ইন্টারনেট ও গেমিং আসক্তি নিয়ে চরম সত্য বাস্তবতা
বর্তমান এই যুগে ইন্টারনেট ছাড়া মানাব জীবন কল্পনা করা যায় না। কিন্তু এর ব্যবহার নিয়ে দিনদিন বাড়ছে শঙ্কা। ইন্টারনেটে কুঅভ্যাস এবং গ্যামিং আসক্তি অনেকের জীবনই শেষ করে দিতেছে। অনেকে হয়তো বুঝতে পারে কিন্ত অনেক দেরী করে।
আপনি নিজেকে জিজ্ঞাস করুন। ইন্টারনেট বা গেমিং থেকে আপনি কী পেয়েছেন? প্রয়োজনীয় কাজের জন্য কতটুকু সময় ব্যয় করেছেন আর অপ্রয়োজনীয় কাজের জন্য কত টুকু? নিজেকে কি কন্ট্রোল করতে পারতেছেন? নেট দুনিয়ায় নিজের কাছে নিজেই হেরে যাচ্ছেন নাতো?
গেম কুইটার্স ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ক্যাম অ্যাডেয়ার ১০ বছর ধরে লড়াই করে যাচ্ছেন নিজের গেমিং আসক্তির সঙ্গে। ৩২ বছর বয়সী এই কানাডীয় তরুণের আসক্তির শুরুটা একেবারে কিশোর বয়স থেকে। আর সেটা এতটাই খারাপ পর্যায়ের ছিল যে পেরোতে পারেননি হাই স্কুলের গণ্ডিও। কেননা পড়াশোনা বাদ দিয়ে পুরো সময়ই দিতেন অনলাইন গেমের পেছনে।
অথচ তিনি পরিবারের সবাইকে বলতেন, অনলাইনে কাজ করছেন। এক পর্যায়ে গেমের নেশা ছাড়তে না পেরে আ ত্মহত্যার সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছিলেন। তখনই তাঁর প্রতিষ্ঠান গেম কুইটার্স ফাউন্ডেশনের জন্ম এবং একই সঙ্গে শুরু করেন গেম ছাড়ার চেষ্টা। তাঁর এই প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট আর গেমিংয়ের আসক্তি সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ করে।
মা দকের তুলনায় গেমিং ও ইন্টারনেট আসক্তি অতটা ভয়ংকর নয়, তবে দীর্ঘ মেয়াদে জীবনের মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে অন্তত ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত তরুণ-তরুণীরা এ আসক্তির শিকার হতে পারেন।
দৈনন্দিন জীবনের মানসিক চাপ, নানাবিধ হতাশার ফলে মস্তিষ্ক খুঁজতে থাকে কোথায় গেলে কিছুটা স্বস্তি ও আনন্দ পাওয়া যাবে, আর সেটি সীমাহীনভাবে সরবরাহ করার জন্য সদা প্রস্তুত ইন্টারনেটের নানা রকম ওয়েবসাইট এবং গেমিং সাইট।
এ সমস্যার মোকাবেলা করার লক্ষ্যে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান সফটওয়্যার তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছে। এর মধ্যে আছে লাইনউইজ, যার মাধ্যমে অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের ডিভাইসে কতক্ষণ গেম খেলা যাবে তা বেঁধে দিতে পারবেন। আছে বেটব্লকার এবং গ্যামুইজ। এসবের মাধ্যমে আসক্ত ব্যক্তির ডিভাইস মনিটর করতে পারবেন তাঁর প্রিয়জনরা।
গেমিং আসক্তির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কভিড-১৯ মহামারি। দীর্ঘ সময় বাসায় বসে পিসি ও ফোনে থাকার ফলে অনেকেই আসক্ত হয়ে পড়ছে অজান্তেই।
ক্যাম অ্যাডেয়ার বলেছেন, ‘অন্যান্য বিনোদনের পথ বন্ধ থাকায় তিনি অনেকবারই গেমের কাছে প্রায় ফিরে গিয়েছিলেন, যদিও মনের জোরে পেরেছেন নিজেকে ফেরাতে। অনেকেই হয়তো তা পারবেন না।’
আসক্তি নিরাময়ের উপায় একটিই, আর সেটা মনের জোর বাড়ানো। অন্তত তেমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, শিশু-কিশোরদের মধ্যে আসক্তির লক্ষণ দেখা দিলে তাদের খেলাধুলা, বেড়ানো, নানাবিধ শৌখিন কাজ এবং বই পড়ার দিকে উৎসাহ দেওয়া যেতে পারে, সঙ্গে পিসি, স্মার্টফোন ও গেমিং ডিভাইস ব্যবহারে বেঁধে দিতে হবে সময়। এভাবেই ধীরে ধীরে গেমিংয়ের জন্য নির্ধারিত সময় কমিয়ে আনতে হবে।
সময় বেঁধে দেওয়ার জন্য ডিভাইসে নানাবিধ অ্যাপ ইনস্টলের পাশাপাশি রাউটারেও বসানো যেতে পারে প্যারেন্টাল লক, যাতে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট এবং গেমিং সাইটে বেশি সময় চাইলেও ব্যয় করা না যায়।
ইন্টারনেট এবং গেমিং এ নিজে সতর্ক হোন এবং আপনার চারপাশের মানুষদের সতর্ক করুন। মানসিকভাবে একটা বিকলাঙ্গ সমাজ না চাইলে আজকে থেকে ইন্টারনেটে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় কাজে অভ্যস্ত হোন।
প্রযুক্তি পণ্য ছাড়া আপনার নিজের জন্য সময় বের করুন। পরবার, বন্ধু-বান্ধবের সাথে সময় কাটান। ইন্টারনেট এবং গেমিং থেক নিজেকে কন্ট্রোল করুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।