স্পোর্টস ডেস্ক: অবশেষে অধরা চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপার দেখা পেয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি। ১৯৯৯ সালে ম্যানইউর পর প্রথম ইংলিশ ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জিতল তারা।
শনিবার (৯ জুন) তুরস্কের ইস্তানবুলে আতাতুর্ক অলিম্পিক স্টেডিয়ামে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফাইনালে ইন্টার মিলানকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন সিটিজেনরা।
চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপার মাধ্যমে আরও বড় একটি অর্জনও যুক্ত হলো ম্যানচেস্টার সিটির। এ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের সঙ্গে এফএ কাপের শিরোপাও তারা ঘরে তুলেছে। ইস্তাম্বুলের ট্রফি নিয়ে প্রথমবারের মতো তারা অর্জন করল কোনো মৌসুমের ট্রেবল। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোর মধ্যে সর্বশেষ ২৪ বছর আগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ঝুলিতে ছিল এই অর্জন।
তুরস্কের রাজধানী ইস্তানবুলের আতাতুর্ক অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচে বল গড়ানোর আগে থেকেই ফেভারিট ছিল গার্দিওলার দল। তবে তাদের প্রতিপক্ষ ইন্টার মিলানও কম কিছু নয়। চ্যাম্পিয়নস লিগে তিনবারের শিরোপাধারী ইতালির দলটি এবারের মৌসুমেও ছিল যথেষ্ট দুর্ভেদ্য। তাই ফাইনালে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস ছিল। মাঠে নেমেও দুই দল হতাশ করেনি দর্শকদের।
ম্যাচের শুরুর দিকটায় বরং ইন্টার মিলানই চেপে ধরতে চেয়েছে ম্যান সিটিকে। খেলার পাঁচ মিনিট পার হতেই সিটির বার্নার্ডো সিলভার শট বাম পোস্ট দিয়ে মাঠের বাইরে যায়। এরপর প্রায় ২০ মিনিট ধরে মুহুর্মুহু আক্রমণ শানানোর চেষ্টা করেছে ইন্টার। এই সময়টুকুতে একেবারেই চেনা ছন্দে দেখা যায়নি সিটিকে। তবে ইন্টারও একাধিক সুযোগ তৈরি করেও তা কাজে লাগাতে পারেনি। অধিনায়ক ব্রোজোভিচ থেকে শুরু করে বারেল্লা কেউই বল গোলপোস্টেই রাখতে পারেননি।
ইন্টার যখন আক্রমণ করেও বারবারই ব্যর্থ হচ্ছিল, তখন সিটিও কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়ায়। ম্যাচের আধা ঘণ্টা নাগাদ বড় সুযোগ পায় তারা। কেভিন ডি ব্রুইনার পাস খুঁজে নেয় বক্সে থাকা সিটি তারকা ফরোয়ার্ড আর্লিং হাল্যান্ডকে। তিনি বাঁ পায়ে জোরালো শট নিলে সেটি কোনোমতে শরীর দিয়ে আটকে দেন ইন্টারের গোলরক্ষক আন্দ্রে ওনানা। এর মধ্যেই ডি ব্রুইনা হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পান। এ মৌসুমে সিটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই প্লেমেকারকে মাঠ ছাড়তে হয় প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগেই। ওই সময় যেন শঙ্কা আরও বেশি ঘিরে ধরেছিল সিটিকে। কেননা দুই বছর আগে চেলসির বিপক্ষে একইভাবে ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন ব্রুইনা এবং সে ম্যাচে তার দল চেলসির কাছে হেরে গিয়েছিল মাত্র এক গোলে।
ব্রুইনার বদলি হিসেবে ফিল ফোডেন নামলে অবশ্য সিটির আক্রমণ ভাগের ধার কমেনি। বরং তারা আক্রমণ চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের কেউও গোলপোস্টে বল রাখতে না পারলে গোলশূন্য শেষ হয় প্রথমার্ধের খেলা।
বিরতির পরও সুযোগ কাজে লাগাতে পারছিল না কোনো দলই। এর মধ্যে ইন্টারের আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লাউতারো মার্টিনেজ সিটি কিপারকে একা পেয়েও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। লক্ষ্যে বল রাখতে পারেননি সিটির রুবেন দিয়াসও। তবে এর কিছুক্ষণ পরই আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। সিটির আক্রমণে আকেনজির কাছ থেকে বল পেয়ে ডি বক্সে এগিয়ে যান বার্নান্দো সিলভা। শট নিলে ইন্টারের ডারমিয়ানের গায়ে লাগে, তবে তা ডি বক্সেই ফেরত আসে। আচমকা দৌড়ে এসে রদ্রি তীব্র গতিতে যে শটটি নেন, তা ঠেকানোর সাধ্য কারও ছিল না। ওনানা আর বলের লাইন ঘেঁষে দাঁড়ানো ইন্টারের দুই ডিফেন্ডারকে স্রেফ হা হয়ে তাকিয়ে দেখতে হয় বলের জালে জড়িয়ে যাওয়া। ১-০ গোলে এগিয়ে যায় ম্যানচেস্টার সিটি। প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপার সুবাতাস যেন ছড়িয়ে পড়ে সিটি শিবিরে।
এরপরের আধা ঘণ্টা আবারও দুই দলেরই সুযোগ পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হওয়ার গল্প, গল্প অবিশ্বাস্যভাবে গোল না হওয়ার। সিটির বক্সে ডিমারকোর হেড পরাস্ত করে এডারসনকে, কিন্তু সেটি ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি হেড করলে সেটিও ফিরে আসে। তবে এবারে প্রতিপক্ষের কারও গায়ে লেগে হয়, নিজ দলেরই রোমেলু লুকাকোর পায়ে লেগে!
লুকাকু এরপর একাধিক সুযোগ পেয়েও পরাস্ত করতে পারেননি এডারসনকে। এর মধ্যে তো ম্যাচ শেষ হওয়ার দুই মিনিট আগে মাত্র ছয়-সাত গজ দূর থেকে হেড করলেও তা এডারসনের পা বরাবর থাকায় ঠেকে যায়। ম্যান সিটির ফোডেনও পারেননি ওনানাকে পরাস্ত করতে। ৯০ মিনিট শেষে যোগ করা সময়েও ইন্টার কয়েকবার চেষ্টা চালিয়েছে জালভেদ করার। কিন্তু ম্যান সিটির রক্ষণভাগের দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি।
ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজতেই আনন্দে মাতোয়ারা সিটিজেনরা, আর বিষাদের সুরে অশ্রুসিক্ত ইন্টার খেলোয়াড়রা। কেঁদেছে ম্যানসিটির খেলোয়াড়রাও, তবে সেটা ছিল আনন্দ অশ্রু।
ম্যানসিটির সঙ্গে ইতিহাস গড়েছেন কোচ পেপ গার্দিওলাও। প্রথম কোচ হিসেবে দুটি ক্লাবে ট্রেবল জিতলেন তিনি। বার্সার সঙ্গে ২০০৯ সালে এই কীর্তি গড়েন স্প্যানিশ কোচ। এটি তার তৃতীয় ১২ বছর পর প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।