ইতালি যাওয়ার পথে ৩ বাংলাদেশি যুবককে গুলি করে হত্যা

ভালো জীবনের আশায় ইউরোপ যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন মাদারীপুরের তিন যুবক। কিন্তু লিবিয়া থেকে ইতালির উদ্দেশ্যে যাত্রাকালে মানব পাচারকারী মাফিয়াদের গুলিতে তাদের মৃত্যু ঘটে। নিহতরা হলেন—ইমরান খান, মুন্না তালুকদার ও বায়েজিত শেখ।

মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের আদিত্যপুর গ্রামের ইমরান খান (২৮), রাজৈর উপজেলার দুর্গাবদ্দী গ্রামের মুন্না তালুকদার (৩০) এবং একই উপজেলার ঘোষলাকান্দি গ্রামের বায়েজিত শেখ (২৯) মানবপাচারকারীদের গুলিতে প্রাণ হারান।

নিহতদের পরিবারের বরাত দিয়ে জানা গেছে, তারা কিছুদিন আগে দালালচক্রের প্রলোভনে পড়ে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে লিবিয়া পৌঁছান। কিন্তু ইঞ্জিনচালিত নৌকায় লিবিয়া থেকে সমুদ্রপথে ইতালির উদ্দেশ্যে যাত্রাকালে কথাকাটাকাটির জেরে মানবপাচারকারীরা তাদের গুলি করে হত্যা করে এবং পরে লাশ সাগরে ফেলে দেয়।

ঘটনা জানার পর এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া, পাশাপাশি নিহতদের স্বজনরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে দালালচক্রের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

নিহতদের সহযাত্রীরা বলেছে, ঘটনার সময় মানবপাচারকারীরা কথা কাটাকাটির জেরে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে। স্থানীয়দের মতে, এমন মানবপাচার এখনো ভয়ঙ্করভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বন্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

সরেজমিন জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার আদিত্যপুর গ্রামের হাজী মো. তৈয়ব আলী খানের ছেলে ইমরান খান ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত ৮ অক্টোবর বাড়ি ছাড়েন। শিপন খান নামে স্থানীয় এক দালাল তাকে সরাসরি ইতালি পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাসে মোট ২২ লাখ টাকায় চুক্তি করেন। কিন্তু লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর ইমরানকে ইতালি না পাঠিয়ে আটকে রেখে আরও টাকার জন্য ধারাবাহিকভাবে শারীরিক নির্যাতন চালায় পাচারকারীরা।

এ সময় চাপ দিয়ে পরিবারের কাছ থেকে অতিরিক্ত ১৮ লাখ টাকা আদায় করা হয়। পরে ১ নভেম্বর ইমরানসহ একদল মানুষকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় তুলে ইতালির উদ্দেশ্যে যাত্রা করানো হয়। কিন্তু নৌকাটি ভূমধ্যসাগরের নির্জন এলাকায় পৌঁছলে একদল মানব পাচারকারী সশস্ত্র মাফিয়া ওই নৌকায় গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান ইমরান, মুন্না ও বায়েজিত। ঘটনার পর তিনজনের লাশ সাগরে ফেলে দেওয়া হয় বলে সহযাত্রী কয়েকজন পরিবারকে জানান। মঙ্গলবার পরিবারের সদস্যদের কাছে এ মৃত্যু সংবাদ পৌঁছে।

এ বিষয়ে মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, লিবিয়ায় গুলিতে তিন যুবকের মৃত্যুর খবর বিভিন্ন মাধ্যমে পেয়েছি। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। নিহতদের পরিবার লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা অবিলম্বে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।