আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইতালিতে করোনা রোগীর জন্য মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেনে সেখান নার্স। তিনি হলেন ইতালির বলোনিয়া’র সান্ত’অরসোলা হাসপাতালের নারী এনাসথেসিস্ট ডা. দানিয়েলা দি লুকা। আত্মীয় স্বজন কেউ পাশে নেই, থাকার সুযোগও নেই। যখনই নার্স দি লুকা দেখলেন আইসিইউ’র ক্রিটিক্যাল জোনে ভেন্টিলেটরে থাকা এক রোগীর অবস্থা ক্রমশ ভালোর দিকে, তখনই তাঁকে ট্রান্সফার জোনে নিয়ে এলেন।
রোগীর জন্মতারিখ জানা থাকায় ডা. দানিয়েলা নিজে উদ্যোগী হয়ে বাইরে থেকে কিনে আনলেন জন্মদিনের কেক ও ফ্রেশ অরেঞ্জ জুস। সহকর্মীদের সাথে নিয়ে আবেগঘন পরিবেশে উদযাপন করলেন রোগীর ৭১তম জন্মদিন। ইতালি প্রবাসী ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক মাঈনুল ইসলাম নাসিম তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনই একটি ঘটনাটার বর্ণনা তুলে ধরেছেন।
সাংবাদিক মাঈনুল ইসলাম লেখেন আরও ভালো খবর হচ্ছে, মৃত্যুর সাথে প্রায় ১৫ দিন পাঞ্জা লড়ে ইউটার্ন করে ফিরে আসা সৌভাগ্যবান এই করোনা রোগী এখন হাসপাতালের এমন ইউনিটেই আছেন, যেখান থেকে সুযোগ পাচ্ছেন পরিবারের সাথে টেলিফোনে কথা বলার।’
এছাড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া ইউরোপের দেশ ইতালিতে মঙ্গলবার আরও ৬০৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। তবে নতুন করে সংক্রমণের সংখ্যা গত ২৫ দিনের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। বিশ্বে করোনার সবচেয়ে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়া ইতালিতে মৃত্যুর সংখ্যা এখন ১৭ হাজার ১২৭ জনে পৌঁছেছে। মোট আক্রান্ত ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫৮৬ জন। ইতালিতে সবচেয়ে বড় দুটি হাসপাতাল রয়েছে -একটি রোম প্রভিন্সে যার নাম জামেল্লি, অন্যটি মিলানে নাম সানযৌভান্নি-৩ ।
সম্প্রতি টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ একটি হাসপাতালের ডাক্তারদের কাজের এক্সক্লুসিভ কিছু অংশ প্রচার করেছে। আইসিইউ-এর দায়িত্ব পালনের জন্যে প্রস্তুত থাকা একদল চিকিৎসককে নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে তারা।
প্রতিবেদনটিতে চিকিৎসকরা বলেন, আমাদের আগের যে গ্রুপ ইনটেনসিভ কেয়ারে ঢুকেছে, তারা আমাদের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে ঢুকেছে। আমরা আমাদের অন্তরের দাহকে চাপা রেখে তাদেরকে সম্মেলিত হাততালির মাধ্যমে সাহসের সাথে ইনটেনসিভ কেয়ারে পাঠিয়েছি। একইভাবে এই গ্রুপও তাদের আগের গ্রুপকে পাঠিয়েছিলো। প্রতিটি হাসপাতালে এভাবেই দিনের পর দিন করোনাভাইরাস মোকাবেলা চলছে। চলছে মানুষের জীবন বাঁচানোর যুদ্ধ ।
এই চিকিৎসকরা আরো বলেন, যে চিকিৎসকরা আইসিইউতে প্রবেশ করে তারা রোগীদের সেবা দিতে দিয়ে আর আইসিইউ থেকে লাশ বের করতে করতে তারাও ইনফেক্টেট হয়ে যায়, এবং অনেকে ইনফেক্টেট হয়ে যাবার পরেও তার সর্বশেষ শক্তি দিয়ে রোগীদের জীবন বাঁচানোর জন্যে যুদ্ধ করতেই থাকে এবং এক সময় তাকেও আইসিইউতে ভর্তি করেতে হয়। যাদের ভাগ্য ভালো তারা সুস্থ হয়ে ফিরে এসে আবার কাজে যোগ দেয়, আর যাদের ভাগ্য খারাপ, তারা অন্যান্য রোগীর মতো লাশ হয়ে আইসিইউ থেকে বের হয়। তারপর তৈরি থাকা নতুন গ্রুপ মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে আইসিইউতে প্রবেশ করে।
তারা জানান, এভাবেই এই পর্যন্ত ৮১ জন ডাক্তার ও ২৩ জন নার্স প্রাণ দিয়েছেন। আর করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন আরও ১২ হাজারের বেশী ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী।
‘ভয় লাগে কিনা’ সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে চিকিৎসকরা একসুরে বলেন – আমরা একে একে মৃত্যুবরণ করেও যদি শেষ একজন চিকিৎসকও বেঁচে থাকি তবুও হাসপাতাল ছেড়ে কোথাও যাবো না, এই হাসপাতাল আর রোগীদের জন্যেই আমাদের জন্ম, এদের জন্যেই আমাদের মৃত্যু।
করোনাভাইরাসের কারণে থমকে গেছে ইতালির স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। তবে, গত কয়েকদিনে মৃত্যু হার নেমে যাওয়ার পরিসংখ্যান বলছে ফিরে আসছে ভাল দিন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন আগামী এক মাসের মধ্যে করোনা পরিস্থিতির বিশাল পরিবর্তন সাধিত হবে। লক ডাউনের মত বিষয়গুলো থেকে মুক্তি পাবে ইতালিবাসী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।