আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইটালিতে ফেরা বাংলাদেশীদের মাধ্যমে নতুন করে ভাইরাস সংক্রমণ ছড়ানোয় সেখানে বসবাসরত প্রবাসী কমিউনিটি এখন বিপাকে পড়ছেন। অনেকে কাজে যোগ দিতে পারছেন না৷ স্থানীয়দের কাছেও নানাভাবে তারা হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন।
চীনের পর করোনার সবচেয়ে মারাত্মক সংক্রমণটি ঘটে ইতালিতে৷ প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয় ভাইরাসটি৷ আক্রান্ত হন দুই লাখ ৪৩ হাজারের বেশি। তবে ইউরোপের অন্য দেশগুলোর মতোই ইতালিও এই পরিস্থিতিকে এখন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। খুলছে ব্যবসা-বাণিজ্যের দুয়ার। জুনের পর থেকে তাই বিশেষ ফ্লাইটে বাংলাদেশী প্রবাসীরাও ফিরতে শুরু করেছিলেন তাদের কর্মস্থলে। কিন্তু তাদের মাধ্যমে দেশটিতে বাংলাদেশী কমিউনিটির মধ্যে নতুন করে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। এ কারণে গোটা ইতালিতেই বাংলাদেশীরা সংবাদ শিরোনাম আর আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হন।
পাভেল রহমান বহু বছর ধরেই ইতালির রোমে বসবাস করছেন। তিনি জানান, লকডাউনের সময় বাংলাদেশীরা এখানে তেমন একটা আক্রান্ত হননি৷ কিন্তু এখন পুরো পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। ‘আগে আমরা ইতালিয়ানদের দেখে এড়িয়ে চলতাম৷ এখন তারা আমাদের এড়িয়ে চলে,’ বলেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশীরা অনেকে দেশ থেকে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে ফিরেছেন, যা সঠিক ছিল না। অনেকেই ফেরার পর কোয়ারেন্টিনের নিয়ম মানেননি, যার কারণে এতটা সমালোচিত হচ্ছেন বাংলাদেশীরা। ভেনিসে বসবাসরত নীপা বলেন, ‘চার-পাঁচ মাস ঘরে বন্দি ছিলাম৷ পরিস্থিতির এখন অনেকটা উত্তরণ হয়েছে। কিন্তু ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে যারা এসেছে তাদের কারণে ইতালিতে আমরা বাঙালিরা এখন খুবই লজ্জায় রয়েছি।’
ভেনিসে বাংলা ভাষার একটি স্কুলের প্রিন্সিপাল সৈয়দ কামরুল সরোয়ার। তিনিও একই অভিজ্ঞতার কথা জানান। ‘৩০ বছর ধরে আমি এখানে আছি৷ কিন্তু আমাদের বর্তমান বাংলাদেশের কমিউনিটির অবস্থা শোচনীয়৷ ইতালিয়ানদের কাছে আমরা অনেক হেয় হয়েছি,’ বলেন সরোয়ার।
ভেনিসে প্রবাসীদের মধ্যে সফল একজন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী। তিনি সেখানে বাংলাদেশীদের একটি মসজিদেরও প্রধান। তিনি বলেন, ‘লকডাউনের পর আমরা বলতে গেলে এখন করোনা-মুক্ত হয়ে গিয়েছিলাম৷ এখন পর্যটন আসা শুরু হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কিছু লোক আসলো। তাদের অনেকেই কোয়ারান্টিন মানেনি ৷ আমাদের ভাবমূর্তি এখানে অনেক নষ্ট হয়ে গেছে।’
তিনি জানান, নিজেদর দক্ষতা আর সততা দিয়ে ইতালিতে বাংলাদেশীরা অনেক সুনাম অর্জন করেছিলেন। কিন্ত অল্প কয়েকজনের কারণে তা নষ্ট হয়ে গেছে। মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘এখন ইতালিয়ানরা আমাদের দেখলেই বলে ভাইরাস৷ আমরা একটা হেরেজমেন্টের মধ্যে পড়ে গেছি।’
তার আশঙ্কা করোনার নেগেটিভ সার্টিফিকেটের জালিয়াতির কারণে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে যে-কোনো সনদের ক্ষেত্রে ইতালি তথা ইউরোপে বিপাকে পড়তে হবে প্রবাসীদের।
পুরো বিষয়টিতে শুধু ইমেজ সংকটেই পড়েছেন প্রবাসীরা তা নয়। কাজের ক্ষেত্রেও নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন তারা। যখন সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে, তখন অনেকেই তাদের কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে পারছেন না।
‘ইতালির অনেক বিখ্যাত রেস্টুরেন্টগুলোতে বাংলাদেশীরা কাজ করেন৷ তাদের সঙ্গে এখন স্থানীয়রা কাজ করতে চাচ্ছেন না৷ তাদেরকে এখন বাসায় থাকতে হচ্ছে।’ বলছিলেন পাভেল রহমান। রোমে বসবাসরত আরেক কাপড়ের ব্যবসায়ী আহসানও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘অনেকেরই কাজ নেই। কিছু কিছু কাজ শুরু হয়েছিল৷ কিন্ত বাংলাদেশীরা করোনা আক্রান্ত হওয়ায় তারা আবার বিপাকে পড়ছেন।’
এই পরিস্থিতিতে নিজেদের কমিউনিটির সদস্যদের দায় যেমন দেখছেন, তেমনি দূতাবাস বা সরকারের কর্মকর্তাদেরও দায়িত্ব ছিল বলে মনে করেন প্রবাসীরা৷ বিশেষ করে যারা ফিরে এসেছিলেন তাদেরকে সচেতন করা, সেই সঙ্গে সঠিক তথ্য সরবরাহ করার কাজ ঠিকভাবে করা হয়নি৷ তবে সবার সঙ্গে মিলেই এখন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা৷ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘এ অবস্থা থেকে উত্তরণে আমরা বাঙালি কমিউনিটিরা বৈঠক করছি৷ আগামীতে কনস্যুলারদের ডেকে বড় আকারে বৈঠক করবো৷ পরবর্তীতে এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেই বিষয়ে আমরা কাজ করবো৷’ তার মতে, ভুল স্বীকার করে সরকার থেকে যথাযথ ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ইতালির সরকারের মধ্যে আস্থা ফেরে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।