রবিবার দেশটিতে ১০৮ জন কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা সর্বশেষ ছয় সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ। নতুন রোগীদের ৯৮ জনই বিদেশফেরত, যার অর্ধেকই রাশিয়া সীমান্ত দিয়ে আসা। স্থলপথে রাশিয়া থেকে চীনের হেইলংজিয়াং প্রদেশে ফেরার পর তাঁদের শরীরে ভাইরাসটি পাওয়া যায়।
বৈশ্বিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের হিসাব অনুযায়ী, গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা পর্যন্ত বিশ্বের ২১০টি দেশ ও অঞ্চলে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৮৯ হাজার ৮৪৯ জন। এ সময়ের মধ্যে মারা গেছে এক লাখ ১৭ হাজার ৬৫২ জন। সুস্থ হয়েছে চার লাখ ৩৮ হাজার ১৯১ জন।
করোনা কেন্দ্রস্থলের পরিস্থিতি
ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য বলছে, করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর শীর্ষ দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ১০ এপ্রিলের পর থেকে নতুন রোগী কমছে। গত ১১ এপ্রিল সেখানে শনাক্ত হয় ৩০ হাজার জন, পরের দিন এ সংখ্যা দাঁড়ায় সাড়ে ২৭ হাজারে, যেখানে ১০ এপ্রিল নতুন রোগী শনাক্ত হয় সাড়ে ৩৩ হাজার। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ১০ এপ্রিল দেশটিতে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৩৫ জনের মৃত্যু হয়। পরের দুই দিন সেখানে মারা যায় যথাক্রমে এক হাজার ৮৩০ ও এক হাজার ৫২৮ জন। মৃত্যুপুরী অঙ্গরাজ্য নিউ ইয়র্কেও প্রাণহানির সংখ্যা কমতে শুরু করছে।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান বলছে, আক্রান্তের বিচারে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থান এখন স্পেনের। সেখানে ৯ ও ১০ এপ্রিল নতুন রোগীর সংখ্যা পাঁচ হাজার করে ছিল। ১১ এপ্রিল এ সংখ্যা দাঁড়ায় চার হাজার ৭৫৪ জনে, পরের দিন তা আরো হ্রাস পেয়ে হয় তিন হাজার ৮০৪ জন। দেশটিতে ৯ ও ১০ এপ্রিল ছয় শতাধিক করে প্রাণহানি ঘটে। ১১ এপ্রিল তা নেমে আসে ৫২৫ জনে, যা দুই সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন। অবশ্য পরের দিন এ হার কিছুটা বেড়ে যায়, মারা যায় ৬০৩ জন।
এদিকে চলমান লকডাউনে স্থবির হয়ে পড়া স্পেনের পুনরুদ্ধারে বিধিনিষেধ শিথিল করার ঘোষণা এসেছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ বলছে, উৎপাদন, নির্মাণ ও কয়েকটি সেবা প্রতিষ্ঠানকে কাজে ফেরার অনুমতি দেওয়া হবে। তবে অবশ্যই তাদের কঠোর সুরক্ষাবিধি মেনে চলতে হবে। বাকি জনগণকে ঘরে থাকতে হবে। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেছেন, ‘জয় এখনো অনেক দূরে। কিন্তু এই মুহূর্ত থেকে আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফেরার কাজ শুরু করছি। আমরা সবাই কাজে ফিরতে চাই, কিন্তু আমাদের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হলো, এই লড়াইয়ে জয়ী হওয়া।’
ইউরোপের আরেক দেশ ইতালি মৃত্যুর হিসাবে দ্বিতীয় শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে। সেখানে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে নতুন রোগীর হিসাবে মিশ্র চিত্র দেখা গেছে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন তিন হাজার ৩৯ জন শনাক্ত হয় ৭ এপ্রিল। চলতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ চার হাজার ৬৯৪ জন শনাক্ত হয় ১১ এপ্রিল। অবশ্য পরের দিন এ হার কিছুটা কমে হয়েছে চার হাজার ৯২ জন। দেশটিতে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে মৃত্যুর সংখ্যাও কমতে শুরু করেছে। ১০-১২ এপ্রিল—এই তিন দিনে মৃত্যুসংখ্যা যথাক্রমে ৫৭০, ৬১৯ ও ৪৩১। ১২ এপ্রিলের এ মৃত্যুসংখ্যা গত ১৯ মার্চের পর সর্বনিম্ন। এর মধ্য দিয়ে কভিড-১৯-এর চরম থাবা থেকে ইতালির বেরিয়ে আসার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
ফ্রান্সেও কয়েক দিন ধরে ফ্রান্সে সংক্রমণ ও মৃত্যুর নিম্নগতি দেখা গেছে। ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্যে সর্বোচ্চ আট হাজার ৬৮১ জন সংক্রমিত হয় ১০ এপ্রিল। পরের দুই দিন তা পাঁচ হাজারের কোঠায় অবস্থান করে। মৃত্যুর ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা দেখা গেছে। ১০-১১ এপ্রিল মৃত্যু হয় যথাক্রমে ৯৮০ ও ৯১৭ জন। আর ১২ এপ্রিল মারা যায় ৭৩৭ জন। তবে
জার্মানিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করলেও মৃত্যুতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
রবিবার পর্যন্ত ইউরোপের দেশগুলোতে করোনাভাইরাসে মোট ৯ লাখ ৩২ হাজার ২০৫ জন আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে মারা গেছে ৭৭ হাজার ১২৯ জন। করোনাভাইরাসে মারা গেছে ইতালিতে ১৯ হাজার ৮৯৯ জন, স্পেনে ১৬ হাজার ৯৭২ জন, ফ্রান্সে ১৪ হাজার ৩৯৩ জন এবং যুক্তরাজ্যে ১০ হাজার ৬১২ জন।
ইকুয়েডরে বিভিন্ন বাড়ি থেকে ৭৭১ মরদেহ উদ্ধার
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইকুয়েডরের সর্বোচ্চ করোনা প্রকোপ এলাকা গুয়াইয়াকুইলের বিভিন্ন বাড়ি থেকে ৭৭১টি মরদেহ উদ্ধার করেছে স্থানীয় পুলিশ। হাসপাতালের মর্গগুলো ভরে যাওয়ায় সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে আরো ৬৩১টি মরদেহ। সরকারিভাবে মরদেহগুলোর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।