রিয়াদ সাহেবের হাত কাঁপছিল। অফিস থেকে ফেরার পথে, গুলশান লেকের পাশে বসে মোবাইল স্ক্রলে ইনকাম ট্যাক্সের হিসাব দেখছিলেন। বছর শেষ হতে আর মাত্র দুই মাস। কিন্তু ১০ লাখ টাকার বেশি আয়, অথচ এখনও ট্যাক্স জমা দেননি! মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে – পেনাল্টি কত হবে? হিসাব ভুল হলে? নোটিশ পেলে কী করবেন? রিয়াদের মতো লাখো বাংলাদেশীর রাতের ঘুম হারাম করে দেয় এই একটাই প্রশ্ন: ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার নিয়ম ঠিকঠাক জানা আছে তো? ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এই গাইডে, ট্যাক্সের জটিল পথকে আমরা মসৃণ করেছি আপনার জন্য। ধাপে ধাপে, উদাহরণ সহ, বাংলায়। শুধু পড়ুন, বুঝুন, আর এই বছরই হোন একজন আত্মবিশ্বাসী করদাতা।
Table of Contents
ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার নিয়ম: কাকে, কখন, কেন দিতে হবে?
আপনার আয় সীমা ছাড়ালেই ট্যাক্স দিতে হবে – এটাই সাধারণ ধারণা। কিন্তু বাংলাদেশে ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার নিয়ম এর চেয়ে একটু জটিল, আবার অসম্ভবও নয়! ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য, ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে প্রথম ৩.৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত। তার মানে, আপনার বার্ষিক মোট আয় যদি ৩.৫ লাখের নিচে হয়, আনুষ্ঠানিকভাবে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা নেই (তবে স্বেচ্ছায় দিতে পারেন)। কিন্তু, এখানেই সতর্কতা!
কে ট্যাক্সপেয়ার?
- ব্যক্তি: চাকুরিজীবি, ব্যবসায়ী, ফ্রিল্যান্সার, কৃষক (নির্দিষ্ট আয়ের ঊর্ধ্বে), বিনিয়োগকারী (শেয়ার/মিউচুয়াল ফান্ড লভ্যাংশ)।
- কোম্পানি: প্রাইভেট লিমিটেড, পাবলিক লিমিটেড, অংশীদারি কারবার।
- অন্যান্য: এনজিও, ট্রাস্ট, সমিতি।
ট্যাক্স দিতে হবে কখন?
- ব্যক্তি: আর্থিক বছরের (১ জুলাই – ৩০ জুন) পরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল ও ট্যাক্স জমা। (২০২৪-২৫ এর ট্যাক্স ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে জমা দিতে হবে)।
- কোম্পানি: আর্থিক বছরের ১৫০ দিনের মধ্যে বা বার্ষিক সাধারণ সভা (AGM) অনুষ্ঠানের ৩০ দিনের মধ্যে (যেটা আগে হয়) রিটার্ন দাখিল করতে হয়।
কেন দেবেন? শুধু আইনের ভয়ে নয়:
- আইনি বাধ্যবাধকতা: আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ মেনে চলা নাগরিক দায়িত্ব।
- সুনাম: ট্যাক্স সার্টিফিকেট আর্থিক বিশ্বাসযোগ্যতার প্রমাণপত্র। ব্যাংক লোন, ভিসা, টেন্ডারে কাজে লাগে।
- দেশের উন্নয়নে অংশীদারিত্ব: আপনার ট্যাক্সেই চলে রাস্তা, হাসপাতাল, স্কুলের উন্নয়ন।
- পেনাল্টি এড়ানো: বিলম্বে জমা দিলে মাসিক ২% জরিমানা, আয় গোপন করলে ১০%-৫০% অতিরিক্ত কর!
বাস্তব উদাহরণ: ফারহানা আক্তার, ঢাকার একজন মিড-লেভেল মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ। বেসিক বেতন ৪৫,০০০ টাকা মাসিক। বোনাস, মোবাইল অ্যালাউন্স মিলিয়ে বার্ষিক আয় ৬.৫ লাখ টাকা। প্রথম ৩.৫ লাখ করমুক্ত। পরের ১ লাখ আয়ে ৫% (৫,০০০ টাকা), পরের ২ লাখ আয়ে ১০% (২০,০০০ টাকা), বাকি ১ লাখে ১৫% (১৫,০০০ টাকা) – মোট প্রাথমিক কর ৪০,০০০ টাকা। কিন্তু ইনভেস্টমেন্ট অ্যালাউন্স, মেডিকেল রিইমবার্সমেন্ট ইত্যাদি ছাড় পেয়ে তার প্রাপ্য কর দাঁড়ায় মাত্র ২৮,০০০ টাকা! সঠিক ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার নিয়ম জানা থাকায় সে সহজেই করের বোঝা কমিয়েছে।
ইনকাম ট্যাক্স ক্যালকুলেশন: নিজেই করুন সহজে, ধাপে ধাপে
ট্যাক্সের ভয় সবচেয়ে বেশি এই হিসাবের জটিলতায়। ভাঙুন সেই ভয়। বাংলাদেশে ব্যক্তি করদাতাদের জন্য ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী কর ধাপগুলো (২০২৪-২৫):
- মোট আয় নির্ধারণ করুন (Gross Income):
- বেতন/বোনাস/প্রভিডেন্ট ফান্ড (কোম্পানি অংশ বাদে)
- ব্যবসার লাভ
- বাড়ি/জমি ভাড়া
- ব্যাংক ফিক্সড ডিপোজিট/ডিবিএসএল থেকে সুদ
- শেয়ার/মিউচুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশ বা ক্যাপিটাল গেইন
- ফ্রিল্যান্সিং আয় (উপার্জনের প্রমাণ রাখুন)
- করযোগ্য আয় বের করুন (Taxable Income):
করযোগ্য আয় = মোট আয় - অনুমোদিত ছাড়/ভাতা
গুরুত্বপূর্ণ ছাড়/ভাতা (Sec 44, 45):- মৌলিক ছাড়: সবার জন্য প্রথম ৩.৫ লাখ টাকা।
- মহিলা/বয়স্ক/প্রতিবন্ধী করদাতা: অতিরিক্ত ৫০,০০০ টাকা ছাড় (শর্ত প্রযোজ্য)।
- গৃহ নির্মাণে বিনিয়োগ ছাড়: বার্ষিক সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার উপর ১০% (সর্বোচ্চ ২.৫ লাখ টাকা)।
- লাইফ ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম: নিজের, স্ত্রী/সন্তানের পলিসির প্রিমিয়ামের ১০% (সর্বোচ্চ ৬০,০০০ টাকা)।
- প্রভিডেন্ট ফান্ড/সঞ্চয়: নিয়মিত PF/GPF/SPF-এ জমা।
- চিকিৎসা ভাতা: বছরে সর্বোচ্চ ১.২০ লাখ টাকা (প্রতিমাসে ১০,০০০ টাকা)।
- উচ্চশিক্ষা ভাতা: সন্তানের শিক্ষা খরচে বছরে সর্বোচ্চ ৬০,০০০ টাকা।
কর ধাপ অনুযায়ী কর গণনা করুন: করযোগ্য আয়ের সীমা (টাকা) করের হার (%) প্রথম ৩,৫০,০০০ ০% পরবর্তী ১,০০,০০০ ৫% পরবর্তী ৩,০০,০০০ ১০% পরবর্তী ৪,০০,০০০ ১৫% পরবর্তী ৫,০০,০০০ ২০% অবশিষ্ট আয় ২৫% উদাহরণ: করযোগ্য আয় ১০ লাখ টাকা হলে কর:
- প্রথম ৩.৫ লাখ: ০ টাকা
- পরের ১ লাখ: ১,০০,০০০ x ৫% = ৫,০০০ টাকা
- পরের ৩ লাখ: ৩,০০,০০০ x ১০% = ৩০,০০০ টাকা
- পরের ২.৫ লাখ (১০ – ৩.৫ – ১ – ৩ = ২.৫): ২,৫০,০০০ x ১৫% = ৩৭,৫০০ টাকা
মোট কর = ৫,০০০ + ৩০,০০০ + ৩৭,৫০০ = ৭২,৫০০ টাকা
- ট্যাক্স রিবেট/ক্রেডিট কাটুন (যদি প্রযোজ্য):
- সূচকে আবদ্ধ সঞ্চয়পত্র/ডিপোজিট: সুদের উপর ১৫% রিবেট।
- উৎসে কর কর্তন (TDS): আপনার বেতন/ভাড়া থেকে ইতিমধ্যে কাটা ট্যাক্স বাদ যাবে।
টিন বা e-TDS রিটার্ন জমা দেওয়ার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া
অনলাইনে ট্যাক্স জমা দেওয়া এখন চায়ের দোকানে বিকাশ করা টাকা পাঠানোর মতোই সহজ! ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার নিয়ম মেনে ধাপগুলো:
- টিন (TIN) নিবন্ধন:
- প্রথমবার করদাতা? জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (NBR) ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
- ‘e-Registration’ অপশনে ক্লিক করে ফরম পূরণ করুন (নাম, ঠিকানা, ফোন, NID তথ্য সহ)।
- ১২-ডিজিটের টিন নম্বর SMS/ইমেইলে পাবেন। এটি আপনার করদাতা আইডি।
- তথ্য সংগ্রহ:
- আয়ের প্রমাণ (বেতন স্লিপ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, চালান, ভাড়া চুক্তি)।
- ছাড়ের দলিল (ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম রিসিট, মেডিকেল বিল, বিনিয়োগ প্রমাণ)।
- পূর্ববর্তী বছরের রিটার্ন (যদি থাকে)।
- e-Return প্রস্তুত:
- NBR e-filing পোর্টালে লগইন করুন।
- আপনার আয়ের ধরণ অনুযায়ী সঠিক ITR ফরম (IT-11GA সাধারণ ব্যক্তির জন্য) নির্বাচন করুন।
- প্রতিটি সেকশন সাবধানে পূরণ করুন: আয়ের উৎস, ছাড়ের দাবি, পূর্বে কর্তনকৃত ট্যাক্স (TDS)।
- গুরুত্বপূর্ণ: সব তথ্য সঠিকভাবে দিন। ভুল তথ্য দিলে পরবর্তীতে জটিলতা বাড়তে পারে।
- ট্যাক্স গণনা ও জমা:
- সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার প্রাপ্য করের হিসাব দেখাবে।
- অনলাইনে পেমেন্ট অপশন (ই-পে, bKash, নগদ, ব্যাংক ট্রান্সফার) দিয়ে ট্যাক্স জমা দিন। চালান (Challan) সংরক্ষণ করুন।
- রিটার্ন দাখিল ও স্বীকৃতি:
- ট্যাক্স জমা দেওয়ার পর, e-Return সাবমিট করুন।
- একটি স্বীকৃতি নম্বর (Acknowledgement Number) পাবেন। এটি রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ।
- সতর্কতা: শুধু ট্যাক্স জমা দিলেই রিটার্ন দাখিল হয় না! অবশ্যই ITR ফরম সাবমিট করতে হবে।
- অফলাইন বিকল্প:
- ফরম সংগ্রহ করুন: NBR অফিস বা ডিজাইনেটেড ব্যাংক (সোনালী, জনতা, অগ্রণী) থেকে।
- হাতে পূরণ করে প্রিন্ট নিন।
- নির্ধারিত ব্যাংকে ট্যাক্স জমা দিয়ে রসিদ সংযুক্ত করুন।
- সংশ্লিষ্ট কর অফিসে জমা দিন।
ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার নিয়মে সাধারণ ভুল ও সেগুলো এড়ানোর উপায়
বেশিরভাগ জটিলতা আসে সাধারণ ভুল থেকে। এই ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার নিয়ম গুলো মনে রাখুন:
- ভুল ১: ছাড়ের দাবি না জানা:
- সমাধান: উপরে উল্লেখিত ছাড়গুলো (ইন্স্যুরেন্স, চিকিৎসা, বিনিয়োগ) সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন। প্রয়োজনে কর পরামর্শক নিন।
- ভুল ২: আয়ের উৎস গোপন করা:
- সমাধান: সব আয় (ফ্রিল্যান্সিং, পার্ট-টাইম, ভাড়া) ঘোষণা করুন। NBR-এর ডাটা ক্রস-চেক করার ক্ষমতা আছে।
- ভুল ৩: রিটার্ন দাখিল না করা (যদি বাধ্যতামূলক হয়):
- সমাধান: বার্ষিক আয় ৩.৫ লাখের বেশি হলে বা নির্দিষ্ট শর্ত (যেমন: নিবন্ধিত কোম্পানির পরিচালক, মোটরযান মালিক) পূরণ করলে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক।
- ভুল ৪: TDS ক্লেইম না করা:
- সমাধান: আপনার বেতন বা ভাড়া থেকে কর্তনকৃত ট্যাক্সের সার্টিফিকেট (Form 16/16A) সংগ্রহ করুন এবং e-Return-এ সঠিকভাবে উল্লেখ করুন।
- ভুল ৫: ডকুমেন্টেশনের অভাব:
- সমাধান: আয় ও ছাড়ের সব প্রমাণ (বিল, রিসিট, চুক্তি) কমপক্ষে ৬ বছর সংরক্ষণ করুন। অডিটের সময় চাওয়া হতে পারে।
বিশেষ টিপস:
- ট্যাক্স পরিকল্পনা: বছরের শুরু থেকেই ছাড়ের উপায়গুলো (ইন্স্যুরেন্স, বিনিয়োগ) বাস্তবায়ন করুন।
- e-filing ব্যবহার: অফলাইনের চেয়ে দ্রুত, নিরাপদ ও ট্র্যাক করা সহজ।
- আপডেট থাকুন: NBR প্রায়ই নীতিমালা হালনাগাদ করে। তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ফলো করুন।
- পেশাদার সাহায্য নিন: জটিল আয় কাঠামো (বহু উৎস, ব্যবসা) থাকলে রেজিস্ট্রার্ড কর পরামর্শকের (CA) সহায়তা নিন।
নতুন করদাতা এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ নির্দেশিকা
আপনি যদি প্রথমবারের মতো ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার নিয়ম এর মুখোমুখি হন, এই গাইডলাইন আপনার জন্য:
চাকুরিজীবি:
- কোম্পানি আপনার বেতন থেকে মাসিক TDS কর্তন করে (Pay As You Earn)।
- আপনার দায়িত্ব: বার্ষিক রিটার্নে সমস্ত আয় ও ছাড় ঘোষণা করে ফাইনাল হিসাব মেলানো।
- ফর্ম ১৬ (কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত) আপনার প্রধান দলিল।
ফ্রিল্যান্সার/গিগ ওয়ার্কার (Upwork, Fiverr):
- বৈদেশিক মুদ্রা আয় ব্যাংক রেমিট্যান্সের মাধ্যমে এলে, সেটিও করযোগ্য।
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট আয়ের প্রমাণ। খরচের (ইন্টারনেট, ডিভাইস) হিসাব রাখলে করযোগ্য আয় কমবে।
- বার্ষিক আয় ৩.৫ লাখ ছাড়ালে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী (দোকান, অনলাইন পেজ):
- সরলীকৃত হিসাব পদ্ধতি (প্রেসুম্পটিভ ট্যাক্স) সুবিধা নিন (সুনির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে)।
- দৈনিক বিক্রির রেজিস্টার/রসিদ সংরক্ষণ করুন।
- গুরুত্বপূর্ণ: বিক্রি কর (VAT) নিবন্ধনের প্রয়োজন হতে পারে (মাসিক টার্নওভার ৩০ লাখের বেশি হলে)। VAT অনলাইন পোর্টাল চেক করুন।
কৃষক:
- সাধারণত কৃষি আয় করমুক্ত।
- কিন্তু কৃষি বহির্ভূত আয় (যেমন: ভাড়া, ব্যবসা) থাকলে সেগুলোর উপর ট্যাক্স দিতে হবে।
জেনে রাখুন: ইনকাম ট্যাক্স সংক্রান্ত
প্রশ্ন ১: টিন ছাড়া কি ট্যাক্স দিতে পারব?
না, টিন (TIN) হল করদাতার অনন্য পরিচয় নম্বর। ট্যাক্স জমা বা রিটার্ন দাখিলের আগে অবশ্যই টিন নিবন্ধন করতে হবে। প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইন এবং বিনামূল্যে।
প্রশ্ন ২: আয়ের উৎস একাধিক হলে কর কীভাবে হিসেব করব?
সব উৎসের আয় যোগ করে আপনার “মোট আয়” বের করুন। তারপর করযোগ্য আয় ও প্রযোজ্য কর ধাপ অনুসারে সমগ্র আয়ের উপর কর গণনা করা হয়। ভিন্ন ভিন্ন উৎসের জন্য আলাদা কর রেট প্রযোজ্য নয়।
প্রশ্ন ৩: ট্যাক্স জমা দেওয়ার পর রিটার্ন দাখিল না করলে কী হবে?
ট্যাক্স জমা দেওয়া এবং রিটার্ন দাখিল করা আলাদা। শুধু টাকা জমা দিলে রিটার্ন দাখিল হয় না। রিটার্ন দাখিল না করলে আপনার জমাকৃত ট্যাক্স সঠিকভাবে বরাদ্দ নাও হতে পারে এবং পরবর্তীতে নোটিশ জারি হতে পারে।
প্রশ্ন ৪: ভুল করে কম ট্যাক্স দিলে বা বেশি দিলে কী করব?
কম দিলে: সংশোধিত রিটার্ন (Revised Return) দাখিল করে বাকি ট্যাক্স জমা দিতে হবে। এতে অতিরিক্ত জরিমানা (২% মাসিক) দিতে হতে পারে।
বেশি দিলে: রিটার্ন দাখিলের পর অতিরিক্ত টাকা ফেরত (Tax Refund) পাওয়ার জন্য দরখাস্ত করতে হবে। প্রক্রিয়া জটিল হতে পারে, সাবধানতার সাথে রিটার্ন পূরণ করুন।
প্রশ্ন ৫: বিদেশে থাকা বাংলাদেশীরা কীভাবে ট্যাক্স দেবেন?
বাংলাদেশে উৎপত্তি হওয়া আয় (যেমন: বাংলাদেশী কোম্পানির বেতন, স্থাবর সম্পত্তির ভাড়া) বাংলাদেশেই করযোগ্য। বিদেশে আয়কর দিলেও বাংলাদেশে আবার কর দিতে হতে পারে (ডাবল ট্যাক্স এভয়েডেন্স এগ্রিমেন্ট – DTAA না থাকলে)। NBR-এর ওয়েবসাইটে DTAA লিস্ট দেখুন।
প্রশ্ন ৬: ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ পার হয়ে গেলে কি করব?
অনেক সময় NBR বর্ধিত সময় দেয় (সাধারণত ডিসেম্বরের মধ্যে)। তা না হলে, দেরিতে রিটার্ন দাখিল করতে হবে। জরিমানা দিতে হতে পারে। দ্রুত একজন কর বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন।
মনে রাখবেন, ট্যাক্স দেওয়া কেবল আইনি বাধ্যবাধকতা নয়, দেশ গড়ার অংশীদারিত্ব। ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার নিয়ম জানা এবং মানা আপনার আর্থিক স্বচ্ছতা ও শান্তির চাবিকাঠি। রিয়াদ সাহেব যেমন এই গাইড পড়ে নিজেই হিসাব করে টিন নিবন্ধন ও অনলাইনে ট্যাক্স জমা দিলেন, আপনিও পারবেন। ভয় নয়, দায়িত্ববোধ নিয়ে এগিয়ে আসুন। আজই শুরু করুন আপনার আয় ও ব্যয়ের রেকর্ড রাখা। নির্দিষ্ট সময়ে সঠিক পদ্ধতিতে ট্যাক্স জমা দিয়ে হয়ে উঠুন একজন দায়িত্বশীল নাগরিক। বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারায় আপনারও আছে অবদান রাখার সুযোগ!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।