জুমবাংলা ডেস্ক: পানির ওপর ভেসে থাকা দৃষ্টিনন্দন প্রাসাদ, তার গা ঘেঁষে এঁকেবেঁকে বয়ে চলা স্বচ্ছ পানির লেক। পুরো শহরের বুকজুড়ে থাকা পানিতে প্রাসাদের প্রতিবিম্ব স্পষ্ট, আকাশের মেঘগুলোও লেকের জলে লুটোপুটি খাচ্ছে। লেকের জলযোগে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে সঙ্গী ছোট ডিঙি নৌকা— এমন কিছু পরিচ্ছন্ন উদাহরণ উঠে আসে স্বপ্নের নগরী ইতালির ভেনিস সম্পর্কে। পৃথিবীর ভাসমান শহরের তালিকায় সব সময় শীর্ষে তার নাম।
গন্ডোলা ও তার মাঝি
ভেনিস শহরের বুক চিরে বয়ে গেছে সর্পিল গতির স্বচ্ছ জলধারা। তাতে চলাচলের মাধ্যম হলো গন্ডোলা বা ছোট ডিঙি নৌকা। যারা গন্ডোলা চালায়, তাদের বলে গন্ডোলিয়ার। একাদশ শতাব্দী থেকে বয়ে চলেছে এই পেশা। আগের দিনে ছই দেওয়া গন্ডোলায় চড়ে ধনীরা ভেনিসের খালপথে এখানে ওখানে যেতেন। মালপত্রও বহন করা হতো এই গন্ডোলা দিয়ে। একসময়ে ভেনিসে নাকি দশ হাজার গন্ডোলা ছিল। বর্তমানে স্বল্প পরিমাণে হলেও শুধু ট্যুরিস্টদের জন্য টিকে আছে গন্ডোলার ঐতিহ্য। অনেক ট্যুরিস্টের তো স্বপ্নই থাকে সুনসান জলপথে প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে গন্ডোলায় ঘোরার। এই গন্ডোলার মাঝি হতে গেলে মানতে হয় নিয়ম কানুন। লাইসেন্স পেতে গন্ডোলিয়ারদের একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে হয়। আগত পর্যটকদের সঙ্গে সঠিকভাবে কথা বলতে শিখতে হয় বিদেশি ভাষা। জানতে হয় ভেনিস শহরের ইতিহাসের আদ্যোপান্ত। কেউ কেউ তো গান গেয়ে মুগ্ধ করেন গন্ডোলার যাত্রীদের। তাদের নিতে হয় বিশেষ ধরনের গেটআপ। গন্ডোলিয়ার অনেকটা শৌখিন পেশা। তাইতো মাঝি হওয়ার স্বপ্নও দেখেন অনেক যুবক।
স্বপ্নের ভেনিসের আদ্যোপান্ত
যেভাবে গড়ে উঠল
চতুর্থ শতকে বর্তমান ভেনিসবাসীর পূর্বসূরিরা বসত গড়ে তোলে। তবে সে ইতিহাস মোটেই সহজতর ছিল না। রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর আলপসজুড়ে হানা দেওয়া উত্তরের দস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পেতে তারা এই জলমগ্ন ভেনিসকে বেছে নিয়েছিল। কিন্তু সেখানে কোনো ভবন বানানো ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। এরপর কয়েক শতক ধরে তিলে তিলে শহরটি গড়ে ওঠে। প্রথম দিকে গাছের গুঁড়ি দিয়ে পাইলিং করে তার ওপর ভবন নির্মাণ করতে লাগল। কিন্তু পাইলিং করার সময় অবস্থাটি ছিল শুধুই অতলে যাত্রার মতো। একটি ভবনের ভিত্তি গড়তেই কয়েকশ পাইল বা লার্চ গাছের কাণ্ড গাড়তে হতো। নগর গড়ে তোলার সঙ্গে সঙ্গেই ভেনিসীয় প্রকৌশলীরা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় অগ্রসর হলো। বেশ কৃতিত্বপূর্ণ অগ্রগতিও অর্জন করে। ফলে ভবন নির্মাণের জন্য কিছুটা শক্ত ভূমিকা পাওয়া যায় এই ব্যবস্থার। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা তদারকির জন্য পোর্তো অ্যালে একিউ নামের একটি পদও সৃষ্টি করা হলো। তার তত্ত্বাবধানে খাল খনন ও নদীর গতিপথের পরিবর্তনের কাজ চলত।
যানবাহন
জলনগরী ভেনিসের যানবাহন মানেই পানিতে ভাসমান কিছু। বর্তমানে হৃদ এলাকার প্রধান বাহন হিসেবে ভূমিকা রাখছে ভাপোরেত্তি নামের মটরচালিত ওয়াটারবাস। এগুলো ভেনিসজুড়ে থাকা দ্বীপের মধ্যকার গ্রান্ড ক্যানেল দিয়ে নিয়মিত রুটে চলাচল করে।
ভেনিসের লিডো ও পেলেস্ট্রিনা নামের দুটি দ্বীপের বিস্তৃতি সবচেয়ে বেশি। আর তাই এর মধ্যে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে বাস সার্ভিস চালু আছে। তবে অন্যদ্বীপের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় ওয়াটারবাসও আছে। অপরদিকে ভেনিসের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার শহর ম্যাস্ট্রি শহরে বাস ও ট্রেন উভয় যানের চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে। এগুলোর পাশাপাশি ভেনিসে মারকো পলো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট নামের একটি বিশাল বিমানবন্দর রয়েছে। এটি ভেনিসের মূল ভূখণ্ড থেকে বিস্তৃত হয়ে উপকূল এলাকার বেশ কিছু জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে।
পর্ব-০৪ আসছে আগামীকাল
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।